জুমার নামাজ কত রাকাত

মুসলিম উম্মার জন্য একটি বিশেষ দিন হচ্চে শুক্রবার। কারণ এই দিন একজন মুসলমানের জন্য ঈদের দিনের মতো। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে উল্লেখ করা হয়। এই দিন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম অন্য দিনের তুলনায় একটু আলাদা করে থাকে। সকালে তাড়াতাড়ি উঠে সব কাজ গুছিয়ে নেয়।
জুমার নামাজ
জুমার নামাজ

নিজেকে পরিপাটি করে নামাজের জন্য তৈরি হয়ে যায়। জুমার আযানের সাথে সাথে নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তাই অন্য দিনের তুলনায় এই দিন একজন মুসলমানের কাছে খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং অর্থবহ। নিচে জুমার নামাজের নিয়ম সহ আরো অনেক কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

জুমার নামাজের নিয়ম?

জুমার দিনের বা শুক্রবারের কথা আসলে প্রথমে যে কথা আসে তা হলো জুমার নামাজ। সাধারণত আমরা প্রতিদিন যোহরের নামাজ আদায় করি। কিন্তু শুক্রবারের বেলায় তা হয় না। কারণ এই দিন যোহরের ফরজ নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয় যাকে জুমার নামাজ বলে। 

তাহলে প্রথমে আমরা জেনে নেবো জুমার নামাজের নিময় সম্পর্কে। কারণ জুমার নামাজ পড়তে হলে আপনাকে সঠিকভাবে জুমার নামাজের নিয়ম জানতে হবে। জুমার নামাজের নিয়ম জানা আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

জুমার নামাজ কত রাকাত?

জুমার নামাজের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করার শুরুতে প্রথমে যে বিষয়টি আসবে তা হচ্চে জুমার নামাজ কতো রাকাত। আমরা অনেকেই হয়তো জানি জুমার নামাজ কতো রাকাত আবার অনেকে জানি না। আসুন প্রথমে জেনে নেই জুমার নামাজ আসলে কতো রাকাত। 

জুমার নামাজ মূলতো ১৬ রাকাত। কিন্তু আমরা সবটুকু নামাজ আদায় করি না। আমরা সাধারণতত যে যে নামাজ শুক্রবারে আদায় করি তা হলোঃ
  • চার রাকাত কাবলাল জুম্মা
  • দুই রাকাত ফরজ ও
  • চার রাকাত বাদাল জুম্মা
বাকি যে নামাজটুকু থাকে সেগুলো নফল হিসেবে পড়া হয়।আপনি যদি পড়েন তাহলে তো ভালো আর যদি পড়তে পারেন না তাহলে কোন গুনাহ হবে না।

আরবিতে জুমার নামাজের নিয়ত?

জুমার নামাজের নিয়মের মধ্যে অন্যতম হলো জুমার নামাজের নিয়ত। নামাজ পড়তে হলে নামাজের নিয়ত জানা অত্যাবশ্যক। জুমার নামাজের জন্য নিয়ত আপনি আরবিতেও করতে পারেন আবার বাংলায় করতে পারেন। আজকে আমরা জুমার নামাজের নিয়ত আরবিতে এবং বাংলায় জানবো।

যেহেতু আমরা জুমার নামাজে চার রাকাত কাবলাল জুম্মা, দুই রাকাত ফরজ ও চার রাকাত বাদাল জুম্মা পড়ি তাই আমরা মোট দশ রাকাত নামাজের নিয়ত আরবিতে এবং বাংলায় জানার চেষ্টা করবো।

চার রাকাত কাবলাল জুমার নিয়ত?


আরবিঃ

নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্‌লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলা অর্থঃ

আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুম্মার সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত?


আরবিতেঃ

নাওয়াইতু আন্‌ উসকিতা আন্‌ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্‌রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্‌ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলায় অর্থঃ

আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

চার রাকাত বাদাল জুমার নিয়ত?


আরবিতেঃ

নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলায় অর্থঃ

আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকায়াত বাদাল জুম্মা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

প্রত্যেক মুসলনমানের জন্য নিয়ত এবং নিয়ম জেনে রাখতে হবে।কারণ সাপ্তাহে আমরা একদিন সু্যোগ পাই জুমার নামাজ আদায় করার।

জুমার নামাজের খুতবা আরবি?

জুমার নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্চে জুমার খুতবা।মসজিদের ইমাম নামাজের আগে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আরবিতে যে বক্তব্য প্রদান করেন তাই জুমার খুতবা। রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ এবং কোরআনের আলোকে এই খুতবা প্রদান করা হয়। ইসলামের আমাদের পুরো জীবন বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

জুমার নামাজের আগে একজন ইমাম আমাদের সে সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করে থাকেন যা আমাদের বাস্তবিক জিবনের জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের জীবন কিভাবে পরিচালিত করবো, কোন কাজ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক কোন কাজ আমাদের জন্য হারাম সে সব রাসুল (সাঃ) এর দেখানো পথ এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ সব কিছু বিষয় নিয়ে জুমার খুতবায় আলোচনা করা হয়ে থাকে।

প্রতিদিন যে এক বিষয় নিয়ে খুতবা দেয়া হয় তা কিন্তু নয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে বাস্তবতার আলোকে জুমার খুতবা দেয়া হয়। দেশ মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হয় খুতবাকে। আর সাধারণত খুতবা আরবিতেই প্রদান করা হয়।

তবে কোন কোন দেশে ইংরেজিতেও প্রদান করা হয়ে থাকে। সব থেকে উওম হলো আরবিতেই খুতবা প্রদান করা। একজন আদর্শ নারীর সম্পর্কে জুমার খুতবায় বলা হয়েছে। একজন নারী কিভাবে চললে তাঁর সংসার জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন সুন্দর এবং সাফল্যময় হবে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

জুমার নামাজ ফরজ বা ওয়াজিব?

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে, জুমার নামাজ কি ফরজ না ওয়াজিব।অনেকে মনে করে জুমার নামাজ ফরজ আবার অনেকে মনে করে জুমার নামাজ ওয়াজিব। আমরা কোরআনের এবং হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করবো জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব। জুমার দুই রাকাত নামাজ ফরজ।

মানে আপনার উপর যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ ফরজ করে দেয়া হয়েছে। চার রাকাত কবলাল জুমা এবং চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত এবং বাকি যে রাকাতগুলো রয়েছে সেগুলো নফল। তাঁর মানে হলো যে আপনাকে জুমার দিনে যোহরের নামাজের পরিবর্তে অবশ্যই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেই হবে।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে জুমার নামাজ সম্পর্কে বলেনঃ
‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বন্ধ কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)।

হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরে যাওয়ার আগেই আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার আগেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। 

তাঁর অধিক জিকিরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে। এই আয়াত এবং হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।

জুমার নামাজের ফজিলত?

জুমার নামাজ একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত ফজিলতময় ইবাদাত। আল্লাহ তায়ালা এই দিনকে একজন মুসলিমের জন্য স্পেশাল করে তৈরি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এই দিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই দিন দোয়া কবুলের দিন। বান্দার গোনাহ মাফের দিন হলো জুমার দিন। এই দিন বান্দা সুন্দর জামা কাপড় পরিধান করবে। সুগন্ধি ব্যবহার করবে।

নামাজের জন্য তৈরি হবে। আযান হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার সানিধ্য লাভের আশায় মসজিদের দিকে রওয়ানা হবে। হাদিসে এসেছে, যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। 

যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)। অন্য হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ 

যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।
 
জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের উপর ফরজ। মানে যাদের উপর নামাজ ফরজ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের উপর জুমার নামাজ ফরজ। ইচ্চে করে কেউ যদি জুমার নামাজ ত্যাগ করে আল্লাহ তাঁর জন্য কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা করবেন।

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)। তাই আমাদের উচিৎ গুরুত সহকারে জুমার নামজ আদায় করা। ইচ্চে করে যেন আমরা কখনোই জুমার নামাজ ত্যাগ না করি।

জুমার নামাজের সময়?

জুমার নামাজের সময় সাধারণত যোহরের নামাজের সময় আদায় করা হয়। তবে সব থেকে উত্তম সময় হলো সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া থেকে যখন যোহরের নামাজের সময় শেষ হবে তাঁর আগে পর্যন্ত হচ্চে জুমার নামাজের সময়। 

তবে যদি কেউ চায় তাহলে তাঁর আগেও জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন। সাধারণত টাইমের দিক হিসেব করে বললে জুমার ওয়াক্ত শুরু হয় ১২ঃ১৬ মিনিটে এবং শেষ হয় ৪ঃ১৬ মিনিটে।

শেষকথা, আল্লাহ তায়ালা আমাদের জিবনকে পরিপূর্ণ করতে ইসলাম প্রদান করেছেন। আর ইসলামের অন্যতম হচ্চে নামাজ। জুমার নামাজ একজন মুসলিমের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক জুমার নামাজের নিয়ম মেনে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন।
Next Post Previous Post