আখলাকে হামিদা কি | আখলাকে হামিদার গুরুত্ব
আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি?
আখলাক অর্থ চরিত্র স্বভাব৷ আর হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয়৷ আখলাকে হামিদাহ অর্থ প্রশংসা চরিত্র সচ্চরিত্র।আখলাকে হামিদাহ কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায় যেসব স্বভাব বা চরিত্র সমাজে প্রশংসনীয় ও সমাদৃত আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (স.) এর নিকট প্রিয় সেসব স্বভাব বা চরিত্রকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়৷ এককথায় মানব চরিত্রের সুন্দর নির্মল ও মার্জিত গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়৷ মানুষের সার্বিক আচার আচরণ যখন শরিয়ত অনুসারে সুন্দর সুষ্ঠু ও কল্যাণকর হয় তখন সে স্বভাব চরিত্রকে বলা হয় আখলাকে হামিদাহ৷![]() |
মসজিদ |
আখলাকে হামিদাহকে আখলাকে হাসানাহ বা হুসনুল খুলকও বলা হয়৷ আখলাকে হাসানাহ অর্থ সুন্দর চরিত্র৷ মানব চরিত্রের উত্তম ও নৈতিক গুণাবলি আখলাকে হামিদাহ এর অন্তর্ভুক্ত৷ যেমন সততা সত্যবাদিতা ওয়াদা পালন মানব সেবা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দয়া ক্ষমা ইত্যাদি৷
আখলাকে হামিদাহ এর গুরুত্ব কি কি?
আখলাকে হামিদাহ মানবীয় মৌচগুণ ও জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ৷ এর দ্বারাই মানুষ পূর্ণমাত্রায় মনুষ্যত্বের স্তরে উপনীত হয়৷ মানবিকতা ও নৈতিকতার আদর্শ আখলাকে হামিদাহর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করে৷ মানুষের ইহ ও পরকালীন সুখ শান্তি উত্তম আখলাকের উপরই নির্ভরশীল৷ সৎচরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভালো তেমনি মহান আল্লাহর নিকটও প্রিয়৷ মহানবি (স.) এর হাদিসে বলা হয়েছেঃاَحَبُّ النَّاسِ اِلَى اللّٰهِ اَحْسَنُهُمْ خُلُقًا
অর্থঃ আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই লোকেই অধিক প্রিয় চরিত্রের বিচারে যে উত্তম৷ (ইবনে হিব্বান)।
এ জন্য মানুষকে আখলাক শিক্ষা দেওয়াও নবি রাসুলগণের অন্যতম দায়িত্ব ছিল৷ আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী৷ সব ধরনের সৎগুন তার চরিত্রে পাওয়া যায়৷ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
وَاِنَّكَ لَعَلٰى جُلُقٍ عَظِيْمٍ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ধারক৷(সূরা আল কালাম আয়াত ৪)
রাসুলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেছেন
اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَرِمَ الْاَجْلَاقِ
অর্থঃ উত্তম চরিত্রিক গুণাবলিকে পূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি৷ (বায়হাকি)।
রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে যেমন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তেমনি মানবজাতিকে সচ্চরিত্রে গঠনের শিক্ষা দিয়েছেন৷ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার জন্য তিনি সৎ নৈতিক স্বভাব অনুশীলনের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন মুমিনগণের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী যে তাদের মধ্যে চরিত্রের বিচারে সবচেয়ে উত্তম৷ (তিরমিযি)।
প্রকৃতপক্ষে সৎচরিত্র পরকালীন জীবনেও মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার মুক্তির উপায় হবে৷ উত্তম আচার আচরণ মানুষকে পুণ্য বা সাওয়াব দান করে৷ মহানবি (স.) বলেছেনঃ
اَلْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ
অর্থঃ সুন্দর চরিত্রই পূণ্য৷ (মুসলিম)
প্রশংসনীয় আচরণ ও স্বভাব কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লা ভারী করবে৷ একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন মিযানে সুন্দর চরিত্র অপেক্ষা ভারী বস্তু আর কিছুই থাকবে না৷ (তিরমিযি)
দুনিয়ার জীবনেও আখলাকে হামিদাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সচ্চরিত্র ব্যক্তিকে সমাজের সবাই ভালোবাসে বিশ্বাস করে৷ সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে সম্মান দেখায়৷ তাঁর বিপদে আপদে এগিয়ে আসে৷ চরিত্রের কারণে তিনি সমাজে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন৷ মহানবি (স.) এ সম্পর্কে বলেছেনঃ
خِيَارُ كُمْ اَحْسَنُكُمْ اَخْلَاقًا
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ সকল ব্যক্তি যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বিচারে সুন্দরতম৷ (বুখারি)
সমাজের সকলে চরিত্রবান হলে সেখানে কোনরূপ হিংসা বিদ্বেষ মারামারি হানাহানি থাকে না৷ সমাজ সুখে শান্তিতে ভরে ওঠে৷
সৎচরিত্র আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত৷ দুনিয়ায় আগত সকল নবি রাসুলই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন৷ এ ছাড়াও পৃথিবীর স্মরণীয় ও বরণীয় মনীষীগণও উত্তম নৈতিক আদর্শ অনুশীলন করতেন৷ সৎচরিত্রের মাধ্যমেই ইসলামের যাবতীয় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে৷ এজন্য ইসলামে আখলাকে হামিদাহ অর্জনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷