ফজরের নামাজ কয় রাকাত | ফজরের নামাজের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজ আমরা ফজরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমরা সকলেই জানি মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বলেছেন। 
নামাজ
নামাজ

তার মধ্যে থেকে আমরা ফজরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আজকের পোষ্টে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

ফজরের নামাজের নিয়ম?

একজন মুসলিমের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজ হলো ফজরের নামাজ। ফজরের নামজের অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। নিচে আমরা নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।  

ফজরের নামাজের শেষ সময়?

ফজরের নামাজের সময় সুবহে সাদিক হতে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত।আনাস (রা.) বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু অন্ধকার থাকতে ফজরের নামাজ পড়তেন (বুখারি ও মুসলিম) এবং আয়েশা (রা.) বলেনঃ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজ এমন অন্ধকার সময়ে পড়তেন যে, নামাজী মেয়েরা চাদর জড়িয়ে ফেরার সময় অন্ধকারের কারণে চেনা যেত না। এই জন্য ফজরের নামাজের শেষ সময় বলা হয় সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। 

ফজরের নামাজ কত রাকাত?

ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত। দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজ নিয়ে গঠিত।

ফজরের নামাজের ফজিলত?

ফজরের নামাজের দশটি ফজিলত রয়েছেঃ

১. ফজরের নামাজ মুনাফিকদের জন্য কঠিন হয় এবং ঈমানদারদের জন্য সহজ হয়। এই জন্য ফজরের নামাজে উপস্থিত হওয়া ঈমানদারের পরিচয়। 

২. ফজর নামাজে হাজির হলে তার জিম্মাদারি মহান আল্লাহ্‌ নেন। ঐদিনের জন্য আল্লাহ জিম্মাদারি নেয় এবং আল্লাহ্‌র নিরাপত্তার ভিতরে প্রবেশ করে।

৩. ফেরেশতারা আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছে ঐ ব্যক্তির নামে সাক্ষ্য দেয়।

৪. যদি কেউ জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করে তাহলে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে সারারাত দাড়িয়ে থেকে তাহাজ্জত নামাজ পড়ার সাওয়াব দান করে। 

৫. ফজরের নামাজ যদি কেউ জামায়াতের সাথে পড়ে আলো আধারে কষ্ট করে মসজিদে আসে নিয়মিত মহান আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণভাবে আলোর ব্যবস্থা করে দিবে।  

৬. মহান আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে পারবে সব জান্নাতীরা।
 
৭. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না নিয়মিত ফজর নামাজ আদায় করলে। 

৮. ফজরের নামাজ আদায় করলে নবীজির সাথে বরকতের ভাগীদার হবে। 

৯. ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা মানে দুনিয়া বা দুনিয়ার মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক হওয়ার চেয়ে সম্পদশালী হওয়ার সমান। 

১০. ফজরের নামাজ যদি জামায়াতের সাথে আদায় করে তাহলে মন ভালো থাকবে,এই মন ভালো নিয়ে সারাটা দিন কাটানো যাবে।

এছাড়াও ফজরের নামাজ আদায়ের ফলে অনেক রোগ বালাই থেকে আল্লাহ্‌ রেহায় করে। সকালের হাওয়া অনেক রোগের ঔষুধ। ফজরের নামাজের ফলে চেহারার মধ্যে আলাদা একটা সুন্দর ছাপ ফুটে উঠে। মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা ফজরের নামাজের অনেক ফজিলত দিয়েছে। 

ফজরের নামাজের নিয়ত?

ফজরের নামাজের নিয়ত দুই বার পড়তে হবে। একবার সুন্নতের সময়,আরেকবার ফরজের সময়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে রয়েছে বান্দার সমস্ত আমল এবং কর্মকান্ডসমূহ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যেকোনো ভালো কাজ আমরা করবো এটির সাওয়াব পাওয়া এবং গ্রহণযোগ্যতা পায় তার নিয়তের ওপর। 

তাই ফজরের নামাজের প্রথমত নিয়ত থাকতে হবে যে আমরা ইবাদত করছি। ইহা আমরা আল্লাহ্‌ উদ্দেশ্য পালন করছি। নিয়তের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করতে হবে যে আমি এখন ফজরের সুন্নত নামাজের  নিয়ত করলাম। নিয়ত পরিপূর্ণভাবে মন থেকে আসতে হবে। এইভাবে ফরজের নামাজের ও নিয়ত করতে হবে। 

কারণ আমলটি নির্ভর করে নিয়তের ওপর। তাই নামাজের নিয়ত করতে হবে প্রথমে মনে মনে নিয়ত করতে হবে যে আমি মহান আল্লাহ্‌ উদ্দেশ্য করে নিয়ত করছি। নামাজ আদায়ের সময় সুন্নত নামাজের সময় সুন্নত নামাজের নিয়ত মাথায় আসতে হবে। অন্তরে নিয়ত উপস্থিত হলেই নিয়ত হিসেবে গণ্য হবে। 

কারণ নিয়তের অর্থই হচ্ছে ইচ্ছা। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয়। কারণ ইচ্ছা উদ্দেশ্য এগুলো হলো অন্তরের কাজ। অতএব নামাজের জন্য মুখের উচ্চারণ করে নিয়ত করার কোন দরকার নেই। কারণ এইটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের মধ্যে কোন নির্দেশ দেওয়া নেই। 

আমরা ইবাদতের ক্ষেত্রে নবীজির সুন্নত অনুসারে চলবো। নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যদি আবশ্যক মনে করে তাহলে বিদায়াত হবে। তাই আমরা সকলে ফজরের নামাজের নিয়ত আমাদের নবীজির সুন্নত অনুসারে করবো।

ফজরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

ফজরের নামাজ দুই রাকাত সুন্নত এবং দুই রাকাত ফরজ। 

প্রথমে অজু করে জায়নামাজে দাড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়বো। (ইন্নি উয়াজ্জাহতু উয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারা সসামাওয়াতি উয়াল আরদি হানিফা উয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন)। তারপর অন্তর থেকে নামাজের জন্য নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলে রাকাত বাধতে হবে। 

দুই হাত কাধ বরাবর নিয়ে যাতে হাতের তালু দুইটি কাবার দিকে থাকে তারপর ছেলেদের জন্য নাভির উপরে বা নিচে বাধতে হবে এবং মেয়েদের জন্য বুকের উপর বাধতে হবে। অতঃপর সানা পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা উতাবা রাকাসমুকা উয়াতায়ালা জাদ্দুকা উয়ালা ইলাহা গাইরুক)। 

তারপর সূরা ফাতিহা পড়ে তার সাথে আরেকটি সূরা যোগ করে পড়তে হবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে পড়তে হবে (সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম) ৩ বার পড়তে হবে। সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা বলে রুকু থেকে উঠতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। 

(সিজদার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত সোজা রেখে দেহটাকে নিচের দিকে ঝুকিয়ে পরবর্তীতে হাটু ঝুকিয়ে প্রথমে নাক পরে কপাল মাঠিতে লাগানো)। সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা, ঠিক আগের মতো তিন বার। আল্লাহু আকবর বলে সিজদাহ থেকে বসা সিজদা দুইবার দিতে হবে। 

সেজন্য আল্লাহু আকবার বলে সিজদাহ থেকে বসা অবস্থায় তারপর আবার সিজদাহ যেতে হবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় আগের মতোই করে বলতে হবে। শেষ রাকাতের সময় আত্তাহিয়াতু পড়ে দুরদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরতে হবে। এইভাবেই দুই রাকাত সুন্নত এবং ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে।

ফজরের নামাজের উত্তম সময়?

ফজরের নামাজের উত্তম সময় হলো আজান দেওয়ার সাথে সাথে নামাজ কায়েম করা। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন সুবহে সাদিকের সময় নামাজ কায়েম করতে। 

আমাদের নবী আজান দেওয়ার সাথে সাথে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়তে যেতেন। এই জন্য ফজরের নামাজের উত্তম সময় হলো আজানের সাথে সাথে জামায়াতে নামাজ কায়েম করা।  

ফজরের নামাজের পর কোন সূরা পরতে হয়?

ফজরের নামাজের পর সূরা ইয়াসিন পড়তে হয়। কারন দিনের শুরুটা যদি সূরা ইয়াসিন দিয়ে করা হয় তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে। 

হাদিসে বলা আছে, যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে থাকবে। আর তাই ফজরের নামাজের পর ইয়াসিন সুরা পড়া উত্তম। 

ফজরের নামাজ কয়টা পর্যন্ত পড়া যায়?

ফজরের নামাজ পড়ার কোন সময় নেই। ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম হলো আজান দেওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়া।সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত নামাজ পড়া যায়।

ফজরের নামাজ আগে সুন্নত না ফরজ?

ফজরের নামাজ সুন্নত দিয়ে শুরু করতে হয়। আমাদের নবীজি সুন্নত পড়ে তারপর ফরজ নামাজ পড়তেন।

ফজরের নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?

ফজর নামাজের ওয়াক্ত  শুরু হয় সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এর ওয়াক্ত থাকে। রাতের শেষে আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বা আকৃতির যে আলোকে রেখা দেখা যায় তখনি ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা ফজরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post