ভ্রাতৃত্ব অর্থ কি | ভ্রাতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি | ইসলামী ভ্রাতৃত্ব কী

ভ্রাতৃত্ব অর্থ কি?

উখওয়াত শব্দের আভিধানিক অর্থ ভ্রাতৃত্ব। 

ভ্রাতৃত্ব কাকে বলে?

পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্ব বলে৷ মানুষের মাঝে এ হৃদতক এ আন্তরিকতা বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠে৷

ভ্রাতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি?

ভ্রাতৃত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ
  • ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব
  • বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং
  • ইসলামি ভ্রাতৃত্ব

ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব কি?

একই পিতার ঔরসে বা একই মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করার কারণে যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয় তাকে ঐরসজাত ভ্রাতৃত্ব বলে৷

ভ্রাতৃত্ব
ভ্রাতৃত্ব

বিশ্বভ্রাতৃত্ব কি?

পৃথিবীর সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)।  এ কারণে বিশ্বের সকল মানুষই ভাই ভাই৷ ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়৷ আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে মানুষের আকার আকৃতি স্বভাব প্রকৃতি এবং বর্ণ ও ভাষার মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়৷ 

আর এভাবে মানুষ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ তবু তারা পরস্পর ভাই ভাই৷ কারণ তারা সবাই এক আদম (আ.) হতে সৃষ্টি৷ মহান আল্লাহ বলেনঃ
                                                                               يٰٓاَيُّهَا النَّاسُ اِنَّاخَلَقْنٰكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنٰكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَٓا ءِلَ لِتَعَارَفُوْا

অর্থঃ মানবমগুলী আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে৷ (সূরা আল হুজুরাত আয়াত ১৩)।

রাসুল (স.) বলেছেন তোমরা প্রতেকেই আদম (আ.) হতে এবং আদম মাটি হত সৃষ্টি (বুখারি)। আর এ আয়াত ও হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে সকল মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ৷

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব কি?

আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। ইসলামের মূলবাণী আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল৷ যারা এই কালিমায় বিশ্বাসী তারা যেকোন বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও অঞ্চলের অধিকারী হোক না কেন তারা ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
                                                                                                                                              اِنَّمَا الْمُؤْمِنُيْنَ اِخْوَةٌ
অর্থঃ নিশ্চয়ই মুমিনগণ ভাই ভাই৷ (সূরা আল হুজুরাত আয়াত ১০)।

হাদিসে রাসুল (স.) বলেনঃ
                                                                                                                                                اَلْمُسْلِمُ اَخُوْ اَلْمُسْلِمِ
অর্থঃ মুসলমান মুসলমানের ভাই৷ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইসলামি ভ্রাতৃত্বের তাৎপর্য?

ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান৷ ইসলামে উঁচু নিচু সাদা কালো ধনী দরিদ্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই৷ আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর বিশ্বের সকল মুসলমান পরস্পরের ভাই৷ একই দীনসূত্রে আবদ্ধ৷ মহানবি (স.) বলেন অনারবগণের উপর যেমন আরবগণের শ্রেষ্ঠত্ব নেই তেমনি আবরগণের উপরও অনাবরগণের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই৷ ইসলামি ভ্রাতৃত্ব এতই সুদৃঢ় যে আল্লাহর রাসুল (স.) পৃথিবীর সকল ইমানদারগণকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন৷

দেহের কোন একটিঅঙ্গে  অসুখ হলে যেমন পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে তেমনি পৃথিবীর কোন একপ্রান্তের একজন মুসলিম বিপদে পতিত হলে সকল মুসলমানের অন্তর ব্যথিত হয়৷ কোন মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেওয়া যাবে না৷ এমনকি যদি কখোন পরস্পরের মধ্যে কোন কলহ সৃষ্টি হয় তখন অপর মুসলমান ভাইয়েরা তা মিটিয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে৷ 

কোন মুসলমান নিজের জন্য যা পছন্দ করে অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে অন্যথায় সে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না৷ প্রিয় নবি (স.) বলেন মুমিনগণ পরস্পর মিলে একটি ইমারতস্বরূপ এক এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে রাখে৷ (বুখারি ও মুসলিম)।
Next Post Previous Post