ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমরা সকলেই ইস্তেখারা নামাজ সম্পর্কে জানি। ইস্তেখারা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। এই ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও দোয়া রয়েছে।
![]() |
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া |
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম?
ইস্তেখারা মানে হলো আল্লাহ্র সাথে পরামর্শ করা,আল্লাহ্র কাছে কল্যাণ কামনা করা। মহান আল্লাহ্র কাছে ইস্তেখারা করে পরামর্শ চাইলে সেই কাজটি তার জন্য কল্যাণকর হয়। ইস্তেখারা নামাজ এই জন্যই পড়ে যেন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সাহায্য লাভে ধন্য হয়।এই জন্য রাসুল(সাঃ) ইস্তেখারা নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। এই ইস্তেখার নামাজের নিয়ম রয়েছে যা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। ইস্তেখারা নামাজ হলো নফল নামাজ। ইস্তেখারা নামাজের কোন বিশেষ নিয়ম নেই। সাধারণ দুই রাকাত নফল নামাজের মতোই পড়া যায়।
শুধু নফল নামাজের নিয়তের সময় অন্তরে ইস্তেখারা নামাজের কথা আনতে হবে। যে আমি ইস্তেখারা নফল নামাজ আদায় করছি। নিচে নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- প্রথমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ওযু করে নিতে হবে।
- এরপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ্র উপর ভরসা করে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। আর নিয়তটি মনে মনে করতে হবে।
- এরপর সানা পড়ে আল্লাহ আকবর বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
- সূরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করে অন্য যেকোনো সূরা সংযুক্ত করে পড়া যাবে।
- ইস্তেখারা নামাজের ক্ষেত্রে প্রথম রাকাত যেভাবে আদায় করা হবে সেভাবে শেষ রাকাত ও পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাতের রুকু সিজদা শেষ করার পর তাশাহুদ, দুরদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ্র কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া পাঠ করতে হবে।
ইস্তেখারা নামাজের ফজিলত?
ইস্তেখারা করা মানে আল্লাহ্র কাছে কল্যাণ চাওয়া। আর মহান আল্লাহ্র কাছে ইস্তেখারার মাধ্যমে চাইলে আল্লাহ তার কল্যাণ ফিরিয়ে দেয়। ইস্তেখারা নামাজের ফলে আল্লাহ্ তা’আলা অনেক ফজিলত দিয়ে থাকে। ইস্তেখারা নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।কারণ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন কোরআন শিখিয়েছেন তেমনি ইস্তখারা করতেও শিখিয়েছেন।কোন কিছু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে এই নামাজ পড়লে অনেক নিয়ামত পাওয়া যায়।
কারণ এই ইস্তেখারা নামাজের ফলে আমাদের সকল সিদ্ধান্তের কথা মহান আল্লাহ্র কাছে জানিয়ে এবং সকল সমস্যা থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য, কোন কিছু চাওয়ার থাকলে এই সকল কিছু মহান আল্লাহ্র কাছে চাইলে সেইটি যদি হালাল হয়, আমাদের কল্যাণের জন্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সেই জিনিস দিয়ে থাকে।
ইস্তেখারা নামাজের প্রচুর ফজিলত আছে। এই ইস্তেখারা নামাজ পড়ে মহান আল্লাহ্র কাছে সকল বিষয় চেয়ে কল্যাণ পাওয়া যায়। ইস্তেখারা নামাজের ফলে আল্লাহ তা’আলা আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আমাদের নবি সকলকে এই ইস্তেখারা নামাজ পড়তে নির্দেশ দিতেন।
এই ইস্তেখারা নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এই জন্য সকল মুসলমানদেরকে ইস্তেখারা করা উচিত। এই ইস্তেখারার ফলে মহান আল্লাহ আমাদের ঠিক ভুল বুঝার সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করে। এই ইস্তেখারা নামাজে আমাদের সকলের পড়া উচিত। কারণ এই ইস্তেখারা নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।
ইস্তেখারা নামাজের সময়?
ইস্তেখারা নামাজের সময় সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ আসরের পর থেকে নিয়ে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত, এই তিন সময় ছাড়া বাকি যেকোনো সময় ইস্তেখারার সালাত আদায় করা যায়। ইস্তেখারা নামজের সময়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনারা যেকোনো সময় ইস্তেখারা নামাজ পড়তে পারবেন।ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত?
নিয়ত মানেই হচ্ছে মনের ইচ্ছা। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার কোন দরকার নেই। তাই ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নিজের ইচ্ছার কথা অন্তরে এনে নিয়ত করলেই হবে। যেহেতু ইস্তেখারা নামাজ নফল। তাই নফল নামাজের কথা অন্তরে এনে ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত করতে হবে।অন্তরে আনতে হবে যে হে আল্লাহ্, আমি ইস্তেখারা নফল নামাজের নিয়ত করলাম। আর ইস্তেখারা অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্র কাছে কল্যাণ চাওয়া। তাহলে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে ইস্তেখারা নফল নামাজের নিয়ত করে নিজের ইচ্ছা আল্লাহ্র সাথে পরামর্শ করলেই নিয়ত হয়ে যাবে।
বলতে হবে হে আল্লাহ্, কোনটা করলে আমার ভালো হবে, কল্যাণ হবে সেই কাজটা যেন আমার পুরণ হয়। এই ভাবে অন্তরে নিয়ত করতে হবে। তাহলেই আল্লাহ্র রহমতে ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।
ইস্তেখারা নামাজের দোয়া?
উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযিম,ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু,ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব।আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না “হাযাল আমরা’’ খাইরুল্লি ফিহ-দীনি ওয়া মা’আশী ওয়া আকিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী ওয়া ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফিহী, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না ‘’হাযাল’’ আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা’আশী ওয়াআকীবাতি আমরি,ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী।
এই দোয়ার মধ্যে যেখানে ‘’হাজাল আমরা” শব্দটি যে দুইবার আসবে,সেই দুইবারই সেখানে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন সেটি স্মরণ করবেন।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি,তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই।
তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে জ্ঞাত। হে আল্লাহ্! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য,আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে ভালো মনে কর তাহলে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও।
পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে কর, তাহলে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও।
এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখো। এবং যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও। (তিরমিজি ৪৮০ ইবনু মাজাহ।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম,সময়,ফজিলত এবং দোয়া এইসব বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
এরপরেও যদি এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।