ইলম কি | ইলম কত প্রকার ও কি কি

ইলম (জ্ঞান) কি?

ইলম আরবি শব্দ৷ এর অর্থ হল জ্ঞান জানা অবগত হওয়া বিদ্যা ইত্যাদি৷ ইসলামি পরিভাষায় ইলম হল কোন বস্তুর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা৷ অপরদিকে ইসলাম অর্থ আনুগত্য করা ও আত্মসমর্পণ করা৷
ইলম
ইলম

তাই প্রতিটি মুসলিম কার আনুগত্য করবে এবং কীভাবে করবে? কার নিকট আত্মসমর্পণ করবে? এবং কীভাবে আত্মসমর্পণ করবে? তা অবশ্যই জানতে হবে৷ ইলম ব্যতীত তা জানা যাবে না৷ তাই ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম৷

ইসলামে ইলমের গুরুত্ব?

ইসলামে ইলম (জ্ঞান) এর গুরুত্ব এত বেশি যে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন নাজিলের সূচনা করেছেন পড়ুন (اِقْرَاْ) শব্দ দ্বারা৷ আল্লাহ ঘোষণা করেছেনঃ
اِقْرَاْبِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِىْ خَلَقَ

অর্থঃ পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করছেন৷ (সূরা আলাক আয়াত ১)।

সুতরাং পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন হয় বিধায় মনুঘ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে এবং পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে জ্ঞানচর্চা অপরিহার্য৷ জ্ঞানবান ব্যক্তি ও অজ্ঞ ব্যক্তি কখনো সমান হতে পারে না৷ 

জ্ঞান জ্ঞানীর মর্যাদা সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে৷ যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
يَرْفَعِ اللّٰهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِقْنَ اُوْتُواالْعِلْمَ دَرَجٰتٍ

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদায় সমুন্নত করবেন৷ (সূরা আল মুজাদালা আয়াত ১১)।

ইসলাম জ্ঞানার্জনকে সকল মুসলিমের উপর ফরজ (আবশ্যক) করেছে৷ মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেনঃ
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ

অর্থঃ ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ৷ (ইবনে মাজাহ)।

হযরত মুহাম্মদ (স.) অন্যত্র জ্ঞানার্জনকে উত্তম ইবাদত বলে অভিহিত করছেন৷ ইলমের অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে৷ এর মধ্যে যে ধরনের ইলম অর্জন করলে সত্য মিথ্যার পার্থক্য করা যায় বৈধ অবৈধ বোঝা যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুটি লাভ করা যায় তাই হল উত্তম ইলম৷

ইলম এর প্রকারভেদ?

ইলম দুই ভাগে বিভক্ত যেমনঃ
  • দীনি ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) ও
  • দুনিয়াবি ইলম (পার্থিক জ্ঞান)

দীনি ইলম বলতে সাধারণত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানকেই বুঝায়৷ যেমন কুরআন হাদিস ফিকাহ তাফসির ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান৷ আর দুনিয়াবি ইলম বলতে শুধু পার্থিক উন্নতির সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানকেই বুঝায়৷ যেমন গণিত বিজ্ঞান ভূগোল সাহিত্য পদার্থ রসায়ন ইত্যাদির জ্ঞান৷

অন্যভাবে ইলমকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমনঃ
  • গ্রহণীয় জ্ঞান
  • বর্জনীয় জ্ঞান

গ্রহণীয় জ্ঞান কি?

গ্রহণীয় জ্ঞান হল যে জ্ঞান ইহকাল ও পরকালে মানুষের কল্যাণে আসে যেমন নৈতিক জ্ঞান চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রকৌশল পদার্থ রসায়নসহ সকল কল্যাণকর জ্ঞান৷ আর বর্জনীয় জ্ঞান হল যে জ্ঞান মানুষের কোন কল্যাণে আসে না বরং যার দ্বারা ইহকাল ও পরকালে অকল্যাণ সাধিত হয়৷ 

যেমন অনৈতিক জ্ঞান চুরি ডাকাতি অন্যায় জুলুম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা৷ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক৷ 

তবে প্রত্যেক সম্প্রদায় বা দেশ থেকে একদলকে অবশ্যই ইসলাম ধর্মের জ্ঞানে পন্ডিত হতে হবে অন্যখায় সকলকেই আল্লাহর নিকট পরকালে কৈফিয়ত দিতে হবে৷ মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَلَوْ لَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْ قَةٍمِّنْهُمْ طَآ ئِفَةٌلِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْ مَهُمْ اِذَارَجَعُوْآ اِلَيْهِمْ

অর্থঃ তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ বের হয় না কেন যাতে তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে৷ (সূরা আত তাওবা আয়াত ১২২)।

সুতরাং আমাদের মধ্যে একদল লোককে অবশ্যই দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে৷ ইসলামের দৃষ্টিতে দীনি শিক্ষার ব্যাপারে যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনিভাবে পার্থিব শিক্ষা অর্জনেরও গুরুত্ব রয়েছে৷
তবে তা অবশ্যই আল্লাহর কোন বিধানের পরিপন্থী হতে পারবে না৷ 

বরং তার সাথে নৈতিকতার সমন্বয় থাকতে হবে৷ কারণ শিক্ষার সাথে নৈতিকতা থাকলেই কেবল মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়৷ আর শিক্ষার সাথে নৈতিকতা না থাকলে মানুষের মনুষ্যত্ব  ধ্বংস হয়ে যায়৷

মূলত ইসলামের উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ করা৷ যেমন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন দীন হল কল্যাণ করা৷ (মুসলিম)৷

তাই যেসব ইলম মানবজীবনে কল্যাণ সাধন করে তা অর্জন করা অবশ্য মই কর্তব্য৷ সুতরাং যে ইলম মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ সাধন করবে তা আমারা শিখব ও শিখাব৷
Next Post Previous Post