ইজমা শব্দের অর্থ কি | ইজমার স্তর কয়টি ও কি কি | ইজমার শর্ত
ইজমা শব্দের অর্থ কি?
শরিয়তের তৃতীয় উৎস হল ইজমা৷ ইজমা আরবি শব্দ৷ এর আভিধানিক অর্থ একমত হওয়া, ঐক্যদ্ধ হওয়া, মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি৷ইজমা কি?
ব্যবহারিক অর্থে কোন বিষয় বা কথায় ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলে৷ ইসলামি পরিভাষায় শরিয়তের কোন বিষয় একই যুগের মুসলিত উম্মতের পুণ্যবান মুজাহিদগণের ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলা হয়৷ ইজমা মহানবি (স.) এর পরবর্তী যেকোন যুগে হতে পারে৷ সাহাবিগণ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷ইজমা কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত হওয়া আবশ্যক৷ কুরআন সুন্নাহর মূলনীতি বিরোধী কিংবা কোন অন্যায় ও পাপ কাজে ইজমা হয় না৷ ইজমা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা ও নিয়ামত৷
ইজমা কত প্রকার ও কি কি?
ইজমা দুই প্রকারঃ
- ইজমা-আযীমাত ও
- ইজমা-রুখসাত
ইজমার ইতিহাস?
ইজমা বা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোন সমস্যার সমাধান করা কিংবা নতুন বিধান প্রবর্তন করা কোন নতুন ঘটনা নয়৷ বরং রাসুলুল্লাহ (স.) এর সময় হতেই এর ব্যবহার বা প্রচলন লক্ষ করা যায়৷ রাসুলুল্লাহ (স.) স্বয়ং বিভিন্ন বিষয়ে সাহাবিগণের পরামর্শ নিতেন৷ অতঃপর তাঁদের মতামতের আলোকে সর্বসন্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃوَاَمْرُ هُمْ شُوْرٰ ي بَيْنَهُمْ
অর্থঃ আর তাদের কাজকর্ম সম্পাদিত হয় পরস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে৷ (সূরা আশ শুরা আয়াত ৩৮)।
এভাবেই রাসুলুল্লাহ (স.) ইজমার বৈধতা দৃষ্টান্ত ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন৷ পরবর্তীতে সাহাবিগণের যুগে এর পূর্ণাঙ্গ প্রচলন ঘটে৷ খলিফাগণ নতুন কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে সর্বপ্রথম আল কুরআনে এর সমাধান খুঁজতেন৷ তাতে খুঁজে না পেলে মহানবি (স.) এর হাদিসের মাধ্যমে সমাধান করতেন৷
![]() |
ইজমা |
আর যদি হাদিসেও সে সমস্যার সুস্পষ্ট কোন সমাধান না পেতেন তখন তাঁরা বিশিষ্ট সাহাবিগণের মতামত নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধান দিতন৷ যেমন হযরত আবু বকর (রা.) এর সময়ে সাহাবিগণের ঐকমত্যের মাধ্যমেই কুরআন সংকলনের কাজ শুরু করা হয়৷
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর সময়ে বিশ রাকআত তারাবি এর সালাত জামাআতের সাথে আদায় করার ব্যাপারে সাহাবিগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এভাবে পরবর্তী যুগগুলোতেও ইজমার মাধ্যমে নানা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা হয়েছে৷
ইজমার হুকুম ও কার্যকারিতা?
ইজমা শরিয়তের তৃতীয় উৎস৷ বিধি বিধান নির্ধারণে ইজমা অকট্য দলিল হিসেবে সাব্যস্ত৷ সাধারণভাবে ইজমান ভিত্রিতে প্রণীত বিধানের উপর আমল করা ওয়াজিব৷ইজমার গুরুত্ব ও বৈধতা?
ইসলাসি শরিয়েত ইজমা অন্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আল কুরআন ও হাদিসের পরই এর স্থান৷ এটি শরিয়তের তৃতীয় উৎস ও অকাট্য দলিল৷ আল কুরআনের বিভিন্ন আয়ত ও হাদিস দ্বারা ইজমার বৈধতা প্রমাণিত৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃكُبْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِ جَتْ لِلنَّـاسِ
অর্থঃ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব৷ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنٰكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْ نُوْا شُهَدَآءَ عَلَي االنَّـاشِ
অর্থঃ এভাবে আমি তোমাদের এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষ্যদাতা হতে পার৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ১৪৩)।
উপবিউক্ত আয়াতদ্বয়ে উম্মতে মুহাম্মদি তথা মুসলিম জাতিকে শ্রেষ্ঠ ও মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে য্ ইজমার পরোক্ষ দলিল স্বরূপ৷
মুসলিম মুজতাহিদগণ একমত হয়ে কোন বিষয়ে ফয়সালা করলে তার বিরোধিতা করা চরম পাপ৷ আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেনঃ
وَمَنْ يُّشَا قِقِ الرَّسُوْلَ مِنٌ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰي وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰي وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَ
অর্থঃ সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পরও কেউ যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনগণের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে তবে আমি তাকে ঐ দিকেই ফিরিয়ে দেব যে দিক সে অবলম্বন করছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব৷ (সূরা আন নিসা আয়াত ১১৫)।
উক্ত আয়াতে মুমিনদের অনুসৃত পথ বলতে মুসলিমদের ঐকমত্য বা ইজমা এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ আমাদের প্রিয়নবি (স.) বলেছেনঃ
مَارَاٰهُ الْمُسْلِمُوْنَ حَسَنًا فَهُوَعِنْدَاللّٰهِ حَسَنٌ
অর্থঃ মুসলমানগণ যা ভালো বলে মনে করে তা আল্লাহ তায়ালার নিকটও ভালো৷ (তাবারানি)।
এ হাদিস দ্বারাও ইজমা তথা মুসলমানদের ঐকমত্যের গুরুত্ব প্রমাণিত৷ মহানবি (স.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতকে নিশ্চয়ই গোমরাহির উপর জমায়েত করবেন না৷ আল্লাহর হাত (রহমত ও সাহায্য) দলবদ্ধ থাকার উপর রয়েছে৷ যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অবশেষে ) দোযখে যাবে৷ (তিরমিযি)।
ইজমা শরিয়তের অন্যতম দলিল৷ এর বৈধতা কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত৷ এর বিধানের উপর আমল করা আবশ্যক৷