তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার জন্য মুমিন-মুসলমানগণ বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই লেখনীতে তাহাজ্জুদ নামাজের বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহাজ্জুদ (تهجد‎‎) একটি আরবি শব্দ। 
তাহাজ্জুদ নামাজ
তাহাজ্জুদ নামাজ

যা রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল হিসেবেও পরিচিত। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্যে তাহাজ্জুদ নফল ইবাদত। এই নামাজ বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। 

হযরত মুহাম্মদ(সঃ) নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবীগণ দেরকেও তাহাজ্জুদ পালনে উৎসাহিত করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম?

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার আগে পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নিয়ে আল্লাহ পাক যা বলেছেন তা জানা যাক। পবিত্র কুরআনে সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে রয়েছে।

আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়ায়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।" তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মগুলো হলোঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আদায় করা উত্তম।
  • ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের দুই রাকাত সুন্নতের পর ও বিতরের আগেই তাহাজ্জুদ আদায় করা জায়েজ আছে।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত বা চার রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা ক্বেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত মনে পড়া।
  • নফল এই নামাজে সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়লেও সমস্যা নেই। 
  • তাহাজ্জুদে ক্বেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজেও পড়ার বিধান রয়েছে তবে কারও কষ্টের কারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নিরবে পড়া কর্তব্য।
  • পবিত্র রমজান মাস ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামা'আতে তাহাজ্জুদ পড়া জায়েজ আছে তবে নিয়মিতভাবে পড়ার বিধান নেই। 
  • এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদিক বা ফজরের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।
  • তবে অর্ধ রাতের পর  তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার উত্তম সময় শুরু হয় এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম?

মহিলা ও পুরুষের তাহাজ্জুদের নামাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাহাজ্জুদ নামায নারী-পুরুষ উভয়েই আদায় করতে পারবেন স্বাভাবিক নিয়মেই। আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম নর-নারীকে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। 

তারপরও মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম হলোঃ
  • প্রথমে তাকবীরে তাহরীমা পড়তে হবে। 
  • এরপর ছানা পাঠ করা হলে সূরা ফাতিহা অন্য যে কোন সূরার সাথে মিলাতে হবে। 
  • তারপর রুকু করে সোজা হয়ে দাড়ানো হলে এরপর বসে দুইবার সেজদা করবে।
  • এভাবেই দোয়ায় তাশাহুদ, দরূদ শরীফ, দোয়ায় মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে দুই রাকাত নামাজ শেষ করতে হবে। 
  • মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। তাহাজ্জুদ নামাজ ৪ রাকাত, ৮ রাকাত এবং ১২ রাকাতও চাইলে পড়া যায়।
তবে প্রত্যেকেই নিজ ইচ্ছানুযায়ী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে যত বেশি নামাজ হবে, তত বেশি সওয়াব।
তাহাজ্জুদ নামায দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত?

নিয়ত মনে মনে যার যার মাতৃভাষা অনুযায়ী করলেই হবে। তারপরও আপনারা যারা আরবিতে শিখতে চাচ্ছেন, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়তঃ

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر

বাংলা অর্থঃ দুই রাক নামাজের নিয়ত করছি। অতঃপর নিয়ম হলো ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বাংলা উচ্চারণ?

তাহাজ্জুদ নামাজ লম্বা ক্বারাতে পড়াই উত্তম। আর তাকবীরে তাহরিমা "আল্লাহু আকবার" বলা নিয়তের সাথেই সম্পর্কিত।
তারপর ছানা পড়ে সূরা ফাতেহা পাঠ করুন। সূরা ফাতিহা শেষে কুরআনের আয়াত মিলান অথবা কোরাত পড়ুন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদাায় করতেন। কেরাত শেষে অন্য নামাজের মতো রুকু-সিজদাহ আদায় করুন। দ্বিতীয় রাকাআত শেষে সালাম ফিরানোর পর তাশাহুদ, দুরূদ ও দুআ মাছুরা পড়ে তাহাজ্জুদ নামায শেষ করার এটাই পদ্ধতি।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও দোয়া?

তাহাজ্জুদ মূলত রাতের নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া আবশ্যক ছিল। 

ঐসময় প্রিয় নবী রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা প্রিয় রাসূলকে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া?

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ - رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ - رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ

প্রিয়নবি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য উঠে কুরআনের উক্ত আয়াতসহ সুরা আল-ইমরানের শেষ পর্যন্ত পড়তেন। উম্মতের জন্য যা পড়া সুন্নত। (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)।

উক্ত আয়াতের বাংলা শব্দে উচ্চারণ?

"রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাত্বিলান, সুবহানাকা ফাক্বিনা ‘আজাবান্নার। রাব্বানা ইন্নাকা মাং তুদখিলিন্নারা ফাক্বাদ্ আখঝাইতাহু, ওয়া মা লিজজ্বালিমিনা মিন্ আংছার। রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিআই ইউনাদি লিল ইমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্‌ফির আন্না সাইয়্যেআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার।"

এছাড়াও হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে যখন দাঁড়াতেন, তখন এই দোয়া পড়তেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ،وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ،وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ   

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল? উত্তর হলো তাহাজ্জুদ সালাত সুন্নত এই অর্থে যে রাসুল (সা.) তাহাজ্জুদ পড়েছেন। নবী (সা.)-এর যেকোনো প্রকার আমল আল্লাহর বান্দাগণ অনুসরণ করলে সেটা সুন্নাহ বলে বিবেচনা করা হয়। 

আবার অন্যদিকে ফরজ ছাড়া যতরকম ইবাদত রয়েছে তার সবই নফল ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া বাদবাকি যত সালাত আছে সব নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হয়। 

সুতরাং এ থেকে বোঝা গেল নফল সালাত হুকুমের মধ্যে আসেনি তবে সুন্নাহকে ওলামায়ে কেরামগণ হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হুকুম হলো বিধান। রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ প্রধানত দুই প্রকার। 

একটা হলো, সেই সুন্নাহ যার উপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আরেকটা হলো অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে যে সুন্নাহ প্রমাণিত হয়েছে। তাহাজ্জুদ এই দ্বিতীয় পর্যায়ের সালাত। 

তাহাজ্জুদ সালাত নফল এই দিক থেকে, যেহেতু এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আর যেহেতু রাসুল (সা.) আদায় করেছেন সেদিক বিবেচনায় এটি সুন্নাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়?

তাহাজত নামাজ আদায়ের শ্রেষ্ঠ সময় হলো,  মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে।  মূলত তখন থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়, তারপর রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময় থাকে। 

সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাহাজ্জুদেরও ওয়াক্ত শেষ হয়। তবে কেউ চাইলে এশার নামাজের পর পরই তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ?

আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার

বাংলা অর্থঃ
আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত?

কোরআন হাদিস অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক। মহান আল্লাহ প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উদ্দেশে সূরা ইসরা এর ১৭ নং আয়াতে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। 

আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান মাকামে মাহমুদে। রাতের ইবাদত প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদের সূরা মুজাম্মিলে আল্লাহ বলেন, "হে কম্বলাবৃত! 

রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে, অর্ধরাত্রি অথবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা তার চেয়ে বেশি এবং কুরআন তেলাওয়াত করো তারতীল সহকারে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। 

নিশ্চয়ই এবাদতের জন্য রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিনের বেলা রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।"

ইসলামের খলিফা হযরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জুত পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন।’ আর রাসূল (সাঃ) তো বলেই দিয়েছেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুত।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, "আল্লাহ তাআলা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেছেন যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুত পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। 

আল্লাহ তাআলা সেই স্ত্রীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুত পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়।"

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়?

নির্দিষ্ট কোন সূরা দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার বিধান কোথাও নেই। আপনি যে সূরা গুলো ভালো পারেন সূরা ফাতিহার সাথে সেই সূরা মিলিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবেন। 

অতএব আপনি সুরা ফাতিহা পড়ার পর পবিত্র কোরআনের যেকোন সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত?

“নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।” 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মিজানুর রহমান আজহারী?

তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধার পর ছানা পড়া। তারপর সুরা ফাতেহা পড়া হলে অন্য সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুতে অনেক লম্বা ক্বেরাত পড়তেন। 

অতঃপর অন্যান্য নামাজের মতোই রুকু, সেজদা আদায় করা। আর এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পন্ন করা। এভাবে দুই-দুই রাকাআত করে মোট ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম। 

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত?

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (স.) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে যখন দাঁড়াতেন, তখন এই দোয়া পড়তেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ،
وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ،
وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
 (বুখারি)।

বাংলা অর্থঃ 

হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের নুর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। 

আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য। (পরকালে) আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার জান্নাত সত্য। আপনার জাহান্নাম সত্য। আপনার (প্রেরিত) নবিগণ সত্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, কেয়ামত সত্য।

হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার ওপর ঈমান আনলাম, আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম, আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ/অপরাধ ক্ষমা করুন। 

আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই'। আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ/অপরাধ ক্ষমা করুন। 

আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই'। (বুখারী শরীফ)।

তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত?

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত, কখনোবা ৮ রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাতও পড়েছিলেন। তবে রোজাদার ব্যক্তির তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত। তবে কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তাঁর তাহাজ্জুদ আদায় হবে। 

এ প্রসঙ্গে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।’

তাহাজ্জুদ নামাজের সিজদার দোয়া?


আরবি উচ্চারণঃ

‘আউজু বিরিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উকুবাতিকা, লা উহসি ছানাআন আলাইকা আনতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা।

বাংলা অর্থঃ

(হে আল্লাহ) আমি তোমার অখুশি থেকে তোমার খুশির আশ্রয় চাই, তোমার শাস্তি থেকে তোমার ক্ষমার আশ্রয় চাই, তোমার পূর্ণ প্রশংসা করা আমার সাধ্যাতীত, তুমি তেমন গুণেই গুণান্বিত যেভাবে তুমি নিজের গুণ উল্লেখ করেছ।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়?

রহমতের মাস হলো রমজান আর তাহাজ্জুদের সময় হলো রহমতের সময়। সারা বছরের বিশেষ রাতগুলো ছাড়াও প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের সময়ে মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটতম প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের ফরিয়াদ শোনেন। 

তাহাজ্জুদের আগে বা পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা উপকারী একটি আমল। এ সময় সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলপ্রসূও বটে। 

কুরআন হাদিস অনুযায়ী এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় আর রামাদানে তাহাজ্জুদ আদায় করা সহজতর।
Next Post Previous Post