রোজার কাফফারা কি | রোজার কাফফারা কিভাবে দিতে হয়

রমজান মাসে যারা অসুস্থ কিংবা পীড়িত, অতিশয় বৃদ্ধ, যাদের মূলত দৈহিক ভীষণ দুর্বলতার কারণে রোজা পালন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়। এছাড়াও যারা ভ্রমণে থাকার কারণে সিয়াম পালন করতে পারে না। 

রোজার কাফফারা
রোজার কাফফারা

তাদের জন্য মূলত রোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদয়া ইত্যাদি বদলা ব্যবস্থা স্থির করে ইসলামি শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। 

এটা (সিয়াম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য, এর পরিবর্তে ফিদয়া অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। 

যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ।(সুরা বাকারা : ১৮৪)।

রোজার কাজা কি?

শরিয়তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কোন কারণ ছাড়াই রোজা ভঙ্গ করলে অবশ্যই কাজা কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ঠিক ততটি রোজা আদায় করতে হবে। 

কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি। অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে একটি রোজার জন্য একটি রোজাই যথেষ্ট।

রোজার কাফফারা কিভাবে দিতে হয়?

কাফফারা আদায় করার জন্য তিনটি বিধান রয়েছে। যেমনঃ 
  • একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। 
  • কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোন একটি ভঙ্গ হলে, আবার তখন নতুন করে শুরু করতে হবে।
  • গোলাম বা দাসী মুক্ত করতে হবে।
  • যদি কারও পক্ষে ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয়। 
  • তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাবার দেবে। 
অপরদিকে কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন মিসকিন, ফকির, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খাবার খাওয়াতে হবে।

যেসব কারণে কাজা ওয়াজিব?

যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে, কিন্তু পরে তা কাজা করতে হয়। যেমনঃ
  • মুসাফির অবস্থায়
  • রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে
  • মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
  • এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে
  • শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে
  • কোন রোজাদারকে সাপে দংশন করলে নারীদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়

যেসব কারণে কাজা কাফফারা ওয়াজিব?

যেসব কারণে রোজার কাজা এবং কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয়। তা হচ্চে জেনে শুনে পানাহার ও স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। এমতাবস্থায় কাজা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয়ে যায়।

রোজার ফিদয়া?

যদি কারও পক্ষে রোজা রাখা দুঃসাধ্য হয়। তাহলে তখন সে একটা রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে অন্নদান করা কর্তব্য। শরিয়ত মোতাবেক রোজা পালনে অক্ষম কিংবা সামর্থ্যহীন হলে প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে সাদাকাতুল ফিতর এর সমপরিমাণ গম কিংবা তার মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ফিদয়া। 

তথা বিনিময় বা মুক্তিপণ। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুতর রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই অথবা রোজা রাখলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে তারা রোজার বদলে ফিদয়া আদায় করবে। 

পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি যদি সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো শক্তি এবং সাহস পায়, তাহলে তার আগের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তখন আগে আদায়কৃত ফিদয়া তার সদকা হিসেবে গণ্য হবে।

ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারীর ভয়ানক পরিণতি?

যারা নানান অজুহাতে এবং স্বেচ্ছায় পুরো মাহে রমজানের রোজা রাখে না, তাদের শাস্তি কত যে কঠিন হবে, তা বলে বুঝানো যাবে না। 

ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারীদের ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের এক দিনে রোজা কোন ওজর বা অসুস্থতা ব্যতীত ভঙ্গ করবে, সারা জীবনের রোজাও এর ক্ষতিপূরণ হবে না, যদি সে সারা জীবনও রোজা রাখে। (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ)।

ফিদয়া আদায় না করে মারা গেলে?

অসুস্থ ব্যক্তি ফিদয়া কিংবা মুক্তিপণ আদায় না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদয়া আদায় করা কর্তব্য, যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে যায়। অন্যথায় আদায় করা মুস্তাহাব।

ফিদয়ার পরিমাণ?

প্রতিটি রোজার ফিদয়া হচ্ছে একটি সদকাতুল ফিতর। অর্থাৎ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা বা তার সমমূল্য ৬৫ টাকা দরিদ্র এতিম কিংবা মিসকিনকে দান করা অথবা একজন ফকির কিংবা গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো।

বদলি রোজার বিধান?

অনেক জায়গায় দেখা যায়, গরিব লোক কোন ধনীর বদলি রোজা পালন করে দিচ্ছে। কোন অবস্থাতেই একজনের রোজা অন্য আরেকজন বদলি হিসেবে পালন করতে পারবে না। 

যদি কেউ কারও রোজা বদলি হিসেবে রাখে। তাহলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ হবে না। রোজার ফিদয়া গোনাহ মাফের মাধ্যমে মানুষকে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে।

সতর্কতা

কোন কারণ ছাড়াই কোন ব্যক্তি একটি রোজা না রাখে এবং পরে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে, তবু সে ততটুকু সওয়াব পাবে না, যতটুকু মাহে রমজানে ওই একটি রোজা পালনের কারণে পেত। 

এই সম্পর্কে ফিকহবিদদের মতে, ২ মাস একাধারে রোজা রাখলে স্বেচ্ছায় ভাঙা ১ রোজার কাফফারা আদায় হয়। এ কাফফারার বিনিময়ে একটি রোজার ফরজের দায়িত্বটাই কেবল আদায় হয়।

Next Post Previous Post
banner