রোজা না রাখার শাস্তি | roja na rakh kar shasti
রোজা হল আমাদের ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতের ওপরও এই রোজা ফরজ ছিল। রোজার সুফল হচ্ছে এর মাধ্যমে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি লাভ হয়।
![]() |
রমজান |
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)।
রোজা না রাখার শাস্তি?
পবিত্র রমজানে রোজা না রাখার যেসব শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে তিনটি ভয়াবহ দিক হলঃ১. মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সংশয়
ইমাম জাহাবি (রহ.) মুমিনদের কাছে এ কথা প্রমাণিত, যে ব্যক্তি কোন অসুস্থতা ও শরিয়ত অনুমোদিত কোন কারণ ছাড়া রোজা ছেড়ে দেয় সে মদ্যপ ও ব্যভিচারকারীর চেয়েও নিকৃষ্ট;বরং তারা তার ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ করে এবং তাকে জিন্দিক তথা ধর্মদ্রোহী বলে সন্দেহ করে। (আল-কাবায়ির, পৃষ্ঠা ৬৪)।
২. কুফরিসদৃশ কাজ
শরিয়ত অনুমোদিত কোন কারণ ছাড়াই যারা রমজানের রোজা ত্যাগ করে তারা কুফরিসদৃশ কাজ করে থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসলামের হাতল ও দ্বিনের মূল বিষয় হল তিনটি।যার ওপর ইসলামের ভিত্তি। যে ব্যক্তি তার একটি ত্যাগ করল, সে এমন অবিশ্বাসীতে পরিণত হল, যার রক্তপাত বৈধ। সেগুলো হল, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই বলে সাক্ষ্য দেওয়া, ফরজ নামাজ ও রমজানের রোজা। (মাজমাউল জাওয়াইদ : ১/৪৮)।
৩. জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তি
আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুজন মানুষ এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন।
আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারে শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের চিৎকার। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল যাদের পায়ের টাকনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ইফতার করত। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭৪৯১)।
রোজা ভাঙার প্রতিবিধান
প্রকৃতপক্ষে ফরজ আমল সময়মতো পালন না করার কোন পরিপূর্ণ প্রতিবিধান নেই। কেননা ব্যক্তি সময়মতো ইবাদত না করলে যে ফজিলত এবং মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয় তা কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। হাদিসে এমনটিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও রোগ ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙে ফেলল, তার সারা জীবনের রোজা দ্বারাও এ কাজা আদায় হবে না, যদিও সে সারা জীবন রোজা পালন করে।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)।
তবে ফকিহ আলেমরা বলেন, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ত্যাগ করে তবু তার প্রতিবিধান রয়েছে। এই প্রতিবিধান তাঁর পাপমুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তারা বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি রমজানের যত রোজা ছুটে গেছে তার জন্য তাওবা করবে।
এবং এর জন্য আনুমানিক হিসাব করে তার কাজা আদায় করতে হবে। কাজা লাগাতার করা আবশ্যক নয়। বার্ধক্য কিংবা কোন কারণে কাজা না করতে পারলে ফিদিয়া দেবে। স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃত যত রোজা রেখে নষ্ট করা হয়েছে প্রত্যেক রোজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ৬০টি করে রোজা কাফফারা হিসেবে রাখতে হবে।
রোজা রাখার সামর্থ্য না থাকলে প্রত্যেক রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ কাফফারা দেবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২০৫, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/৪৬৪)।
রোজা রাখার পুরস্কার
বিপরীতে কোন ব্যক্তি যদি নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা পালন করে থাকে, তার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ঘোষণা হল, যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী পাপ ক্ষমা করা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)।রোজা ইসলামের স্তম্ভ
আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজাকে ইসলামের স্তম্ভ ঘোষণা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে,সাক্ষ্য দেওয়া আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল; নামাজ কায়েম করা; জাকাত আদায় করা; আল্লাহর ঘরের হজ করা এবং রমজানের রোজা রাখা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮)।
রোজা ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ
শরিয়ত অনুমোদিত কোন কারণ ছাড়া রোজা ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। কেননা আল্লাহর নির্দেশ হল, রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)।
সুতরাং যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কোন কারণ ছাড়া রোজা ত্যাগ করল সে ইসলামের রোকন ও ফরজ বিধান ত্যাগ করল। এবং সে কবিরা গুনাহ করল। একটি কবিরা গুনাহই মানুষ জাহান্নামি হওয়ার জন্য যথেষ্ট।