রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রমজান মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে রোজা। রোজার ফজিলত মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রোজা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় একটি ইবাদত। রোজার প্রতিদান তিনি নিজ হাতেই দেবেন।
![]() |
মাহে রমজান |
রোজার ফজিলত মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে রোজার ফজিলত সম্পর্কিত ৮টি হাদিস তুলে ধরা হলঃ
১. হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন ওই প্রবেশদ্বার দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে।
তারা ছাড়া আর কেউই ও দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, কোথায় রোজাদারগণ? সুতরাং তারা ওই দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে।
এর পর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করা হবে। ফলে তা দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।(বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬)
২. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য রোজা ব্যতীত।
কারণ, রোজা আমার জন্যই এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব। (মহানবী সা. আরও বলেন) ‘রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।
যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধের চেয়েও সুগন্ধময়।
রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশির মুহূর্ত আছে, যা তাকে আনন্দিত করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার পালনকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)।
৩. হজরত আবু সাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে বান্দা আল্লাহর পথে একদিন মাত্র রোজা রাখবে, সেই বান্দাকে আল্লাহ বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন। (বুখারি, হাদিস: ২৮৪০)।
৪. হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.) কে বলতে শুনেছি, মানুষের পরিবার, ধন সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফেতনা ও গুনাহর কাফফারা হল নামাজ, রোজা ও সদকা। (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৫)।
৫. হজরত উসমান বিন আবুল আস থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ। যেমন যুদ্ধের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের ঢাল থাকে। (মুসনাদে আহমাদ, সহিহুল জামিউস সাগির, হাদিস: ৩৮৭৯)।
৬. হজরত হুজায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সেও জান্নাত প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭২)।
৭. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম।
সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। মহানবী (সা.) আরও বলেন, অতএব উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে। (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ তারগিব, হাদিস: ৯৬৯)।
৮. হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন কোন আমলের আজ্ঞা করুন। যার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। (অন্য এক বর্ণনায় আছে, যার মাধ্যমে আমি জান্নাত যেতে পারব’) তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো।
কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই। পুনরায় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন। তিনি পুনরায় একই কথা বললেন, তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।(নাসায়ি, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭৩)