রোজা ভঙ্গের কারণ | কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়
মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস হচ্ছে এই রমজান। তাই এই রমজান মাসে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির আজকার করা সকল মুসলিম উম্মাদের উচিত।
![]() |
রোজা ভঙ্গের কারণ |
রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস হচ্ছে এই পবিত্র রমজান মাস। পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহর উচিৎ সঠিকভাবে রোজা পালন করা, এতে আমাদের বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ হবে।
সেই সঙ্গে সঠিকভাবে ইসলামিক বিধান মোতাবেক রোজা পালন করার জন্য যে সকল বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে। সেসব বিষয় গুলো নিয়ে আজকের আমাদের এই আর্টিকেল।
আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনি মনযোগ সহকারে পড়লে ইনশাআল্লাহ রোজা ভাঙ্গার কারণ গুলো বুঝতে পারবেন। আমরা অনেকেই জানি না যে, কী কী কারণে রোজা ভেঙে যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায়।
তাই যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় অথবা নষ্ট হয়। সেসব কারণগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
১. কোন রোজাদার যদি ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বেহুশ থাকে, তবে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। বরং তাকে ওই দিনের রোজা পরে কাজা করতে হবে।
২. ইচ্ছাকৃত বমি করা অথবা মুখে বমি চলে আসার পর তা পরিমাণে অল্প হলেও ইচ্ছা করে গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (সূত্র: সহীহ মুসলিম এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)।
৩. মুখে পান বা অন্য কোন খাবার রেখে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে ওঠে কেউ যদি দেখে যে, সুবহে সাদেক হয়ে গেছে আর সেই পান অথবা খাবারের কিছু অংশ পেটে চলে যায়।
তবে তার রোজা হবে না। পরে কাজা রোজা করতে হবে। তবে এ কারণে রোজা ভেঙে যাওয়ায় কাফফারা দিতে হবে না। (সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী -যাকারিয়া)।
৪. ওজু করার সময় বা যে কোন কারণে কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি গলা দিয়ে পেটে চলে যায়, ওই ব্যক্তির রোজা হবে না। এ রোজা পরে কাজা করতে হবে।
আর কুলি করার সময় যদি রোজার কথা স্মরণই না থাকে এবং পানি মুখে নিয়ে খেয়ে ফেলে তবে রোজা ভাঙবে না।' (সূত্র: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)।
৫. রোজাদার যদি খাবারের বিকল্প উপায় হিসেবে রক্ত গ্রহণ। শক্তিবর্ধক স্যালাইন গ্রহণ, এমন ইঞ্জেকশন যা আহারের কাজ করে অর্থাৎ গ্লুকোজ ইনজেকশন ইত্যাদি গ্রহণ করে তবে রোজা ভেঙে যাবে।
৬. নাক ও কানে তেল দেওয়ার দ্বারাও রোজা ভেঙে যাবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না।' (সূত্র: ফতোয়ায়ে হেদায়া)।
৭. পাথরের কণা, মাটি, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি অর্থাৎ সাধারণত যা আহারযোগ্য নয় কিংবা যেসব খাবার মানুষের কোন উপকারে আসে না তা খেলেও রোজা ভেঙে যাবে। আর এ রোজা পরে কাজা করতে হবে। (সূত্র: ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়া)।
৮. দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে এ সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রোজা ভেঙে যাবে। এই অবস্থায় রোজা ভঙ্গের ৫ পরিণাম কবিরা গুনাহ হবে ফলে তাদের তাওবা করতে হবে।
রোজা বাতিল হয়ে যাবে, তাদের উভয়কে ওই দিনের অবশিষ্ট অংশ খাবার ও পাণীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ওই দিনের রোজা (রমজানের পরে) কাজা করতে হবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।
আর কাফ্ফারা হল একাধারে দুই মাস রোজা রাখা অথবা একজন গোলাম আজাদ করা কিংবা ৬০ জন মিসকিনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো।
৯. যদি কোন ব্যক্তি কারো ধমকের (ভয়ে) কারণে কিংবা রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়ে কোন কিছু খেয়ে ফেলার পর (না জানার কারণে) রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত খাবার খেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। পরে এ রোজা কাজা করা জরুরি। (সূত্র:মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)।
১০. সহবাস ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনস্বাদ নেওয়ার জন্য বীর্যপাত ঘটালেও রোজা ভেঙে যাবে। এমনকি যদি কোন রোজাদার যৌনস্বাদ নেওয়ার জন্য স্পর্শকাতর কোন যুবতী যৌবনা নারী সংস্পর্শে আসে।
তাকে চুম্বন করে জড়িয়ে ধরে অথবা হস্তমৈথুন করে ইত্যাদির মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটায় তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। (সবার জানা উচিত যে, এই কর্মগুলো যেমনিভাবে রোজার মাসে হারাম তেমনিভাবে অন্য সময়গুলোতেও হারাম।)
১১. উপকারি কিংবা অপকারি, কম কিংবা বেশি, হালাল কিংবা হারাম খাবার। যা-ই হোক তা দিনের বেলায় নাক-মুখ দিয়ে গ্রহণ করলেও রোজা ভেঙে যাবে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর পানাহার কর; যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কারভাবে দেখা যায়।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)।
১২. অসুস্থতার কারণে ইনহেলার (Inhelar) ব্যবহার করলেও রোজা ভেঙে যায়। (সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী -যাকারিয়া)।
১৩. রোজার নিয়তে গরমিল হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। নিয়ত প্রত্যেক ইবাদত তথা রোজার অন্যতম রোকন। আর সারাদিন সে নিয়ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনে জাগ্রত রাখতে হবে যে, আমি রোজাদার।
যাতে রোজাদারের নিয়তে রাখা না রাখার বা রোজা বাতিল করার কোন দৃঢ় সংকল্প না করে বসে।
১৪. কোন রোজাদার নারীর যদি ইফতারের আগ মুহূর্তেও হায়েজ (মাসিক) ও নেফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ) হয়, তবে রোজা ভেঙে যাবে।
১৫. রোজাদার ব্যক্তির শরীর বা দেহ থেকে দুষিত রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হবে কি হবে না- তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে মূল কথা হল দিনের বেলায় রোজা থাকা অবস্থায় কোন রোজাদারের জন্যই এ কাজ না করা উত্তম।
১৬. কোন কারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে মুখে চলে আসলে রোজা ভেঙে যাবে। ( সূত্র: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)।
১৭. কোন রোজাদার যদি তার কোন কথা, কাজের কারণে মুরতাদ বা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় (কাফের হয়ে যায়), তবে ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে।
অতঃপর সে যদি তাওবা করে পুনরায় মুসলিম হয়, তাহলে এ রোজা রমজানের পরে কাজা করতে হবে।
১৮. রোজা না রাখার নিয়ত করলে এবং নিয়ত বাতিল করে দিয়ে সারাদিন খাবার না খেয়ে উপবাস করলেও রোজা বাতিল বলে গণ্য হবে। সুতরাং রোজা রাখার জন্য নিয়ত আবশ্যক।
এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে নির্দেশ করেছেন আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৫)।