হযরত আলী রা এর জীবনী
হযরত আলি (রা.) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ৷ তিনি ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর চাচা আবু তালিবের পুত্র ছিলেন৷ তাঁর ডাকনাম ছিল আবু তোরাব ও আবুল হাসান৷ বাল্যকাল থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সাথে থাকতেন৷
![]() |
হযরত আলী রা এর জীবনী |
মহানবি (স.) এর প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল৷ তাই দশ বছর বয়সেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন৷ বালকদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবি৷ মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) হিজরত করে মদিনা যাওয়ার সময় হযরত আলি (রা.) কে আমানতের মালের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর বিছানায় রেখে যান৷
জীবনের কঠিন ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন৷ মহানবি (স.) এর দেওয়া দায়িত্বের চেয়ে তিনি তাঁর জীবনের মূল্য তুচ্ছ মনে করেছেন৷ দায়িত্ব পালনই ছিল তাঁর কাছে বড় ব্যাপার৷ হযরত আলি (রা.) এর মতো সত্যের পথে জীবনবাজি রাখা যুবক খুব কম আছে৷ আমরাও সত্যের পথে একনিষ্ঠ থাকব এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করব৷
বীরত্ব
হযরত আলি (রা.) ছিলেন শৌর্য বীর্য ও অসাধারণ শক্তির অধিকার৷ তাঁর নাম শুনলে কাফিরদের মনে ত্রাস সৃষ্টি হতো৷ বদর যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য রাসুল (স.) তাঁকে যুলফিকার তরবারি উপহার দেন৷খায়বারে কামুস দুর্গ জয় করলে হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁকে আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) উপাধি প্রদান করেন৷ হুদায়বিয়া সন্ধিপথ তিনি নিজ হাতে লিখেছিলেন৷ মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর পতাকা তাঁর হাতে ছিল৷
জ্ঞান সাধনা
হযরত আলি (রা.) অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন৷ ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞান তাপস ও জ্ঞান সাধক৷ তিনি সর্বদা জ্ঞানচর্চা করতেন৷ হাদিস তাফসির আরবি সাহিত্য ও আরবি ব্যাকরণে তিনি তাঁর যুগের সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন৷কথিত আছে যে হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন জ্ঞানের শহর আর আলি হলেন তার দরজা৷ তাঁর রচিত দিওয়ানে আলি নামক কাব্য গ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ৷ আমরাও সর্বদা হযরত আলি (রা.) এর মতো জ্ঞান সাধনা করব৷
অনাড়ম্বর জীবনযাপন
হযরত আলি (রা.) সারা জীবন জ্ঞান সাধনায় ব্যস্ত থাকায় সম্পদ উপার্জন করার সময় পাননি৷ তিনি অনাড়ম্বর ও সহজ সরল জীবনযাপন করতেন৷ নিজ হাতে কাজ করে উপার্জন করতেন৷ কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতেন৷ কখনো না খেয়ে থাকতেন৷ তবুও আক্ষেপ করতেন না৷বাসায় কোন কাজের লোক ছিল না৷ তাঁর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (স.) এর আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.) নিজ হাতে জাঁতা পিষে গম গুঁড়ো করতেন ও রুটি তৈরি করতেন৷ মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার তিনি বাসায় কোন কাজের লোক রাখেননি৷
ইসলামের সেবা
তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় ধন সম্পদ দিয়ে ইসলামের উল্লেখযোগ্য সেবা করতে পারেননি৷ তবে তাঁর শৌর্য বীর্য সাহসিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামের অনেক সেবা করেছেন৷সাহসিকতা বীরত্ব জ্ঞানচর্চা আত্মসংযম ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে হযরত আলি (রা.) আমাদের সকলের আদর্শ৷ তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে আমরা অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হব৷