ইমাম আবু হানিফা জীবনী
ফিকাহ শাস্ত্রের জনক ইমাম আবু হানিফা (র) ৮০ হিজরি ৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর নাম নুমান উপনাম আবু হানিফা৷
![]() |
ইমাম আবু হানিফা জীবনী |
তাঁর উপাধি হল ইমাম আযম (বড় ইমাম)৷ পিতার নাম সাবিত৷ তিনি একজন তবেঈ ছিলেন৷
জ্ঞান সাধনা
ইমাম আবু হানিফা (র) ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী৷ প্রাথমিক জীবনে তিনি ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে চাইলেন৷ কিন্তু কুফা নগরীতে তৎকালীন আলেম উলামার পরামর্শক্রমে তিনি জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন৷ সতের বছর বয়স থেকে জ্ঞান সাধনা আরম্ভ করলেও তিনি অতি অল্প দিনের মধ্যে হাদিস তাফসির ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন৷তিনি তাঁর শিক্ষক হযরত হাম্মাদ (র.) এর নিকট একাধারে দশ বছর ফিকাহ বিষয়ের জ্ঞানার্জন করেন৷ এতে বোঝা যায় জ্ঞানার্জনের নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই৷ কাঠিন সাধনা থাকলে যে কোন সময় জ্ঞানার্জন করা সম্ভব৷
ফিকাহশাস্ত্রে অবহান
তিনি ফিকাহশাস্ত্রের উদ্ভাবক ছিলেন৷ তিনি তাঁর চল্লিশজন ছাত্রের সমন্বয়ে ফিকাহ সম্পাদনা বোর্ড গঠন করেন৷ এই বোর্ড দীর্ঘ বাইশ বছর কঠোর সাধনা করে ফিকাহকে একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্র হিসেবে রূপ দান করেন৷ পরবর্তীতে তিনি বোর্ডের চল্লিশজন সদস্য হতে দশজনকে নিয়ে একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করেন৷ফিকাহশাস্ত্র প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে এই বোর্ডের অবদান সবচেয়ে বেশি৷ কোন মাসআলা (সমস্যা) এলেই এই বোর্ড তা নিয়ে গবেষণা করত এবং কুরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণা করে ফতোয়া (সমাধান) দিত৷ এভাবে কুতুবে হানাফিয়্যাতে (হানাফি মাযহাবের কিতাবসমূহ) ৮৩ হাজার মাসআলা ও সমাধান লিপিবদ্ধ করা হয়৷
তিনি হাসাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা৷ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে কঠিন বস্তুও যে সহজ করা যায় ইমাম আবু হানিফার ফিকাহ বোর্ড এর প্রমাণ৷
হাদিসশাস্ত্রে অবদান
ফিকাহশাস্ত্রে সর্বাধিক অবদান থাকার কারণে হাদিস শাস্ত্রে তাঁর অবদান তুলনামূলকভাবে কম মনে হয়৷ হাদিস শাস্ত্রে তিনি মুসনাদে ইমাম আবু হানিফা নামে একটি গ্রন্থ সংকলন করেন যাতে ৫০০ হাদিস রয়েছে৷ইমাম আবু হানিফা এর গুণাবলি গুলো কি কি?
ইমাম আযম আবু হানিফা (র.) গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন৷ তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম আবিদ ও বুদ্ধিমান৷ ইমাম আবু হানিফা (র.) এর ছাত্র ইয়াযিদ ইবনে হারুন বলেন আমি হাজার হাজার জ্ঞানী দেখেছি তাঁদের বক্তব্য শুনেছি৷ তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মতো জ্ঞানী খোদাভীরু ও ইলমে ফিকাহ এ পারদর্শী কাউকে দেখিনি৷তাঁদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (র.) হচ্ছেন অন্যতম৷ ইমাম শাফেয়ি (র.) বলেছেন মানুষ ফিকাহশাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা (র.) এর মুখাপেক্ষী৷ ইমাম বুখারির প্রিয় শিক্ষক হযরত মক্কি ইবনে ইবরাহিম বলেন ইমাম আবু হানিফা তাঁর কথা ও কাজে সত্যনিষ্ঠ ছিলেন৷
তিনি এত বেশি ইবাদত করতেন যা চিন্তা করাও কঠিন৷ তিনি একাধারে ত্রিশ বছর রোযা রেখেছেন৷ চল্লিশ বছর যাবৎ রাতে ঘুমাননি৷ তিনি প্রতি রমযানে ৬১ বার কুরআন মজিদ খতম করতেন৷ তিনি মোট ৫৫ বার হজ করেন৷
তিনি এতই আল্লাহভীরু যে কুফায় ছাগল চুরির কথা শুনার পর তিনি সাত বছর যাবৎ বাজার থেকে ছাগলের গোশত ক্রয় করেননি এ ভয়ে যে এটি চুরিকৃত ঐ ছাগলের গোশত হতে পারে৷ তিনি বিনা পয়সায় জ্ঞান বিতরণ করতেন৷ কাপড় ব্যবসা করে জীবনযাপন করতেন৷ একাদা কুফায় তিনি এক লোকের জানাযা পড়তে গেলেন৷ মাঠে প্রচন্ড রোদ৷
সকলে বলল দয়া করে আপনি ঐ বৃক্ষের ছায়াতলে দাঁড়ান৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন বৃক্ষটি কার৷ বলা হল এটি আপনার অমুক ছাত্রের বাবার৷ তিনি বললেন আমি ঐ বৃক্ষের ছায়ায় যাব না৷ কেননা ঐ ছাত্র মনে করতে পারে যে আমি তাকে শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে তার বাবার বৃক্ষের ছায়াতলে দাঁড়িয়েছি৷ আদর্শ শিক্ষকের এক মহান দৃষ্টান্ত।
বিচারকের দায়িত্ব পালনে অনীহা
তৎকালীন বাগদাদের খলিফা আল মানসুর ইমাম আবু হানিফা (র.) কে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করেননি৷ ফলে তাঁকে জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা হয়৷ বলা হয় যে এই মহান মনীষী ১৫০ হিজরি ৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে খলিফার নির্দেশে প্রয়োগকৃত বিষক্রিয়ার প্রভাবে ইন্তিকাল করেন৷সরকার কর্তৃক দেওয়া সুযোগ সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে ইমাম আবু হানিফা নৈতিক ও দীনি ইলমের মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন৷ আমরাও জ্ঞানচর্চায় ও নৈতিক মূল্যবোধ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকব৷