ডিম আগে না মুরগি আগে ইসলাম কি বলে

বহুল বিতর্কিত একটি প্রশ্ন হল ডিম আগে না মুরগি আগে? এর সঠিক উত্তর আসলে কারো জানা নেই। বিতর্কটা মূলত ডিম আর মুরগির আবির্ভাব নিয়ে যে ডিম আগে নাকি মুরগি আগে। এই ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বহু বিজ্ঞানীরা হিমশিম খেয়েছেন। যথাযথ যুক্তি দিয়ে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর বের করা কার্যত অসম্ভব। আপনাদের কি সেই হ্যারি পটারের ডাইনি লুনা লাভ গার্ডের কথা মনে আছে? 

তিনি বলেই দিয়েছিল যে একটি বৃত্তের কোনও শুরুই আসলে থাকে না। এর কারণে পক্ষে বিপক্ষে বিজ্ঞানীদের চলে নানান ধরনের মতবাদ। সেই মতবাদে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী তাদের ব্যাখ্যায় বলে আসছিলেন ডিম এই আগে এসেছে। তবে সাম্প্রতিকালে বিজ্ঞানীদের নতুন এক ব্যাখ্যায় মুরগি কে রাখছে। আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনেও এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে। 
ডিম
ডিম

সম্প্রতি গবেষণায় পাওয়া বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ব্যাখ্যাও একই ধরনের উত্তর পাওয়া গেছে। উভয়ই ব্যাখ্যায় এটা স্পষ্ট যে মুরগিই আগে ডিম পরে। ডিম আগে না মুরগি আগে, এই নিয়ে খ্রিষ্টপূর্ব থেকে বহু দার্শনিক আর গবেষকদের Apple of Discord হয়ে আছে এই কথা। এই রকমের উভয়সংকট প্রশ্নগুলোকে Casualty dilemma বলা হয়। তবে এই টাইপের প্রশ্নগুলো কিছুটা মজার। ১৮২৫ সালে দার্শনিকদের জীবনী নিয়ে লেখা বই Francois Fenelon এ এরিস্টটল অংশে আছেঃ 

“If there has been a first man he must have been born without father or mother. which is repugnant to nature. For there could not have been a first egg to give a beginning to birds, or there should have been a first bird which gave a beginning to eggs; for a bird comes from an egg.”

এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে এরিস্টটল আরও আমাদের কনফিউশন বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এর কারণও রয়েছে প্রথমত তাদের ইভল্যুশনারি বায়োলজি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। বিজ্ঞানী ল্যামার্ক এ ধরনের কিছু ধারণা দেয়ার পরে থেকে মানুষ ধীরে ধীরে কিছু ব্যাখ্যা করা শিখলো।

স্টিফেন হকিং বলতেন তিনি ডিমের পক্ষে। গবেষক রিচার্ড ডকিংস বলেনঃ “The chicken is only an egg’s way of making another egg.” এটা বলেও কিছু সমাধান হল না।
সদ্য প্রকাশিত ব্যাখ্যায় গবেষকরা বলেন মানুষের প্রাপ্ত প্রাচীনতম ডিম ১৯ কোটি বছর আগের যা প্রাপ্ত উড্ডয়ন অক্ষম প্রাচীনতম পাখি আর্কিওপ্টেরিক্সের আরও বেশ কয়েক কোটি বছর আগের। 

এর মানে দাঁড়াচ্ছে পাখির কোন জাতি আসার আগেই অন্য সরীসৃপ প্রজাতিরা ডিম পাড়ত। হতে পারে যে এমন কোন ডিমের ভেতরে ডিএনএতে মিউটেশন হয়েছিল। যার ফলে সরীসৃপ প্রজাতিতে ভিন্নতা এসে সেটা ধীরে ধীরে পাখিতে রূপান্তরিত হয় কোটি বছর ধরে। 

এই ধারণাটি পৃথিবীর অধিকাংশ বিজ্ঞানী গ্রহণ করে। এর ফলে একটা সমাধানে এসে দাঁড়ায় এই ডায়ালেমা। এদিকে আবার এনপিআর নামক এক মার্কিন ওয়েবসাইট দাবি করেছে মুরগি নয় ডিম-ই আগে এসেছে। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট ক্রুলউইচ এই জটিল প্রক্রিয়ার সমাধান করতে গিয়ে বহু জাগন্ত রাত কাটিয়েছেন। তবে শেষে তিনি এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে পৃথিবীর শুরুর দিকে পৃথিবীতে বাস ছিল মুরগি সদৃশ এক পাখির। প্রাগৌতিহাসিক সেই পাখি জিনগতভাবেই অনেকটা মুরগিদের মতো ছিল। তবে নাকি তা পুরো মাত্রায় মুরগি ছিল না। আমেরিকান এস্ট্রো ফিজিসিস্ট ডি গ্রাসি টাইসন এ বিষয়টি পরিষ্কার বলে দেয় যে, Which came first, the chicken or the egg? The egg laid by a bird - that was not a chicken. 

ধারণা করা হচ্ছে যে মুরগি আগে ‘প্রোটো-চিকেন’ নামের এক পাখি ছিল সেটা নাকি প্রোটো এগ নামক ডিম পারত। এরপর এটা থেকে মিউটেশন হয়ে একদিন এর প্রোটো এগ ফেটে মুরগি বের হল যে চিকেন ডিম পাড়তে লাগল। মুরগির সেই প্রাচীনতম পূর্বসূরী এক ডিম পেড়েছিল। 

পুরুষ সঙ্গী সেই ডিমে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করেন। এর ঠিক পরে বেশ কিছু মিউটেশনগত পরিবর্তন ঘটে। যা তখনকার সেই পুরুষ অথবা মহিলা মুরগির জিন থেকে বেশ কিছুটা ভিন্ন ছিল। নতুন প্রজাতির সেই উৎপন্ন পাখিই হচ্ছে আজকের মুরগির আদি পূর্ব পুরুষ। 

এরপরে কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মিউটেশনগত রদবদল অনেকবার ঘটে। প্রথম যে মুরগি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মুরগির সঙ্গে হয়তো আজকের এই মুরগির প্রচুর অমিল রয়েছে। মিউটেশনটি ডিমের মধ্যে ঘটে যাওয়ার কারণে সেই আদি মুরগিটির উৎপত্তি হয়েছিল। 

তার মানে হল ডিমটির আগে কোনও মুরগিও ছিল না। অর্থাৎ পুরো ঘটনাটি সার সংক্ষেপে বলতে হলে, প্রাগৌতিহাসিক মুরগি সদৃশ এক পাখি ভিন্নধর্মী এক ডিম পাড়ার ফলে উদ্ভব ঘটে আদিতম মুরগির। তাই মুরগির আগেই ডিম এসেছে। তাই ডিম-ই আগে আর মুরগি পরে আসে।

ইরান ভিত্তিক একজন ধর্মীয় নেতা বলছেন যে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৫১ নম্বর সূরা আল যারিয়াতের ৪৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমি প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। এতে প্রমাণিত হয় যে আগে বীজ নয়, প্রাণীকে অর্থাৎ মুরগিকেই আগে পাঠানো হয়েছে।

ভারত ভিত্তিক দেওবন্দ মাদ্রাসার একজন মুফতি বলেছেন, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)। তাকে আল্লাহ পাক পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি করছেন ও যুবক বয়স দান করছেন। তার সন্তান হচ্ছি আমরা সবাই, এজন্যই আমাদের বলা হয় আদম সন্তান। আর এখন সেই সূত্রে প্রমাণিত হয় যে মানুষের মতো সকল জীবের জন্ম মানুষ সৃষ্টির মতই। 

আদমের (আ.) মাধ্যমে যেমন আমরা ঠিক তেমন মুরগি থেকেই ডিম ও পরে মুরগির জল্ম। এরকম সব প্রাণী তার পূর্ররূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি ডিম নয়, মুরগি আগে। তবে ২০১০ সালে এক বৃটিশ বিজ্ঞানী একটি সুপার কম্পিউটারকে নিযুক্ত করলেন এই চিন্তার জন্য যে। 

সুপার কম্পিউটার ও বিজ্ঞানীরা মিলিতভাবে মুরগির জরায়ুতে এক স্পেশাল প্রোটিন পেল ওভোক্লেডিডিন-১৭ নামে। দেখা যাচ্ছে এই প্রোটিন ক্যালসিয়ামকে ক্যালসাইটিন ক্রিস্টাল বানিয়ে ডিমের খোলস বানাচ্ছে। কুসুমের বৃদ্ধি ও নতুন মুরগির জন্ম হতে এই খোসা এবং ফ্লুইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী শেফিল্ড এবং ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ডিমের গঠন প্রক্রিয়ার ওপর সুপার কম্পিউটার জুম করেন। পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে ডিমের গঠনের জন্য ওসি-১৭ প্রোটিনের প্রয়োজন আবশ্যক। এই প্রোটিনের ক্যালসিয়াম কার্বোনেটকে ক্যালসাইট ক্রিস্টালে পরিণত করে যা ডিমের শক্ত খোসার গঠন তৈরি করে। 

অনেক প্রাণীর শরীরের হাড়ের মধ্যেও ক্যালসাইট ক্রিস্টাল পাওয়া যায়। কিন্তু মুরগির শরীর যেকোনও প্রাণীর থেকে এই ক্রিস্টাল বেশি তাড়াতাড়ি তৈরি করে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ছয় গ্রাম করে ক্যালসাইট ক্রিস্টাল তৈরি হয় মুরগির শরীরে। 

শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিয়ারিং মেটিরিয়াল বিভাগের ড. কলিন ফ্রিম্যান জানিয়েছেন যে, অনেকদিন ধরেই মনে করা হতো ডিম মুরগির আগে এসেছে। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে মুরগি ডিমের আগে এসেছে।
Next Post Previous Post
banner