শিক্ষা ও নৈতিকতা কি?
শিক্ষা কি?
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাহীন জাতি মেরুদণ্ডহীন প্রাণীর মতো৷ সঞ্চিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে নিজের জীবনে সফলভাবে প্রয়োগ করাকেই শিক্ষা বলে৷ এই শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্যে করে এবং মানব হৃদয়কে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে৷ শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি মানুষের শরীর মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশসাধন৷![]() |
শিক্ষা ও নৈতিকতা |
এখানে শিক্ষা বলতে বিশেষভাবে ইসলামি শিক্ষাকেই বোঝানো হয়েছে৷ আর যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণরূপে তুলে ধরা হয়েছে তাকে ইসলামি শিক্ষা বলে৷ এককথায় কুরআন ও হাদিসের আলোকে সমন্বিত শিক্ষাই হল ইসলামি শিক্ষা৷ এ শিক্ষার মাধ্যম একজন ব্যক্তি সৎ চরিত্রবান খোদকভীরু দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল ও ইসলাম শিক্ষার মূল উৎস হল দুটিঃ
- আল কুরআন
- আল হাদিস
আল কুরআন
এই কুরআনে মানবজাতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুই মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন৷ মহান আল্লাহ বলেনঃمَافَرَّطْنَا فِى الْكِتٰبِ مِنْ شَىْءٍ
অর্থঃকিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি৷ (সূরা আল আনআম আয়াত ৩৮)।
অন্যত্র আল্লাহ আরও বলেনঃ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتٰبَ تِنْيَا ناًلِكُلِّ شَىْءٍ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتٰبَ تِنْيَا ناًلِكُلِّ شَىْءٍ
অর্থঃ আমি সকল বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে আপনার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করছি৷ (সূরা আন্ নাহল আয়াত ৮৯)।
আল হাদিস
রাসুলুল্লাহ (স.) এর বাণী কাজ ও মৌন সম্মতি হল হাদিস৷ এটি ইসলামি শিক্ষার দ্বিতীয় উৎস৷ হাদিসের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃوَمَآ اٰتٰكُمُ الرَّسُوْلُ فَجُذُوْهُ وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
অর্থঃ রাসুল (স.) তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর৷ আর যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক৷ (সূরা আল হাশর আয়াত ৭)।
কুরআন ও হাদিস ব্যতীত ইসলাম ধর্মবিশারদের ঐকমত্য (ইজমা) এবং তাঁদের সাদৃশ্যমূলক অভিমত (কিয়াস) ইসলামি শিক্ষার যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ উৎস৷ একজন মুসলমানের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর বিধিবিধান মনে নেওয়া ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাই হল ইসলামি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য৷ মূলত ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ) রিসালাত (আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবি ও রাসুলগণ (আ.) এর কার্যক্রম ও দাওয়াত)
ও আখিরাত (মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের হিসাব নিকাশ ও জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি) এ তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত৷ আমরা এগুলোর আলোকে জীবন গড়ব এবং জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করব৷
নৈতিকতা কি?
সততা সদাচার সৌজন্যমূলক আচরণ সুন্দর স্বভাব মিষ্টি কথা ও উন্নত চরিত্র এ সবকিছুর সমন্বয় হল নৈতিকতা৷ একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাল চলন উঠা বসা আচার ব্যবহার লেন দের সবকিছুই যখন প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয় তখন তাকে নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তি বলে এই নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বোত্তম লোক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যার চরিত্র উত্তম৷ (বুখারি ও মুসলিম)নৈতিকতা হল ব্যক্তির মৌলিক মানবীয় গুণ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ যা অর্জন করলে তার জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়৷ এর মাধ্যমে সে অর্জন করে সম্মান ও মর্যাদা৷ ইসলামি শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া৷ নীতিহীন ও চরিত্রহীন মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট৷
মহান আল্লাহ বলেন তাদের হৃদয় আছে উপলব্ধি করে না চোখ আছে দেখে না কান আছে শুনে না এরা হল চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার থেকেও নিকৃষ্ট৷ আর এরাই হল গাফিল৷ (সূরা আল আরাফ আয়াত ১৭৯)
আমরা নৈতিকগুণে সমৃদ্ধ হব এবং তা চর্চা করে উত্তম মানুষ হব৷
নৈতিকতার গুরুত্ব?
ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম৷ মানুষকে ইমান ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহানবি (স.) প্রেরিত হয়েছিলেন৷ তিনি বলেন আমি মহান নৈতিক গুণাবলিকে পরিপূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি৷ (বুখারি)।নৈতিকতার কথা শুধু মুখে বললে চলবে না বরং বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আদর্শসমূহ জীবনে বাস্তবায়ন করে নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে৷ মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) নীতিবান লোককে পরিপূর্ণ মুমিন হিসেবে অভিহিত করে বলেনঃ
اَكْمَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ اِيْمَانًا اَحْسَنُهُمْ خُلُقًا
অর্থঃ চরিত্রের বিচারে যে লোকটি উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকার৷ (তিরমিযি)।
মানুষের নৈতিকতা যত উন্নত হবে সে তত উত্তম মানুষের পরিণত হবে৷ এভাবে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (স.) এর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবে৷
মাহানবি হযরত মুহাম্মদ(স.) আরও বলেছেন তোমাদের মধ্যে সেই লোকটিই আমার নিকট অধিক প্রিয় যার আখলাক সবচাইতে সুন্দর৷ (বুখারি)৷ এমনিভাবে জনৈক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট জানতে চাইলেন মহান আল্লাহ মানুষকে অনেক কিছু দান করেছেন এর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দান কোনটি? নবি করিম (স.) বললেন সবচেয়ে মূল্যবান দান সুন্দর চরিত্র৷
আমাদের উচিত সুন্দর চরিত্র ও নৈতিক আচরণ অর্জন করে রাসুলুল্লাহ (স.) এর প্রিয়পাত্র হওয়া৷ ইসলামি শিক্ষার মাধ্যম নৈতিকতা সম্পর্কে জানা ও তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা অধিকতর সহজ৷ ইসলামি শিক্ষার মাধ্যম একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ নৈতিকতা লাভ করতে পারে৷ তাই বলা যায় যে নৈতিক শিক্ষা ইসলামি শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ৷