চিকিৎসা শাস্ত্র কি | চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
চিকিৎসা শাস্ত্র কি?
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়৷ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মূলে রয়েছে মুসলমানদের অবদান৷![]() |
চিকিৎসা শাস্ত্র |
যাঁদের অবদানের কারণে চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবু বকর আল রাযি আল বিরুনি ইবনে সিনা ইবনে রুশদ প্রমুখ৷
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান?
নিচে চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদানের জন্য যেসব ব্যক্তি অবদান রেখেছে তাদের নাম উল্লেখ করা হলঃ
আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে যাকারিয়া আল রাযি
তাঁর নাম মুহাম্মদ উপনাম আবু বকর পিতার নাম যাকারিয়া৷ তিনি আল রাযি নামে পরিচিত৷ তিনি ৮৬৫ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শল্যচিকিৎসাবিদ ছিলেন৷ দীর্ঘদিন তিনি জুন্দেরশাহপুর ও বাগদাদে সরকারি চিকিৎসালয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ তৎকালে তাঁর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে অনেক রোগী তাঁর নিকট আসতেন৷শল্যচিকিৎসায় আল রাযি ছিলেন তৎকালের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি৷ তাঁর অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ছিল গ্রীকদের থেকেও উন্নত৷ তিনি মোট দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন৷ তন্মধ্যে শতাধিক হল চিকিৎসা বিষয়ক৷ তিনি বসন্ত ও হাম রোগের উপর আল জুদাইরি ওয়াল হাসবাহ নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন৷ এর মৌলিকত্ব দেখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের লোকেরা খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন৷
তাঁর আরেকটি গ্রন্থের নাম হল আল মানসুরি৷ এটি ১০ খন্ডে রচিত৷ এ গ্রন্থ দুটি আল রাযিকে চিকিৎসাশাস্ত্রে অমর করে রেখেছে৷ তিনি হাম শিশু চিকিৎসা নিউরোসাইকিয়াট্রিক ইত্যাদি চিকিৎসা সম্পর্কে নতুন মতবাদ প্রবর্তন করেন৷ আল মানসুরি গ্রন্থে তিনি এনাটমি ফিজিওলজি ঔষধ স্বাস্থ্যরক্ষা বিধি চর্মরোগ ও প্রসাধন দ্রব্য শল্যচিকিৎসা বিষ জ্বর ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন৷ তিনি ৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
আল বিরুনি
বুরহানুল হক আবু রায়হান মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ আল বিরুনি সংক্ষেপে আল বিরুনি নামে পরিচিত৷ ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে খাওয়ারিযমের নিকটবর্তী আল বিরুন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন৷ আল বিরুনি ছিলেন মধ্যযুগীয় শ্রেষ্ঠ মুসলিম পন্ডিত মহাজ্ঞানী ও নিষ্ঠাবান গবেষক৷ তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তাধারার অধিকারী বড় দার্শনিক ছিলেন৷ গণিত জ্যোতিষশাস্ত্র পদার্থ রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে তিনি পারদর্শী ছিলেন৷এছাড়া তিনি প্রসিদ্ধ ভূগোলবিদ ঐতিহাসিক পঞ্জিকাবিদ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ছিলেন৷ স্বাধীন চিন্তা মুক্ত বুদ্ধি সাহসিকতা নির্ভীক সমালোচনা ও সঠিক মতামতের জন্য তিনি যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন৷ তিনি আল উসতাদ (মহামান্য শিক্ষক) নামে খ্যাতি অর্জন করেন৷
তিনি ভূগোলের অক্ষরেখার পরিমাপ নির্ণয় করেন৷ তাঁর লিখিত অনেক গ্রন্থ হয়েছে৷ তন্মধ্যে আল আছারুল বাকিয়্যাহ আনিল কুরুনিল খালিয়্যাহ গ্রন্থটি প্রসিদ্ধ৷ এ গ্রন্থে তিনি বর্ষপঞ্জি গণিত ভূগোল আবহাওয়া বিজ্ঞান ও চিকিৎসাসহ নানা বিষয় বর্ণনা করেন৷ তিনি প্রথম প্রমাণ করলেন যে পৃথিবী গোলাকার৷ পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তাঁর রচিত৷ তিনি ১০৪৮ খ্রি. ইন্তিকাল করেন৷
ইবনে সিনা
তাঁর পুরো নাম আবু আলি আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা৷ তিনি বুখারার নিকটবর্তী আফশানা নামক গ্রামে ৯৮০ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন৷ দশ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন৷ তিনি দার্শনিক চিকিৎসক গণিতজ্ঞ জ্যোতির্বিদ এবং মুসলিম জগতের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও সর্ববিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন৷চিকিৎসায় তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র ও চিকিৎসা প্রণালি এবং শল্যচিকিৎসার দিশারি মনে করা হয়৷ তার রচিত অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে৷ তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে আল কানুন ফিত তিবব একটি অমর গ্রন্থ৷ ড. ওসলার এ গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলে উল্লেখ করেন৷ চিকিৎসাশাস্ত্রে এর সমপর্যায়ের কোন গ্রন্থ আজও দেখা যায় না৷
আধুনিক বিশ্বেও তাঁর গ্রন্থটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাঠদান করা হচ্ছে৷ চিকিৎসা সম্বন্ধীয় যাবতীয় তথ্যের আশ্চর্য রকম সমাবেশ থাকার কারণে গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বৃহৎ সংগ্রহ বলা চলে৷ তিনি ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
ইবনে রুশদ
তাঁর পুরো নাম আবু ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ৷ তিনি৷ স্পেনের করডোভায় জন্মগ্রহণ করেন৷ মধ্যযুগে মুসলিমদের মধ্যে যাঁরা জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি তাঁদের একজন৷ এই ক্ষণজন্মা পুরুষ শুধু এক বিষয়েই জ্ঞানী ছিলেন না তিনি জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন৷দর্শন পদার্থ রসায়ন জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্র এ সকল শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল৷ তিনি এরিস্টটলের গ্রন্থসমূহ আরবিতে অনুবাদ করার পাশাপাশি নিজেও অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন৷ তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আল জামি৷ এ গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিদ্যা দর্শন ও চিকিৎসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷ তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করা হয়৷
চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর লেখা গ্রন্থের নাম হল কুল্লিয়াত৷ এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সমাদৃত হয়েছে৷ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান মধ্যযুগের মুসলমানদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে অনেক ঋণী৷ মুসলমানদের ঐ অবদান না থাকলে আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এতদূর আসতে পারত না৷ আমরাও চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে গভীর অধ্যয়ন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সহজতর করে তুলব৷