গণিত শাস্ত্র কি | গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
গণিত শাস্ত্র কি?
গণিতকে বিজ্ঞানের মূল বলা হয়ে থাকে৷ এই গণিতশাস্ত্র আবিষ্কারের অগ্রগতি ও উন্নতির উধকর্ষসাধনে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়৷
![]() |
গণিত শাস্ত্র |
আর খাওয়ারেযমি ইবনে হায়সাম উমর খৈয়াম ও নাসির উদ্দিন তুসিসহ অনেক মুসলিম মনীষী এ শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ লাভ করেন৷
গণিত শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান?
নিচে গণিত শাস্ত্র অবদানের জন্য যেসব ব্যক্তি অবদান রেখেছে তাদের নাম উল্লেখ করা হলঃ
মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারেযমি
তাঁর নাম মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারেযমি৷ ৭৮০ খ্রি. খাওয়ারেযম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি গণিতশাস্ত্রের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি৷ তাঁকে গণিতশাস্ত্রের জনক বলা হয়৷ বীজগণিতের আবিষ্কারক হলেন তিনি৷ এ বিষয়ে তাঁর রচিত হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ গ্রন্থের নামানুসারে এ শাস্ত্রকে পরবর্তীকালে ইউরোপীয়রা আল জেবরা নামকরণ করে৷
তিনি এ গ্রন্থে আট শতাধিক উদাহরণ সন্নিবেশিত করেন৷ সমীকরণের সমাধান করার ছয়টি নিয়ম তিনি আবিষ্কার করেন৷ এটি দ্বাদশ শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পঠিত হতো৷ কিতাবুল হিসাব আল আদাদ আল হিন্দী তাঁর পাটিগণিত বিষয়ক গ্রন্থ৷ তাঁর গণিতশাস্ত্র দ্বারা উমর খৈয়াম লিওনার্ডো ফিরোনাসসি এবং মাস্টার জ্যাকবসহ আরও অনেকেই প্রভাবান্বিত হয়েছেন৷ তিনি ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
হাসান ইবনে হায়সাম
হাসান ইবনে হায়সাম একজন চক্ষুবিজ্ঞানী (Optic Scientist) ছিলেন৷ তিনি ৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ দর্শন জ্যোতির্বিদ্যা চিকিৎসাশাস্ত্র গণিত প্রভৃতি বিষয়ে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন৷ চক্ষুবিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ কিতাবুল মানাযির তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে৷ মধ্যযুগে আলোক বিজ্ঞানের এটি একমাত্র গ্রন্থ ছিল৷
গবেষক রোজার বেকন নিউলার্ডো কেপলার প্রমুখ এ গ্রন্থের উপর নির্ভর করেই তাঁদের গবেষণা করেন৷ তিনি দৃষ্টি শক্তির প্রতিসরণ ও প্রতিফলন বিষয়ে গ্রিকদের ভুল ধারণা খন্ডন করেন৷ তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে বাহ্যপদার্থ থেকেই আমাদের চোখে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়৷ চোখ থেকে বের হওয়া আলো বাহ্যপদার্থকে দৃষ্টিগোচর করায় না৷ তিনিই ম্যাগনিফাইং গ্লাস আবিষ্কার করেন৷
আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা গতি বিজ্ঞানকে তাদের আবিষ্কার বলে দাবি করলেও ইবনে হায়সাম এ বিষয়ে বহু পূর্বেই বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন৷ বায়ুমন্ডলের ওজন চাপ এবং তাপের কারণে জড়পদার্থের ওজনেও তারতম্য ঘটে৷ মাধ্যকর্ষণ বিষয়ে তিনি তাঁর গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছেন৷
স্যার আইজ্যাক নিউটনকে (১৬৪২- ১৭১৭ খ্রি) মাধ্যকর্ষণ সম্পর্কিত শক্তির আবিষ্কারক মনে করা হলেও ইবনে হায়সাম এ বিষয়ে প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়৷ তিনি ১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
উমর খৈয়াম
তাঁর নাম উমর ইবনে ইবরাহিম আল খৈয়াম সংক্ষেপে উমর খৈয়াম৷ ১০৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণির গণিতবিদ৷ তাঁর কিতাবুল জিবার ওয়াল মুকাবালা গণিতশাস্ত্রের একখানি অমর গ্রন্থ৷ ঘন সমীকরণ এবং অন্যান্য উন্নতশ্রণির সমীকরণের পদ্ধতির বিশ্লেষণ এবং সংজ্ঞানুসারে এগুলোকে শ্রেণিভুক্ত করে উমর খৈয়াম বীজগণিতের অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করেন৷
এ ব্যাপারে তিনি গ্রিকদের থেকেও বেশি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন৷ পাটিগণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপরও তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন৷ তিনি ১১২২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
নাসির উদ্দিন তুসি
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন তুসি ১২০১ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ জ্যামিতি ত্রিকোণমিতি ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে মোট ষোলটি গ্রন্থ রচনা করেন৷ তিনি ত্রিকোণমিতিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান হতে পৃথক করে সমতল এবং গোলকৃৎ ত্রিকোণমিতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন৷ গণিতশাস্ত্র বিষয়ে প্রনীতি তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে মুতাওয়াসিতাত বাইনাল হান্দাসা ওয়াল হাইয়া (The Middle Books Between Geometry and Astronomy) জামিউল হিসাব বিত তাখতে ওয়াত্বোরাব (Summary of the Whole of Computation With Table and Earth) কাওয়ায়েদুল হান্দাসা তাহরিরুল উসুল অন্যতম৷ তিনি ১২৭৪ খ্রি. ইন্তিকাল করেন৷
আমরা এসব মুসলিম মনীষীর ন্যায় জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখার চেষ্টা করব৷ সেই অনুযায়ী জীবন গড়ব এবং দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পৃথে নিয়ে যায়৷