রসায়ন শাস্ত্র কি | রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
রসায়ন শাস্ত্র কি?
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ন্যায় রসায়নশাস্ত্রেও মুসলমানদের অবদান অনেক৷ আল কেমি (রসায়ন) শাস্ত্রে মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান আল কিন্দি জুননুন মিসরি ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি বিশেষ অবদান রাখেন৷ তাঁদের নিরলস পরিশ্রম ও অকৃত্রিম অবদানের ফলে রসায়নশাস্ত্র আজ উন্নতির উচ্চশিখরে পৌঁছেছে৷রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান?
নিচে রসায়ন শাস্ত্রে অবদানের জন্য যেসব ব্যক্তি অবদান রেখেছে তাদের নাম উল্লেখ করা হলঃজাবির ইবনে হাইয়ান
আবু আব্দুল্লাহ জাবির ইবনে হাইয়ান দক্ষিণ আরবের আযদ বংশে ৭২২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা হাইয়ানও একজন চিকিৎসক ছিলেন৷ গণিতশাস্ত্রে শিক্ষা লাভ শেষে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রেও শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি কুফায় চিকিৎসা জীবন শুরু করলেও এর মধ্যে তিনি রসায়নশাস্ত্রে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন৷![]() |
রসায়ন শাস্ত্র |
তিনি কুফায় একটি বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করে মৃত্যু পর্যন্ত (৮০৪ খ্রি.) সেখানেই গবেষণারত ছিলেন৷ রসায়নকে তিনি সর্বপ্রথম বিজ্ঞানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠান করেছিলেন৷ রসায়ন ও বিজ্ঞানের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যথা পরিস্রবণ দ্রবণ ভস্মীকরণ বাষ্পীকরণ গলানো প্রভৃতি তাঁরই আবিষ্কার৷
তিনি তাঁর গ্রন্থে ধাতুর শোধন তরলীকরণ বাষ্পীকরণ ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়া লোহার মরিচা রোধক বার্নিশ ও চুলের কলপ লেখার কালি ও কাঁচ ইত্যাদি দ্রব্য প্রস্তুতের প্রণালি ও বিধি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করেন৷ জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নশাস্ত্রের পরিপূর্ণতা দান করছেন বিধায় তাকে এ শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি ৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
আল কিন্দি
আবু ইয়াকুব ইবনে ইছহাক আল কিন্দি ৮০১ খ্রি. কুফায় জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা ইছহাক খলিফা মামুনের শাসনামলে কুফার গভর্নর ছিলেন৷ তিনি এরিস্টটলের ধর্মতত্ত্ব (Theology of Aristotle) আরবিতে অনুবাদ করেন৷ খলিফা মামুনের সময়ে জ্যোতির্বিদ রসায়নবিদ চিকিৎসক ও দার্শনিক হিসেবে তাঁর সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে৷আল কিন্দি নিউপ্লেটোনিজমের উদ্ভাবক ছিলেন৷ তিনিই সর্বপ্রথম প্লেটো ও এরিস্টটলের মতবাদ সমন্বয় করার চেষ্টা করেন৷ তিনি অনধিক ৩৬৫টি গ্রন্থ রচনা করে জ্ঞান বিজ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেন৷ তাঁর মতে গণিত ছাড়া দর্শনশাস্ত্র অসম্ভব৷
দর্শন ছাড়াও তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র জ্যোতির্বিদ্যা রসায়ন গণিত ও সংগীত বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন৷ তিনি মাতৃভাষা আরবি ছাড়াও পাহলবি সংস্কৃত গ্রিক ও সিরীয় ভাষার সুপন্ডিত ছিলেন৷ তিনি ৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷
জুননুন মিসরি
তাঁর নাম ছাওবান পিতার নাম ইবরাহিম৷ তিনি জুননুন মিসরি নামে পরিচিত৷ তিনি মিসরের আখমিম নামক স্থানে ৭৯৬ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি সুফি হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও আরব মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে রসায়নশাস্ত্রের উপর যাঁরা প্রথমদিকে গবেষণা করেন তাঁদের অন্যতম৷তিনি রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করেন৷ তাঁর লেখায় সোনা রুপাসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের বর্ণনা পাওয়া যায়৷ তিনি মিসরীয় সাংকেতিক বর্ণের মর্মার্থ বুঝতেন৷ তিনি মিসরের আল জিজাহ নামক স্থানে ৮৫৯ খ্রি. ইন্তিকাল করেন৷
ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি
তাঁর নাম আবুল হাকিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল মালিক আল খারেজেমি আল কাসি৷ তিনি একাদশ শতাব্দীতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি বাগদাদেই অবস্থান করতেন৷ তাঁর লেখা আইনুস সানাহ ওয়া আইওয়ানুস সানাহ (Essence of the Art and Aid of Worker) এ গ্রন্থটি রসায়নশাস্ত্রে মূল্যবান একটি সংযোজন৷তিনি এ গ্রন্থে রসায়নের প্রত্যেক প্রয়োজনীয় শাখার সরল ও সহজ পস্থা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন৷ যে সকল বস্তু সাদা এবং যে সকল বস্তু লাল এদের ব্যবহার ও পার্থক্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।