ফিতনা ফাসাদ কি | ফিতনা ফাসাদের কুফল

ফিতনা ফাসাদ কি?

ফিতনা ও ফাসাদ উভয়টি আরবি শব্দ৷ ফিতনা (اَلْفِتْنَةُ) অর্থ অরাজকতা বিশৃঙ্খলা কলহ ইত্যাদি৷ ইসলামি পরিভাষায় ফিতনা ফাসাদ বলতে বিশৃঙ্খলা বিপর্যয় সৃষ্টি বুঝায়৷ অর্থাৎ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার বিপরীত অরাজক পরিস্থিতিই ফিতনা ফাসাদ৷ মানবসমাজে ভয় ভীতি অত্যাচার অনাচার ইত্যাদির মাধ্যমে নানা বিপর্যয় সৃষ্টি করা যায়৷ এরূপ অস্তিতিশীল পরিস্থিতিই ফিতনা ফাসাদ৷ 

সন্ত্রাস ছিনতাই রাহাজানি গুম খুন অপহরণ জঙ্গিবাদ ইত্যাদি ফিতনা ফাসাদের অন্তর্ভুক্ত৷ অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন কলহ ষড়যন্ত্র যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদি ও ফিতনা ফাসাদের অন্যরূপ৷

ফিতনা ফাসাদ এর কুফল?

ইসলাম শান্তির ধর্ম সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা৷ এতে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার কোন স্থান নেই৷ বরং ঐক্য ভ্রাতৃত্ব মৈত্রী উদারতা পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি ইসলামের মূল ভিত্তি৷ ইসলামের সকল আচার আচরণ বিধি বিধান বিজ্ঞানসম্মত ও সৌন্দর্যমন্ডিত৷ জামাআতে সালাত আদায় এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ ধনী গরিব রাজা প্রজা সাদা কালো সবাই সারিবদ্ধভাবে এক ইমামের নেত্বত্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়৷

সকলে একই সাথে রুকু সিজদাহ করে সালাত আদায় করে৷ এতে শৃঙ্খলাহীনতার কোন সুযোগ নেই৷ আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য বিধি বিধানও তদ্রূপ৷ এমনকি এ গোটা মহাবিশ্বও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সুশৃঙ্খল পন্থায় পরিচালিত৷ কোথাও কোনরূপ অরাজকতা ও অবস্থাপনা নেই৷

আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনও এরূপ শৃঙ্খলাপূর্ণ হওয়া উচিত৷ এটাই ইসলামের লক্ষ্য৷ কিন্তু ফিতনা ফাসাদ এ লক্ষ্য পূরণের প্রধান অন্তরায়৷ ফিতনা ফাসাদের ফলে জীবনের সর্বস্তরেই বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় নেমে আসে৷ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে৷

যে সমাজে ফিতনা ফাসাদ প্রসার লাভ করে সে সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না৷ সমাজের ঐক্য সংহতি বিনষ্ট হয়৷ এরূপ সমাজে মানুষের জীবন সম্পদ ও সম্ভ্রমের কোন নিরাপত্তা থাকে না৷ মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে না৷ শিক্ষা দীক্ষা ব্যবসা বাণিজ্য লেনদেন ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না৷ 

ফিতনা ফাসাদ সমাজে ভয় ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দেয়৷ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে৷ এককথায় ফিতনা ফাসাদের ফলে সমাজে ও দেশে অরাজকতা দেখা দেয়৷ শান্তি ও উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়৷
বস্তুত ফিতনা ফাসাদ অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ৷ 

এর দ্বারা সমাজে সকল অন্যায় অত্যাচারের দরজা খুলে যায়৷ অরাজক পরিস্থিতিতে অসৎ মানুষেরা সব ধরনের পাপ কাজের সুযোগ পায়৷ এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَالْفِتْنَتُ اَشَدُّمِنَ الْقَتْلِ

অর্থঃ “ফিতনা হত্যার চেয়েও জঘন্য৷” (সূরা আল বাকারা আয়াত ১৯১)।

ফিতনা ফাসাদ সমাজে অনৈতিকতার জন্ম দেয় নিন্দনীয় চরিত্র চর্চার প্রসার ঘটনা৷ ফিতনা ফাসাদ সমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে৷

ফিতনা ফাসাদ সম্পর্কে ইসলামি বিধান?

ফিতনা ফাসাদ সম্পূর্ণরূপে ইসলামি আদর্শের বিরোধী৷ এটি হারাম বা নিষিদ্ধ৷ আল্লাহ তায়ালা বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করাকে নিষেধ করেছেন৷ তিনি বলেনঃ
وَلَاتُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَاِصْلَا حِهَا

অর্থ: “পৃথিবীতে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না৷” (সূরা আল আরাফ আয়াত ৫৬)।

পৃথিবীতে ফিতনা ফাসাদ মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষ তার অন্যায় ও মন্দকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে নানা ধরনের ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করে৷ যারা ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা খুবই জঘন্য চরিত্রের অধিকারী৷ আল্লাহ তায়ালা তাদের ঘৃণা করেন৷ তিনি বলেনঃ
وَلَاتَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِ ٹ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ ٥

অর্থঃ “তুমি পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করতে চাইবে না৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না৷” (সূরা আল কাসাস আয়াত ৭৭)।

মানবজীবনে ফিতনা ফাসাদের কুফল ও পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ৷ আমরা সদাসর্বদা এ থেকে বেঁচে থাকবন উত্তম গুণাবলির অনুসরণ ও সৎকর্মের মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করব৷ যেকোনো প্রকার সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও অরাজকতার বিরুদ্ধে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলব৷