ইবাদত কি | ইসলামে ইবাদত কত প্রকার
ইবাদত (اُلْعِبَـادَةُ) কি?
ইবাদত (اُلْعِبَـادَةُ) আরবি শব্দ৷ এর অর্থ হল চূড়ান্তভাবে দীনতা হীনতা ও বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া৷ আর ইসলামি পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ কর্মে আল্লাহ তায়ালার বিধি বিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে সহজভাবে জীবনযাপন করার জন্য অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন৷আমরা আল্লাহর বান্দা৷ তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
وَمَـاخَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّالِيَعْدُوْنِ ٥
অর্থঃ জিন ও মানবজাতিকে আমি (আল্লাহ) আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি৷ (সূরা আয যারিয়িত আয়াত ৫৬)।
আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা৷ আর এ ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন তারাতো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্য বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে৷ (সূরা আল বাইয়্যিনা আয়াত ০৫)।
![]() |
ইবাদত |
কীভাবে ইবাদত করলে ও জীবনযাপন করলে তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন তা শেখানোর জন্য নবি রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন৷ আল্লাহ তায়ালা তাঁদের অনুসরণ করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন৷ মহান আল্লাহ বলেন (হে নবি) আপনি বলুন তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য কর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন আল্লাহ তো কাফিরদের পছন্দ করেন না৷ (সূরা আলে ইমরান আয়াত ৩২)।
উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝলাম আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক নির্দেশিত পথ ও মত অনুসরণ করার নাম ইবাদত৷ সুতরাং তাঁদের নির্দেশিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হব৷
ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কি কি?
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হল বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞানের৷ যদি মানুষ সে বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না৷তাদের চক্ষু আছে তা দ্বারা দেখে না তাদের কর্ণ আছে তা দ্বারা শুনে না এরা পশুর ন্যায়৷ বরং অধিক নিকৃষ্ট (পশু হতে) তারা হল অচেতন৷ (সূরা আল আরাফ আয়াত ১৭৯)। অতএব ইবাদত করতে বলতে শুধু উপাসনাকেই বুঝায় না৷ বরং আল্লাহর খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে সকল কার্য আল্লাহর বিধানমতো করাই হল ইবাদত৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَـاِذَاقُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَـانْتَشِرُوْافِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْامِـنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِيْرًالَّعَلَّـكُمْ تُفْلِحُوْنَ ٥
فَـاِذَاقُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَـانْتَشِرُوْافِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْامِـنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِيْرًالَّعَلَّـكُمْ تُفْلِحُوْنَ ٥
অর্থঃ সালাত আদায় করার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়বে৷ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে ব্যাপৃত হবে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে৷ যাতে তোমরা সফলকাম হও৷ (সূরা আল জুমুআ আয়াত ১০)।
এ আয়াতের মর্ম থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি ও কৃষিকাজ করা এবং বৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও দুনিয়ার অন্যান্য সকল ভালো কাজ করা ইবাদত৷ এমনিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা তাঁর রহমতের আশা শাস্তির ভয় ইখলাস সবর শোকর তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব কাজেই ইবাদতের মধ্যে শামিল৷
আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.) এন প্রদর্শিত পন্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে পরকালে আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করবেন৷ ফলে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা শান্তি পাব৷
ইবাদত কত প্রকার ও কি কি?
হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদত দুই প্রকারঃ- হাক্কুল্লাহ ও
- হাক্কুল ইবাদ
হাক্কুল্লাহ (আল্লাহর হক) কি?
আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্যকে হাক্কুল্লাহ (ِحَقُّ اللّٰه) বলে৷ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য অনেক ধরনের ইবাদত (কাজ) করি৷ সেগুলোর মধ্যে কিছু ইবাদত শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট এগুলো হল হাক্কুল্লাহ যেমন সালাত (নামায) কায়েম করা সাওম (রোযা) পালন ও হজ করা ইত্যাদি৷এসব কাজ করার পূর্বে প্রত্যেক মানুষকে অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করতে হবে তা হল আল্লাহ আছেন তিনি এক ও অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরিক (অংশীদার) নেই তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা৷ তাঁর আদেশেই পৃথিবীর সবকিছু আবার ধ্বংস হবে৷
আমাদের জীবন মৃত্যু সবই তাঁর হাতে৷ পৃথিবীর সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের আওতাভুক্ত৷ তাঁর হাতেই সকল সৃষ্টির রিজিক৷ আমরা তাঁরই ইবাদতকারী৷ তিনি ব্যতীত উপাসনার উপযুক্ত আর কেউ নেই৷ এ সবকিছু মনে প্রাণে বিশ্বাস করা ও স্বীকার করাই হল বান্দার উপর আল্লাহর হক৷
আল্লাহর হক আদায় করতে হলে আমাদের অবশ্যই নিম্নোক্ত কাজগুলো যথাযথ সময় করতে হবে যেমনঃ
- সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করা৷
- আল্লাহর দেওয়া সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলা৷
- সর্বাবস্থায় নিজেকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ এবং তাঁর অনুগ্রহ কামনা করা৷
আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক সামাজিক অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলব তাতে তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন৷ ফলে আমরা পরকালে তাঁর থেকে পুরস্কার পাব৷
হাক্কুল ইবাদ (বান্দার হক) কি?
মানুষ সামাজিক জীব৷ সমাজবদ্ধ হয়েই মানুষকে বসবাস করতে হয়৷ আমরা পিতা মাতা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে সামাজিকভাবে একসাথে বসবাস করি৷ একজনের দুঃখে অন্যজন সাড়া দেই৷ আপদে বিপদে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করি৷ পরস্পরের প্রতি এই সহানুভূতি ও দায়িত্বই হাক্কুল ইবাদ (ِحَقُّ الْعِبَـاد) ( বান্দার হক বা অধিকার)।কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে ইসলামে বান্দার হক তথা মানবাধিকারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ মানবাধিকার সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে রয়েছে৷ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রতিপালকের তোমার শরীরের তোমার স্ত্রী ও সন্তান সন্ততির হক রয়েছে৷
অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে৷ যেমন সালামের জবাব দেওয়া রোগীকে দেখতে যাওয়া জানাযায় অংশগ্রহণ করা দাওয়াত কবুল করা মজলুমকে সাহায্য করা ও হাঁচির জবাব দেওয়া৷ (বুখারি ও মুসলিম)
মানুষের প্রতি মানুষের হক বা অধিকারকে আটটি ভাগে ভাগ করা যায় যেমনঃ
- নিকটাত্মীয়ের হক
- দূরাত্মীয়ের হক
- প্রতিবেশীর হক
- দেশবাসীর হক
- শাসক শাসিতের হক
- সাধারণ মুসলমানের হক
- অভাবী লোকের হক এবং
- অমুসলিমের হক।