প্রতারণা কাকে বলে | প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

প্রতারণা ইংরেজি?

প্রতারণা ইংরেজি হল fraud, Lying ইত্যাদি। 

প্রতারণা কি?

প্রতারণা অর্থ ঠকানো ফাঁকি দেওয়া ধোঁকা দেওয়া বিশ্বাস ভঙ্গ করা৷ এটি মিথ্যাচারের একটি বিশেষ রূপ৷ ইসলামি পরিভাষায় প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে ফাঁকি বা ধোঁকার উপর ভিত্তি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করাকে প্রতারণা বলা হয়৷ প্রতারণার মাধ্যমে অন্যকে ভুল বুঝিয়ে ঠকানো হয়৷ প্রতারণা নানাভাবে হতে পারে৷ সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসায় বাণিজ্যে প্রতারণার দৃষ্টান্ত বেশি পরিলক্ষিত হয়৷ 
প্রতারণা
প্রতারণা

যেমন ওজন কম দেওয়া জাল মুদ্রা চালিয়ে দেওয়া পণ্যদ্রব্যের দোষ গোপন করা ভালো জিনিস দেখিয়ে বিক্রিয়া সময় খারাপ জিনিস দিয়ে দেওয়া বেশি দামের দ্রব্যের সাথে কম দামের দ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করা ভেজাল মেশানো ফলে ও মাছে রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়া পণ্যদ্রব্যের মিথ্যা প্রচারণা চালানো ইত্যাদি৷

এছাড়াও মানবজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতারণা হতে পারে৷ যেমন পরীক্ষায় নকল করা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা বিশ্বাস ভঙ্গ করা ভুল ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া পথচারীকে ভুল রাস্তা বলে দেওয়া সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ এমনকি নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করাও প্রতারণার শামিল৷

প্রতারণা বর্জনের গুরুত্ব?

প্রতারণা অত্যন্ত গর্হিত ও ঘৃণিত কাহ৷ এটি মিথ্যাচারের শামিল৷ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণা মিথ্যা অপেক্ষাও জঘন্য৷ কেননা প্রতারণা করার দ্বারা দুটো পাপ হয়৷ একটি মিথ্যা বলা ও অপরটি বিশ্বাস ভঙ্গ করা৷ সুতরাং সর্বাবস্থায় প্রতারণা বর্জন করা আবশ্যক৷ যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে প্রকৃতি মুমিন নয়৷ কেননা ইমান ও প্রতারণা এক ব্যক্তির মধ্যে একত্রে থাকতে পারে না৷ প্রকৃত মুমিন কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেন না৷ 

নিজ স্বার্থের বিরোধী হলেও মুমিন ব্যক্তি সততা ও সত্যবাদিতার উপর অটল থাকেন৷ আমাদের প্রিয়নবি (ন.) বলেছেন যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমার উম্মত নয়৷ আর যে কারও সাথে প্রতারণা করে সে মুসলিম দলভুক্ত নয়৷ (মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (স.) অন্য হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ
مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا

অর্থঃ যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়৷ (তিরমিযি)।

ইসলামি শরিয়তে প্রতারণা করা ধোঁকা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম৷ ব্যবসায় বাণিজ্য লেনদেন আচার ব্যবহার ও আর্থ সামাজিক নানা কর্মকান্ডে কোন অবস্থাতেই প্রতারণা জয়েজ নয়৷ কোন কাজেই প্রতারণা করা যাবে না সত্য মিথ্যার মিশ্রণ কো যাবে না এবং সত্য ও প্রকৃত অবস্থা গোপন করা যাবে না৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ٥

অর্থঃ তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ৪২)।

ব্যবসায় বাণিজ্য পণ্যদ্রব্য সঠিকভাবে লেনদেন করতে হবে৷ পণ্যের দোষ ক্রটি ক্রেতার নিকট পরিস্কারভাবে বর্ণনা করতে হবে৷ পণ্যের সঠিক অবস্থা না জানিয়ে লেনদেন করা প্রতারণা এটা হারাম বা অবৈধ৷ একটি হাদিসে বর্ণিত আছে একদা রাসুলুল্লাহ (স.) একটি খাদ্যদ্রব্যের স্তূপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ এসময় তিনি স্তূপের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন৷ তিনি দেখতে পেলেন যে স্তূপের ভিতরের দ্রব্য ভিজা ও বাইরেরগুলো শুকনো৷ 

তিনি বললেন হে খাদ্যের মালিক এটা কী লোকটি বলল হে আল্লাহর রাসুল বৃষ্টির দরুন এগুলো ভিজে গেছে৷ অতঃপর রাসুল (স.) বললেন তবে তুমি ভিজা খাদ্যশস্য কেন উপরে রাখলে না? তাহলে ক্রেতারা এর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারত (ফলে প্রতারিত হতো না৷)।  বস্তুত যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না। (মুসলিম)।

প্রতারণা একটি সমাজদ্রোহী অপরাধ৷ এর দ্বারা পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়৷ সমাজে শক্রতা জন্ম নেয়৷ প্রতারণাকারীকে কেউ পছন্দ করে না৷ সে যেমন মানবসমাজে ঘৃণিত তেমনি আল্লাহ তায়ালার নিকটও ঘৃণিত৷ মহানবি(স.) বলেছেন যে ব্যক্তি দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করে এবং ক্রেতাকে দোষের কথা জানায় না এমন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট ঘৃণিত৷ ফেরেশতাগণ সর্বদা তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন৷ (ইবনে মাজাহ)

প্রকৃতপক্ষে প্রতারণাকারী দুনিয়ায়তে ঘৃণিত লজ্জিত ও অপদস্থ হয়৷ আর আখিরাতে তার জন্য রয়েছে দুর্ভোগ ও ধ্বংস৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ ٥ الَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْ فُوْنَ٥ وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْوَّزَنُوْ هُمْ يُخْسِرُوْنَ٥

অর্থঃ ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তারা মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়৷ (সূরা আল মুতাফফিফিন আয়াত ১-৩)।

প্রতারণা আখলাকে যামিমাহ-র অন্যতম৷ এটি মারাত্মক অপরাধ৷ আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে এর কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ৷ অতএব আমাদেরকে সকল কথা ও কাজে প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে৷
Next Post Previous Post