মিতব্যয়িতা কি | মিতব্যয়িতার গুরুত্ব
মিতব্যয়িতা কি?
মিতব্যয়িতা আখলাকে হামিদাহ-র অন্যতম দিক৷ মিতব্যয়িতা হল প্রয়োজন অনুসারে ব্যয় করা পরিমিতিবোধ কথা বার্তা কাজ কর্মে যথার্থতা সাল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি৷ সাধারণত ধন সম্পদের যথাযথ ও প্রয়োজন মাফিক ব্যবহারকে মিতব্যয়িতা বলা হয়৷ অর্থাৎ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খরচ করা কম বা বেশি না করা৷আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক৷ তিনি আমাদের বহু নিয়ামত দান করেছেন৷ এ সমস্ত নিয়ামত ও ধন সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য৷ এক্ষেত্রে অপব্যয় অপচয় বা কৃপণতা করা যাবে না৷ বরং যখন যা প্রয়োজন সেরূপ ব্যয় করার মধ্যেই সফলতা রয়েছে৷ প্রয়োজনমাফিক সম্পাদের এই ব্যবহারই মিতব্যয়িতা এটি অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি পন্থা৷
মিতব্যয়িতার গুরুত্ব?
মিতব্যয়িতা একটি গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক গুণ৷ এটি মানবসমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। পক্ষান্তরে কৃপণতা ও অপচয় সমাজে নানা অশান্তির সৃষ্টি করে৷ অপয়কারীর সম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়৷ ফলে সে নানা অভাব অনটন দুঃখ কষ্টে পতিত হয়৷![]() |
মিতব্যয়িতা |
অন্যদিকে কুপণতা মানুষের মধ্যে মনোমালিন্য ও শক্রতার জন্ম দেয়৷ সমাজে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে৷ মিতব্যয়িতা মানুষকে অপচয় ও কৃপণতার কুফল থেকে রক্ষা করে৷ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেনঃ
مِنْ فِقْهِ الرَّجُلِ رِفْقُهُ فِىْ مَعِيْشَتِهٖ
مِنْ فِقْهِ الرَّجُلِ رِفْقُهُ فِىْ مَعِيْشَتِهٖ
অর্থঃ ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ৷ (মুসনাদে আহমাদ)।
মিতব্যয়ী ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার করেন৷ ফলে তিনি বহু সাওয়াবের অধিকারী হন৷ একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন হে আদম সন্তান তুমি যদি তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ সৎকাজে খরচ কর তবে তোমার কল্যাণ হবে৷
আর যদি তা আটকে রাখ তবে তোমার অকল্যাণ হবে৷ তবে তোমার প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ রেখে দিলে তোমাকে তিরস্কার করা হবে না৷ (তিরমিযি)।
মিতব্যয়িতা মুমিনের গুণ৷ প্রকৃত ইমানদারগণ শুধু নিজ প্রয়োজনমাফিক খরচ করেন৷ তারা কৃপণতাও করেন না৷ আবার অপচয়ও করেন না৷ তাঁরা মিতব্যয়ী৷ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেন৷ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের পরিচয় দিয়ে বলেছেনঃ
وَالَّذِيْنَ اِذَٓا اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِ فُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِـكَ قَوَامًـا ٥
অর্থঃ আর যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না৷ বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন করে৷ (সূরা আল ফুরকান আয়াত ৬৭)।
আল্লাহ আরও বলেন তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিত ও করো না তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে৷ (সূরা বনি ইসরাইল আয়াত ২৯)।
আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন মিতব্যয়িতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ তিনি তাঁর ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনমাফিক খরচ করতেন৷ এতে তিনি যেমন আরাম আয়েশ ও বিলাসিতা করতেন না তেমনি কৃপণতাও করতেন না৷ অতিরিক্ত সম্পদ তিনি দান করে দিতেন৷ সাহাবিগণ ওলিগণের জীবনী থেকেও আমরা এ শিক্ষা লাভ করি৷
একটি হাদিসে মহানবি (স.) বলেছেন সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে ইসলামের দিকে হিদায়াত করা হয়েছে তার প্রয়োজনমাফিক জীবনোপকরণ আছে এবং সে এতে তুষ্ট রয়েছে৷ (তিরমিযি)।
মিতব্যয়িতা মানুষকে নানা সৎগুণে ভূষিত করে৷ লোভ লালসা অপচয় অপব্যয় কৃপণতা অলসতা আরামপ্রিয়তা ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখে মিতব্যয়িতা আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয়৷ আমরা সকলে জীবনযাপনে মিতব্যয়ী হব৷ সবধরনের অপচয় কৃপণতা ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকব৷ তাহলে আমাদের জীবন সুন্দর হবে৷