কর্তব্য পরায়নতা কি | কর্তব্যপরায়ণতার নানা দিক
কর্তব্যপরায়ণতা কি?
আখলাকে যামিমাহ-র অন্যতম হল কর্তব্যপরায়ণতা৷ মানুষের সার্বিক উন্নতি ও সফলতার জন্য এর কোন বিকল্প নেই৷ কর্তব্যপরায়ণতা হল যথাযথভাবে কর্তব্য আদায় করা দায়িত্বসমূহ পালন করা ইত্যাদি৷মানুষ হিসেবে আমাদের উপর নানাবিধ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে৷
![]() |
কর্তব্য পরায়নতা |
এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন থাকা সময়মতো সুন্দর ও সুচারুভাবে এগুলো পালন করা এবং এ ক্ষেত্রে কোনরূপ অবহেলা বা উদাসীনতা প্রদর্শন না করাকেই কর্তব্যপরায়ণতা বলা হয়৷ মহান আল্লাহ বলেন প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে এবং তারা যা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন৷ (সূরা আল আনআম আয়াত ১৩২)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
اِنَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اِنَّالَانُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا ٥
অর্থঃ যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে আমি তো তার শ্রমফল নষ্ট করি না যে উত্তমরূপে কার্য সম্পাদন করে৷ (সূরা আল কাহ্ফ আয়াত ৩০)। মহান আল্লাহ আরও বলেন প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারও ভার গ্রহণ করবে না৷ (সূরা আল আনআম আয়াত ১৬৪)।
অন্য আয়াতে রয়েছে যে বিষয় দে তোমরা জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না কর্ণ চুক্ষু হৃদয় এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হবে৷ (সূরা বনি ইসরাইল আয়াত ৩৬)।
لَا يُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّاوُسْعَهَا ٹ لَهَامَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ٹ
অর্থঃ আল্লাহ কারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত৷ সে ভালো যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফলন তারই৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ২৮৬)।
কর্তব্যপরায়ণতার নানা দিক?
কর্তব্যপরায়ণতা মানবজীবনে সফলতা লাভের প্রধানতম হাতিয়ার৷ আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন৷ সুতরাং তাঁর ইবাদত করা আমাদের কর্তব্য৷ আমরা সবাই পরিবারের মধ্যে বসবাস করি৷ সুতরাং পরিবারের সদস্য যথা মাতা পিতা ভাই বোন দাদা দাদি সকালের প্রতি আমাদের নানা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে৷ সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশীর প্রতিও আমাদের নানা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়৷শিক্ষার্থী হিসেবে বিদ্যালয় শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীর প্রতি আমাদের নানা কর্তব্য রয়েছে৷ এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আসলেও আমাদের পালন করতে হয়৷ এসব কর্তব্য সঠিক সময়ে যথাযথভাবে পালন করা উচিত। এগুলোর প্রতি সচেতন থাকা ও এগুলো সম্পাদনে সচেষ্ট হওয়াই কর্তব্যপরায়ণতা৷
কর্তব্যপরায়ণতার গুরুত্ব?
মানবজীবনে কর্তব্যপরায়ণতার গুরুত্ব অপরিসীম৷ যে ব্যক্তি কর্তব্যপরায়ণ সকলেই তাঁকে ভালোভাসে শ্রদ্ধা করে সম্মান করে৷ তিনি সকলের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন৷ কর্তব্যপরায়ণতা মানুষকে সফলতা দান করে৷ ছাত্রজীবনে শিক্ষার্থীর কর্ত্য হল শিক্ষকদের সম্মান করা তাঁদের কথা মেনে চলা ঠিকমতো লেখাপড়া করা বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র সংরক্ষণ করা ইত্যাদি৷যে শিক্ষার্থী এসব কর্তব্য ভালোভাবে পালন করে সে সবার ভালোবাসা লাভ করে৷ শিক্ষকগণ তাকে পছন্দ করেন। সে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়৷ ভবিষ্যৎ জীবনেও সে সফলতা লাভ করে৷ অন্যদিকে যে শিক্ষার্থী কর্তব্যপরায়ণ নয় তাকে কেউ পছন্দ করে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সে ব্যর্থ হয়৷
কর্তব্যপরায়ণতা মুমিনের অন্যতম গুণ৷ মুমিন ব্যক্তি তাঁর সকল কর্তব্য সম্পাদন করেন৷ আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার পাশাপাশি তিনি বাস্তবজীবনের সব দায়িত্ব কর্তব্যও পালন করেন৷ আল্লাহ তায়ালা তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের পরিচয় দিয়ে বলেছেন তারা কর্তব্য পালন করে এবং সে দিনের ভয় করে যে দিনের অনিষ্ট হবে ব্যাপক৷ (সূরা আদ দাহর আয়াত ৭)
কর্তব্য কাজে অবহেলা করলে পরকালে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে৷ একটি হাদিসে মহানবি (স.) বলেছেনঃ
كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَّعِيَّتِهٖ
অর্থঃ তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল৷ আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে৷ (বুখারি)
আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য নানা দায়িত্ব কর্তব্য দিয়েছেন৷ পরকালে তিনি আমাদের সকলকে কর্তব্য পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন৷ সেদিন কর্তব্যপরায়ণগণ সহজেই মুক্তি লাভ করবে৷ তাদের জন্য রয়েছে সফলতা ও জান্নাত৷ অন্যদিকে যারা দুনিয়াতে কর্তব্যকাজে অবহেলা করেছে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি তারা বিপদগ্রস্ত হবে৷ তারা শাস্তি ভোগ করবে। তাদের জন্য রয়েছে চিরশাস্তির জাহান্নাম৷
আমরা কর্তব্যপরায়ণ হতে সচেষ্ট হব। নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করব৷ তবেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভ করব৷