পরিচ্ছন্নতা কাকে বলে | পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
পরিচ্ছন্নতা কি?
পরিস্কার সুন্দর ও পরিপাটি অবস্থাকে পরিচ্ছন্নতা বলে৷ শরীর মন ও অন্যান্য ব্যবহার্য বস্তু সুন্দর ও পবিত্র রাখা ময়লা আবর্জনা ও বিশৃঙ্খলা অবস্থা থেকে মুক্ত রাখাকে পরিচ্ছন্নতা বলা হয়৷ দুর্নীতিমুক্ত ভেজালমুক্ত ও ঝামেলামুক্ত অবস্থাও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম রূপ৷ পরিচ্ছন্নতার আরবি প্রতিশব্দ হল নাজাফাত (اَلنَّظَا فَةُ)।ইসলামি শরিয়তে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্থে সাধারণত তাহারাত শব্দটিই ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ ইসলামি পরিভাষায় শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতে দেহ মন পোশাক খাদ্য বাসস্থান ও পরিবেশ পরিস্কার ও নির্মল রাখাকে তাহারাত বলা হয়৷
পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব কি কি?
মানবজীবনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম৷ পরিচ্ছন্ন থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। নোংরা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকা ইমানদারগণের স্বভাব নয়। বরং মুমিনগণ সদা সর্বদা পরিস্কার ও পবিত্র থাকেন৷ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেনঃاَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْاِيْمَانِ
অর্থঃ পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক৷ (মুসলিম)।
প্রকৃত ইমানদার হওয়ার জন্য পবিত্র থাকা অপরিহার্য। কেননা পবিত্রতা ব্যতীক কোন ইবাদত কবুল হয় না৷ সালাত আদায়ের জন্য মানুষের শরীর পোশাক ও সালাতের স্থান পরিস্কার ও পবিত্র হতে হয়৷ এগুলো নাপাক থাকলে সালাত শুদ্ধ হয় না৷ তেমনি আল কুরআন তিলাওয়াতের জন্যও পাক পবিত্র হতে হয়৷ অপবিত্র অবস্থায় আল কুরআন স্পর্শ করাও নিষুতি৷ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
لَّايَمَسُّهُٓ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ ٥
অর্থঃ আর এটা (আল কুরআন) পবিত্রগণ ব্যতীত আর কেউ স্পর্শ করবে না৷ (সূরা আল ওয়াকিয়া আয়াত ৭৯)
পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের সবাই ভালোবাসে৷ আল্লাহ তায়ালাও তাদের ভালোবাসেন পছন্দ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ ٥
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ২২২)।
ইসলামি শরিয়তে পরিস্কার পবিত্র থাকার জন্য ওযু গোসল ও তায়াম্মুমের বিধান প্রদান করা হয়েছে৷ দৈনিক পাঁচবার সালাতের পূর্বে ওযু করার দ্বারা মানুষের সকল অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা দূরীভূত হয়৷
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা কি?
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দৈহিক পরিচ্ছন্নতা হল হাত পা মুখ দাঁত ও গোটা শরীর পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকা৷ কারও হাত পা মুখ দাঁত তথা গোটা শরীর অপরিস্কার ও ময়লাযুক্ত থাকলে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়৷ এসব ময়লা দুর্গন্ধ থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার৷ কেননা অপরিচ্ছন্ন মানুষকে সকলে ঘৃণা করে৷ গোসল করার দ্বারা আমরা নিজেদের শরীর পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি৷ শরীরের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করতে পারি৷![]() |
পরিচ্ছন্নতা |
রাতের বেলা ঘুমানোর পর সকালে আমাদের মুখমন্ডল পরিচ্ছন্ন সতেজ ও নির্মল থাকে না৷ চোখে পিঁচুটি লেগে থাকে দাঁত দুর্গন্ধযুক্ত হয়৷ খাদ্য গ্রহণ করলেও আমাদের দাঁতে ময়লা লাগে৷ সুতরাং দাঁত মুখ সদা সর্বদা পরিস্কার রাখতে হয়৷ রাসুলুল্লাহ (স.) দাঁত পরিস্কারের জন্য মিসওয়াক করতেন৷ আমাদেরও তিনি মিসওয়াক করতে উৎসাহিত করেছেন৷ তিনি বলেছেন আমার উম্মতের কষ্টের আশঙ্কা না করলে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের আগে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম৷ (বুখারি)।
আমাদের অনেকে চুল ও নখ বড় রাখে৷ এতে দেখতে খরাপ লাগে৷ নখ বড় হলে এতে ময়লা জমে৷ অতএব নখ কেটে ছোট ও পরিস্কার রাখতে হবে৷ চুল পরিপাটি করে রাখতে হবে৷ এটাই ইসলামের বিধান৷ মহানবি (স.) একবার এলোমেলো চুলের এক লোকের দেখে বললেন এ ব্যক্তি কি চুল কি ঠিক করার কিছু পেল না?
প্রস্রাব পায়খানা করে ভালোভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হওয়াও ইসলামের বিধান৷ এজন্য প্রথমে ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করতে হবে৷ এখন সহজলভ্য টিস্যু ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷ অতঃপর পানি ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হতে হবে৷ মহানবি (স.) বলেছেন নিশ্চয় প্রস্রাবই বেশির ভাগ করব আযাবের কারণ হয়ে থাকে৷ (মুসনাদে আহমাদ)।
অপর একটি হাদিসে এসেছে তোমরা প্রস্রাবের ছিটা ফোঁটা থেকে বেঁচে থাক৷ কারণ কবরের বেশিরভাগ আযাব প্রস্রাবের ছিটা ফোঁটা থেকে বেঁচে না থাকার কারণে হবে৷ (দারাকুতনি)।
দৈনিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার গুরুত্ব সীমাহীন৷ সুতরাং আমরা প্রতিদিন গোসল করব৷ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে ভালোভাবে ওযু করব৷ আমাদের হাত পা নখ চুল দাঁত চোখ সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখব৷
পোশাকের পরিচ্ছন্নতা কি?
দৈহিক পরিচ্ছন্নতার মতো পোশাক পরিচ্ছদের পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কাপড় চোপড় পরিস্কার থাকলে দেহ মন ভালো থাকে কাজে উৎসাহ পাওয়া যায়৷ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃوَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ٥
আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন৷ (সূরা আল মুদ্দাসসির আয়াত ৪)।
আমাদের প্রিয়নবি (স.) সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন৷ কাপড় চোপড় অল্প মূল্যের হতে পারে ছেঁড়া ফাটা হতে পারে কিন্তু তা পরিস্কার হওয়া উচিত৷ এজন্য সবসময় কাপড় ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে৷
পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা কি?
আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ৷ ঘর বাড়ি গাছ পালা হাট বাজার স্কুল মাদ্রাসা দোকানপাট রাস্তাঘাট এসবই আমাদের পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত৷ এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের কর্তব্য৷ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না থাকলে নির্মল জীবন যাপন করা সম্ভব নয়৷যেখানে সেখানে কফ থুথ মলমূত্রে ফেললে পরিবেশ নোংরা হয়৷ বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা রাসায়নিক বর্জ্য ডাস্টবিনে না ফেলে রাস্তাঘাটে ফেলা উচিত নয়৷ এতে রাস্তাঘাট ময়লা হয়৷
নোংরা আবর্জনা আমাদের শরীরে ও পোশাকে লাগে নানা রকম রোগজীবাণু জন্মে৷ আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ পানি ও বায়ু পরিবেশের অন্যতম উপাদান৷ এ দুটো মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা পানি পান করি পানিতে গোসল করি কাপড় চোপড় পরিস্কার করি৷ সুতরাং পানি ও বায়ু সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার৷ পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না৷ অনেকে পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করে৷
এটা ঠিক নয়৷ আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় মলত্যাগ করব৷ ফলে আমাদের বায়ুও দুর্গন্ধযুক্ত হবে না৷ পরিবেশ আমাদের৷ এ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদেরই৷ সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সর্তক হব৷ আমাদের ঘর বাড়ি স্কুল কলেজ রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখব৷ সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাব৷ যানবাহন বাসস্টেশন ফেরিঘাট খেলার মাঠ হাট বাজারও পরিস্কার রাখা দরকার। আমরা ও ব্যাপারেও সচেষ্ট হব৷ এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাহায্য করব৷