কর্মবিমুখতা কাকে বলে | কর্মবিমুখতা পরিহারের গুরুত্ব

কর্মবিমুখতা কাকে বলে?

কর্মবিমুখতা বলতে কাজ না করার ইচ্ছাকে বোঝায়৷ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোন কাজ না করে অলস বা বেকার বসে থাকাকে কর্মবিমুখতা বলা হয়৷ কোন অক্ষম ব্যক্তি যদি কোন কাজ করতে না পারে তবে তা কর্মবিমুখতা নয়৷ যেমন৷ অন্ধ বধির বা প্রতিবন্ধীরা শারীরিক কারণে সবধরনের কাজ করতে সমর্থ হয় না নয়৷ বরং যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অলসতা বা অন্য কোন কারণে স্বেচ্ছায় কোন কাজে না করে বেকার বসে থাকা হল কর্মবিসুখতা৷

কর্মবিমুখতার কুফল?

মানবজীবনে কাজের কোন বিকল্প নেই৷ জীবন বড় হওয়ার জন্য জীবিকা উপার্জনের জন্য মানুষকে বহু কাজ করতে হয়৷ সময়মতো যথাযথভাবে এসব কাজ সম্পাদনের উপরই মানুষের উন্নতি ও সফলতা নির্ভর করে৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বা জাতি কর্মবিমুখ সে ব্যক্তি বা জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না৷ কর্মবিমুখতা একটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য কলঙ্ক স্বরূপ৷

কর্মবিমুখতা
কর্মবিমুখতা

কর্মবিমুখতা মানুষের মধ্যে অলসতা সৃষ্টি করে৷ এতে মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে৷ মানুষের কর্মস্পৃহা কর্মক্ষমতা লোপ পায়৷ বলা হয় অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা৷ অলস ব্যক্তিরা নানা অসৎ ও অনৈতিক চিন্তা ও কর্মে ব্যাপৃত থাকে৷ অনেক সময় সন্ত্রাস সৃষ্টি ছিনতাই রাহাজানি ইত্যাদি অসৎ পাপকার্যে জড়িয়ে পড়ে৷ ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়৷

কর্মবিমুখতার ফলে মানুষের মেধা শক্তি ও সময়ের অপচয় হয়৷ কর্মবিমুখ বেকারকে কেউ ভালোবাসে না৷ কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার সম্পর্ক করতে চায় না৷ কর্মবিমুখতা মানুষের আত্মসম্মানবোধ লোপ করে অন্যের অর্থে জীবনযাপন করার মারসিকতা তৈরি হয়৷ এতে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে৷ অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷

কর্মবিমুখতা পরিহারের গুরুত্ব?

ইসলাম কল্যাণের ধর্ম৷ মানুষের অকল্যাণ হয় এমন কোন বিধান বা আচার আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না৷ কর্মবিমুখতা মানবজীবনে অভিশাপ স্বরপ৷ ইসলামে এর কোন স্থান নেই৷ ইসলামে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَاِذَا قُضِيَتِ اصَّلٰو ةُفَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ

অর্থঃ অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর৷ (সূরা আল জুমুআ আয়াত ১০)।

হাদিসে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজকেও ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মহানবি (স.) বলছেনঃ
طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيْضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ

অর্থঃ “হালাল উপায়ে জীবিকা অন্বেষণ করা ফরজের পর আরও একটি ফরজ কাজ। (বায়হাকি)।
জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করার প্রয়োজন অনস্বীকার্য৷ এজন্য বসে থাকলে চলবে না৷ বরং নিজ উদ্যোগে কাজ করার জন্য ইসলামে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে৷ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যেন চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ কোনদিন খায়নি৷ ” (বুখারি)

ইসলামে কর্মবিমুখতার কোন সুযোগ নেই৷ বরং জীবিকা অর্জনের জন্য যেকোনো হালাল শ্রমকেই উৎসাহিত করা হয়েছে৷ নবি রাসুলগণের জীবনী পড়লে জানা যায় যে তাঁরা জীবিকা উপার্জনের জন্য নানা কাজ করেছেন৷ হযরত আদম (আ.) কৃষি করতেন হযরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করতেন আমাদের নবি (স.) ব্যবসা করতেন৷ জীবিকার প্রয়োজনে তাঁরা ছাগলও চরিয়েছেন৷ 

সুতরাং কোন শ্রমই ছোট নয়৷ হযরত উমর (রা.) বলেছেন তোমাদের কেউ যেন জীবিকা উপার্জনের চেষ্টায় নিরুৎসাহিত হয়ে বসে না থাকে৷ আমাদের অনেকে পড়ালেখা শেষ করে বেকার বসে থাকে৷ এরূপ বেকারত্ব ঠিক নয়৷  বরং যার যার সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করা দরকার৷ এতে শরীর মন ভালো থাকে৷ আল্লাহ তায়ালাও সন্তুষ্ট হন৷
Next Post Previous Post