তাকওয়া বলতে কি বুঝায় | পারিবারিক জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব

তাকওয়া অর্থ কি?

তাকওয়া শব্দের অর্থ বিরত থাকা বেঁচে থাকা ভয় করা নিজেকে রক্ষা করা৷ ব্যবহারিক অর্থে পরহেজগারি খোদাভীতি আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বোঝায়৷

তাকওয়া কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায় অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়৷ অন্যকথায় সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়৷ যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে বলা হয় মুক্তাকি৷

মহান আল্লাহকে ভয় করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্রষ্টা ও পালনকর্তা৷ তিনি আমাদের সবকিছু দেখেন জানেন৷ তিনি শাস্তিদাতা ও মহাপরাক্রমশালী৷ হাশরের দিনে তিনি আমাদের সকল কাজের হিসাব নেবেনঃ অতঃপর পাপকাজের জন্য শাস্তি দেবেন৷ আল্লাহ ভীতি হল আল্লাহ তায়ালার সামনে জবাবদিহি করার ভয়৷ অতঃপর এরূপ অনুভূতি মনে ধারণ করে সকল পাপ থেকে বেঁচে থাকতে হয়৷ সকল প্রকার অন্যায় অত্যাচার অশ্লীল কথা কাজ ও চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকতে হয়৷
মুমিন
মুমিন

আল্লাহ তায়ালাকে এয় করলে এসব পাপ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়৷ ফলে মুত্তাকিগণ পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করবেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে তার স্থান হবে জান্নাত৷
(সূরা আন নাযিআত আয়াত ৪০-৪১)।

গুরুত্ব তাকওয়া একটি মহৎ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য৷ মানবজীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম৷ তাকওয়া মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনকেই সম্মান মর্যাদা ও সফলতা দান করে৷ ইসলামি জীবন দর্শনে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি হলেন মুক্তাকিগণ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ اَتْقٰكُمْ  ٹ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান৷ (সূরা আল হুজুরাত আয়াত ১৩)।

আল্লাহ তায়ালার নিকট তাকওয়ার মূল্য অত্যধিক৷ ধন সম্পদ শক্তি ক্ষমতা গাড়ি বাড়ি থাকলেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট মর্যাদা লাভ করতে পারে নচ৷ বরং যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করতে পারেন সেই আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি মর্যাদাবান৷ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ভালোবাসেন৷ আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ٥
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন৷ (সূরা আত তাওবা আয়াত ৪)। 

পার্থিব জীবনে মুত্তাকিগণ আল্লাহ তায়ালার বহু নিয়ামত লাভ করে থাকের৷ আল্লাহ তায়ালা তাকওয়াবানদের সর্বদা সাহায্যে করেন৷ বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন ও বরকতময় রিযিক দান করেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন৷ (সূরা আত তালাত আয়াত ২-৩)।

পরকালেও তাকওয়াবানদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার৷ আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিন মুত্তাকিদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং মহাসফলতা দান করবেন৷ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন হে মুমনিগণ যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করে (আল্লাহকে ভয় কর) তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন৷ আর আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়৷ (সূরা আল আনফাল আয়ত ২৯)।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا ٥
অর্থঃ নিশ্চয়ই মুত্তাকিগণের জন্য রয়েছে সফলতা৷ (সূর্ আন নাবা আয়াত ৩১)।
প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া মানব চরিত্রের সর্বাধিত গুরুত্বপূর্ণ স্বভাব৷ এর মাধ্যমে মানুষ সম্মান মর্যাদা ও সফলতা লাভ করে৷

নৈতিক জীবনে তাকওয়ার প্রভাব?

নৈতিক জীবন গঠনে ও নীতি নৈতিকতা রক্ষায় তাকওয়ার প্রভাব অনস্বীকার্য৷ তাকওয়া সকল সৎগুণের মূল৷ ইসলামি নৈতিকতার মূল ভিত্তি হল তাকওয়া৷ তাকওয়া মানুষকে মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ হারাম বর্জন করতে এবং হালাল গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগায়৷ মুত্তাকি ব্যক্তি সদাসর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করেন৷ আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন শোনেন জানেন এ বিশ্বাস  পোষণ করেন৷ ফলে তিনি কোনোরূপ অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করতে পারেন না৷ 

কোনোরূপ অশ্লীল ও অশালীন কথা কাজ ও চিন্তাভাবনা করতে পারেন না কেননা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে পাপ যত গোপনেই করা হোক না কেন আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন ও জানেন৷ কোনোভাবেই আল্লাহ তায়ালাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়৷ ফলে তাকওয়াবান ব্যক্তি সকল কাজেই নীতি নৈতিকতা অবলম্বন করেন এবং অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা পরিহার করেন৷ তাকওয়া মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং সচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে৷ 

সকল সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে৷ ফলে মুত্তাকিগণ সৎ সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত হন৷ অন্যদিকে যার মধ্যে তাকওয়া নেই সে নিষ্ঠাবান ও সৎকর্মশীল হতে পারে না সে নানা অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত থাকে৷ নৈতিক ও মানবিক আদর্শের পরোয়া করে না৷ ফলে তার দ্বারা সমাজে অনৈতিকতা ও অপরাধের প্রসার ঘটে৷

বস্তুত তাকওয়া হল মহৎ চারিত্রিক গুণ৷ নৈতিক চরিত্র গঠনে এর কোন বিকল্প নেই৷ আমরা সকলেই তাকওয়াবার হওয়ার চেষ্টা করব৷
Next Post Previous Post