সত্যবাদিতা কি | সত্যবাদিতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো

সত্যবাদিতা শব্দের অর্থ?

সত্যবাদিতার আরবি প্রতিশব্দ আস সিদক৷ 

সত্যবাদিতা কি?

সাধারণভাবে সত্য কথা বলার অভ্যাসকে সত্যবাদিতা বলা হয়৷ অন্যকথায় বাস্তব ও প্রকৃত ঘটনা বা বিষয় প্রকাশ করাকে সিদক বলা হয়৷ অর্থাৎ কোন ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে কোনরূপ পরিবর্তন পরিবর্ধন বা বিকৃতি ব্যতিরেকে হুবহু বা অবিকল বর্ণনা করাই হল সিদক৷ যে ব্যক্তি সত্যবাদী তাকে বলা হয় সাদিক (صَادِقٌ)৷ আর মহাসত্যবাদীকে সিদ্দিক (صِدِّيْقٌ) বলে৷

সত্যবাদিতা
সত্যবাদিতা

সত্যবাদিতার বিপরীত হল মিথ্যাচার৷ কোন ঘটনা বা বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হল মিথ্যাচার৷ মিথ্যাচারকে আরবিতে আল কাযিব (اَلْكَذِبُ) বলে৷ যে ব্যক্তি সিথ্যা কথা বলে তাকে বলা হয় কাযিব (اَلْكَذِبُ) আর চরম মিথ্যাবাদী হল কাযযাব (اَلْكَذَّابُ)৷

সত্যবাদিতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো?

সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ৷ মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম৷ কথা বার্তা কাজ কর্ম ও আচার আচরণে সত্যবাদিতা ও সততা অবলম্বন করলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে৷ সদা সর্বদা সত্য সুন্দর ও সঠিক কথা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ৷  তিনি বলেনঃ
يٰٓاَيُّهَاالَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا ٥

অর্থঃ হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সঠিক কথা বলো৷ (সূরা আল আহযাব আয়াত ৭০)।


মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিনগণের একটি অন্যতম নিদর্শন হল তাঁরা সত্যবাদী৷ জীবনের সর্বাবস্থায় তাঁরা সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করেন৷ শুধু নিজে নিজে বলার চর্চা করলেই হবে না বরং সত্যবাদীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকতে হবে৷

এতে সমাজে সার্বিকভাবে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সত্যবাদীদের সাথি হও৷ (সূরা আত তওবা আয়াত ১১৯)

প্রকৃত মুমিন অবশ্যই সত্যবাদী হবেন৷ আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন সত্যবাদিতার মূর্ত প্রতীক৷ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সততা ও সত্যবাদিতার  চর্চা করেছেন৷ তাঁর সাথি হযরত আবু বকর (রা.) ও ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী৷ তাই হযরত আবু বকর (রা.) কে বলা হয় সিদ্দিক৷

যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তাকে সবাই ভালোবাসে বিশ্বাস করে৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী তাকে কেউ ভালোবাসে না সম্মান করে না  বরং সকলেই তাকে ঘৃণা করে৷ কেননা মিথ্যা বলা মহাপাপ৷ এটি সকল পাপের মূল৷ মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ তায়ালা চরম অসন্তুষ্ট৷

সত্যবাদিতার প্রভাব ও পরিণতি?

মানবজীবনে সত্যবাদিতার প্রভাব সীমাহীন৷ সত্যবাদিতা মানুষকে নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করে৷ পাপ ও অশালীন কাজ থেকে রক্ষা করে৷ সত্যবাদী ব্যক্তি কোনরূপ অন্যায় ও অত্যাচার করতে পারে না৷ একটি হাদিসে আমরা এর প্রমাণ পাই৷ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে একদা জনৈক ব্যক্তি মহানবি (স.) এর রিকট এসে বলল আমি চুরি করি মিথ্যা বলি এবং আরও অনেক খারাপ কাজ করি৷ সবগুলো খারাপ কাজ একসঙ্গে ত্যাগ করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়৷ 

আপনি আমাকে যেকোনো একটি খারাপ কাজ ত্যাগ করতে নির্দেশ দিন৷ মহানবি (স.) বললেন তুমি মিথ্যা বলা চেড়ে দাও লোকটি বলল এ তো খুব সহজ কাজ৷ মহানবি (স.) এর কথামতো লোকটি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিল৷ পরে দেখা গেল যে মিথ্যা বলা ত্যাগ করায় তার পক্ষে আর কোন খারাপ কাজ করা সম্ভব হল না৷ সে সবগুলো খারাপ কাজ ছেড়ে দিল৷ কেননা সে ভাবল কেউ তাকে অপরাধের কথা জিজ্ঞেস করলে সে মিথ্যা বলতে পারবে না৷ বরং স্বীকার করতে হবে৷ 

এতে সে লজ্জিত হবে ও শাস্তি ভোগ করবে৷ এভাবে শুধু মিথ্যা ত্যাগ করায় লোকটি সকল খারাপ থেকে মুক্তি পেল৷ সত্যবাদিতা এভাবেই মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে সাহায্যে করে৷
সত্যবাদিতার পরিণতি হল সফলতা ও মুক্তি৷ যেমন বলা হয়ঃ
اَصِّدْقُ يُنْجِىْ وَالْكِذْبُ يُهْلِكُ

অর্থঃ সত্যবাদিতা মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে৷

সত্যবাদিতার ফলে মানুষ দুনিয়াতে সম্মানিত হয় মর্যাদা লাভ করে৷ আর আখিরাতে সত্যবাদিতার প্রতিদান হল জান্নাত৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

هٰذَايَوْمُ يَنْفَعُ الصّٰدِقِيْنَ صِدْقُهُمْ ٹ لَهُمْ جَنّٰتٌ
অর্থঃ এ তো সেই দিন যে দিন সত্যবাদীদের তাদের সত্যবাদিতা বিশেষ উপকার দান করবে৷ তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত৷ (সূরা আল মায়িদা আয়াত ১১৯)।

মহানবি (স.) বলেন তোমরা সত্যবাদী হও৷ কেননা সত্য পুণ্যের পথ দেখায়৷ আর পুণ্য জান্নাতের পথে পরিচালিত করে৷ (বুখারি ও মুসলিম)। 

অন্য একটি হাদিসে আছে একবার মহানবি (স.) কে জিজ্ঞাসা করা হল কী আমল করলে জান্নাতবাসী হওয়া যায়?  তিনি উত্তরে বললেন সত্য কথা বলা৷ (মুসনাদে আহমাদ) সুতরাং আমাদের সকলেরই সত্যবাদী ও সত্যশ্রয়ী হওয়া একান্ত কর্তব্য৷
Next Post Previous Post