মানব সেবা কি | ইসলামে মানব সেবার গুরুত্ব

মানবসেবা কি?

মানবসেবা বলতে মানুষের সেবা করা পরিচর্যা করা যন্ত নেওয়া সাহায্য সহযোগিতা করা ইত্যাদি বোঝায়৷ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বশেষে সকল মানুষের সেবা করা মানবসেবার আওতাভুক্ত৷ মানুষ হল আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা৷ আনমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই মানুষের জন্য সৃষ্টি করছেন৷ মানুষের কর্তব্য হল এসব সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়া ও তাদের সাথে যথাযথ ব্যবহার করা৷ পাশাপাশি অন্য মানুষের প্রতি সাহায্যে সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করাও মানুষের অন্যতম দায়িত্ব৷ 
মানব সেবা
মানব সেবা

কেননা পরস্পরের সেবা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়৷ ইসলামে সব রকমের হক বা অধিকার দু'ভাগে বিভক্ত৷ তাহলো হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ৷ হাক্কুল্লাহ হল আল্লাহ তায়ালার হক৷ সব রকমের ইবাদত প্রশংসা তাসবিহ তাহলিল এর অন্তর্ভুক্ত৷ আর হাক্কুল ইবাদ হল বান্দার হক৷ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে ভালোভাসা সকলের সেবা করা সাহায্যে সহযোগিতা করা হাক্কুল ইবাদের অন্তর্ভুক্ত মানবসেবা হল হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক৷

মানব সেবার গুরুত্ব?

মানবসেবা আখলাকে হামিদাহর অন্যতম বিষয়৷ মানবসেবা মানুষের উন্নত চরিত্রের পরিচায়ক৷ যে ব্যক্তি মানুষের সেবা করেন তিনি মহৎপ্রাণ৷ সমাজে তিনি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী৷ আল্লাহ তায়ালাও এরূপ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন৷ যিনি মানুষের সেবা সাহায্য সহযোগিতা করেন আল্লাহ তায়ালাও তাঁকে সাহায্য ও দয়া করেন৷ মহানবি (স.) বলেনঃ
لَايَرْ حَمُ اللّٰهُ مَنْ لَّايَرْ حَمُ النَّـاسَ

অর্থঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না৷ (বুখারি)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেনঃ
اِرْحَمُوْا مَنْ فِى الْاَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَّنْ فِى السَّمَاءِ

অর্থঃ তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ কর তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন৷ (তিরমিযি)

অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন৷ (মুসলিম)। বস্তুত সকল মানুষ ভাই ভাই৷ সকলেই আদম (আ.) এর সন্তান৷ সুতরাং যে ব্যক্তি অন্য ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহ তায়ালাও সে ব্যক্তির সাহায্য করেন তার বিপদাপদ দূর করেন৷

মানবসেবা করা মুমিনের অন্যতম গুণ৷ মুমিন ব্যক্তি সর্বদাই অন্য মানুষের খেদমতে নিয়োজিত থাকেন৷  মহানবি (স.) এ সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও রুগণ ব্যক্তির সেবা কর বন্দীকে মুক্ত কর এবং ঋণ গ্রস্তকে ঋণমুক্ত কর৷ (বুখারি)

নানাভাবে মানুষের সেবা করা যায়৷ ক্ষুধার্তকে অন্নদান বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান অসহায়কে আশ্রয় দান রোগীর সেবা করা নিঃস্ব-  দুঃস্থদের আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে মানবসেবা করা যায়৷ ছোট ও বৃদ্ধদের সাহায্য করা দয়া মায়া মমতা প্রদর্শন করা তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত৷
মানবসেবার প্রতিদান সীমাহীন৷ আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিন মানুষের সেবাকারীকে প্রভূত পুরস্কার ও নিয়ামত দান করবেন৷ 

মহানবি (স.) বলেন কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঘৃণা জান্নাতের পোশাক দান করবেন৷ ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন৷ কোন তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন৷ (আবু দাউদ)

আমাদের প্রিয় নবি (স.) মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন৷ ছোট বড় ধনী গরিব মুসলিম অমুসলিম সকলকেই তিনি সাহায্য সহযোগিতা করতেন সকলের খোঁজ খবর নিতেন৷ বিপদগ্রস্ত অভাবীদের সহায়তা করতেন৷ তাঁর দয়া মায়া ও সহানুভূতি থেকে তাঁর চরম শক্রও বঞ্চিত হতো না৷ রাসুল (স.) এর জীবনী পাঠ করলে আমরা এরূপ বহু দৃষ্টান্ত দেখতে পাই৷ রাসুল (স.) কে কষ্টদানকারী বুড়ির ঘটনা আমরা সবাই জানি৷ 

এক কাফির বৃদ্ধা প্রতিদিন রাসুলুল্লাহ (স.) এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত৷ এতে মহানবি (স.) এর পথ চলতে কষ্ট হতো৷ তারপরও তিনি বুড়িকে কিছু বলতেন না৷ একদিন তিনি পথে কাঁটা দেখলেন না৷ দয়ালু নবি (স.) ভাবলেন নিশ্চয়ই বুড়ি অসুস্থ৷ এজন্য পথে কাঁটা দিতে পারেনি৷ তিনি খুঁজে বুড়ির বাড়ি গেলেন৷ গিয়ে দেখলেন বুড়ি সত্যিই অসুস্থ৷ তার সেবা করারও কেউ নেই৷ নবিজি (স.) বুড়ির শিয়রে বসলেন৷ তার সেবা যত্ম করলেন৷ ফলে বুড়ি ভালো হয়ে উঠল৷ সে তার অপকর্মের জন্য লজ্জিত হল৷ সে আর কোনদিন পথে কাঁটা দেয়নি৷

সকল মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করা রাসুলুল্লাহ (স.) এর আদর্শ৷ আমাদের তিনি এজন্য অনুপ্রাণিত করে গেছেন৷ সুতরাং আমাদের উচিত যথাসম্ভব সকল মানুষের সেবা করা৷
Next Post Previous Post