মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সমকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা?

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সমকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা? 

মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি ও রাসুলগণের মধ্যে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল৷ তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে আরবের মানুষ চরম বর্বরতা ও অজ্ঞতার মাঝে ডুবে ছিল৷ তাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরমভাবে অধঃপতিত৷ তারা অসংখ্য মূর্তি তৈরি করত এবং মূর্তির পূজা করত৷ গোত্রের ভিন্নতার পাশাপাশি তাদের মূর্তিও ভিন্ন ভিন্ন ছিল৷ 

তারা পবিত্র কাবাঘরে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করছিল৷ কালের এই চরম অবক্ষয়ের কারণে একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) কে প্রেরণ করেন৷ আল্লাহ তাঁর নিকট মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেন৷ মহানবি (স.) মানুষকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করেন৷

সামাজিক অবস্থা

মহানবি (স.) এর আবির্ভাবের পূর্বে আরব সমাজের লোকেরা নবি ও রাসুল এর শিক্ষা ভুলে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল৷ তাদের আচার ব্যবহার ও চালচলন ছিল বর্বর ও মানবতাবিরোধী৷ তাই সে যুগকে আইয়্যামে জাহিলিয়্যা বা অজ্ঞতার যুগ বলা হয়৷ সুষ্ঠু ও সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই ছিল না৷ মানুষের জান মাল ইজ্জতের কোন নিরাপত্তা ছিল না৷ নরহত্যা রাহাজানি খুন খারাবি ডাকাতি মারামারি কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া জুয়াখেলা মদ্যপান সুদ ঘুষ ব্যভিচার ছিল তখনকার প্রচলিত ব্যাপার৷  

ইসলাম
ইসলাম 

তৎকালীন সমাজে নারীর কোন মর্যাদা ছিল না৷ নারীদের সামাজিক জীব মনে করা হতো না বরং দাসী হিসেবে তাদের বিক্রি করা হতো ভোগ বিলাসের বস্তু মনে করা হতো৷ যার বর্ণনা পবিত্র কুরআন সুষ্পষ্টভাবে এসেছে৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তাদের মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়৷ 

তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে৷ সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পূঁতে ফেলবে৷ সাবধান তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা খুবই নিকৃষ্ট৷ (সূরা আন নাহল আয়াত ৫৮-৫৯)

এক কথায় অপরাধের এমন কোন দিক ছিল না যা তারা করত না৷

সাংস্কৃতিক অবস্থা

জাহিলি যুগে আরবের অধিকাংশ লোক নিরক্ষর ও অশিক্ষিত থাকলেও সাহিত্যের প্রতি তাদের খুব অনুরাগ ছিল৷ তাদের অনেকেই মুখে মুখে গীতিকবিতা চর্চা করত৷ তৎকালীন আরবে উকায মেলা নামে বাৎসরিক একটি মেলা বসত৷ মেলায় তৎকালীন সময়ের প্রসিদ্ধ কবিগণ তাদের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করত৷ যেসব কবিতা সেরা বিবেচিত হতো তা সোনালি বর্ণে লিখে পবিত্র কবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো৷ আরবি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আস সাবউল মুআল্লাকাত জাহিলি যুগেই রচিত৷ কবিতা রচনার কারণে আরবরা জাহিলি যুগেই বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল৷ 

তাদের কবিতা মানের দিক থেকে ছিল খুব উন্নত৷ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যখন তোমরা আল্লাহর কিতাবের কোন কিছু বুঝতে না পার তবে তার অর্থ আরবদের কবিতায় তলাশ কর৷ কারণ কবিতা তাদের জীবনালেখ্য৷ (আল মুফাচ্ছাল)

এতে বোঝা যায় প্রাচীন আরবের সাংস্কৃতিক জীবনে অসংখ্য প্রবাদ প্রবচন নানা কিংববন্তি ও মুখরোচক কাহিনী এবং বাগ্মিতার প্রচলন ছিল তবে তাদের সংস্কৃতি চর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল কবিতা৷
Next Post Previous Post