ধৈর্য কি | ধৈর্য ধারণ করার উপায়

ধৈর্য কি?

ধৈর্য এর আরবি প্রতিশব্দ সবর( اَلصُّبْرُ)৷ যার অর্থ ধৈর্য সহিষ্ণুতা দৃঢ়তা আত্মনিয়ন্ত্রণ বিরত রাখা ইত্যাদি৷ ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে সহিষ্ণুতার সাথে আল্লাহর বিধান মোতাবেক সকল কর্তব্য পালন করাকে ধৈর্য বলে৷ কুরআন ও হাদিসের আলোকে ধৈর্য বিশ্লেষণ করলে এর তিনটি বি-র দিক স্পট হয়ে ওঠে৷
  • আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত ও আনুগত্যে ধৈর্যধারণ করতে হয়৷
  • যেকোনো বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করতে হয়৷
  • অবৈধ ও হারাম বস্তু থেকে নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে বিরত রাখতে ধৈর্য্যধারণ করতে হয়৷

ধৈর্য ধারণ করার উপায়?

ধৈর্য মানবজীবনের একটি মহৎ গুণ এটি মানবজীবনের সফলতার চাবিকাঠি৷ ধৈর্যের অনুশীলন ছাড়া ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না৷ ধৈর্যধারণ করা খুবই কঠিন কাজ তথাপি সমাজের মানুষের মানুষের কল্যাণের জন্য তা করা অপরিহার্য৷ সমাজ জীবনে শাক্তি শৃঙ্খলা ও কল্যাণময় জীবনাযাপনের জন্য ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম৷ 

পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহ ধৈর্যশালদেরকে অফুরন্ত প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন৷ মহান আল্লাহ বলেনঃ
اِنَّمَايُوَفَّى الصّٰبِرُوُنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِحِسَـابٍ٥

অর্থঃ অবশ্যই ধৈর্যশীলগণকে তাদের প্রতিদান অগণিতভাবে দেওয়া হবে৷ (সূরা আয যুমাার আয়ত ১০)৷ ধৈর্যের বিপরীত হচ্ছে অধৈর্য৷ অধৈর্য মানুষকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়৷ এ কারণে জীবনে চলার পথে মানুষকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে৷


মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ বিপদ আপদ সফলতা বিফলতা ও জয় পরাজয়৷ এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের প্রয়োজন হয়৷ বিপদে যেমন সুদিনের আশায় ধৈর্যধারণ করতে হয় তেমনি সুদিনে আত্মহারা না হয়ে ধৈর্যধারণ করতে হয়৷ সুখশান্তি প্রাপ্তিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে জীবনে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁরা সবাই ছিলেন ধৈর্যশীল৷ বিখ্যাত নবি হযরত ইবরাহিম (আ.) ছিলেন ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক৷ জালিম শাসক নমরুদের মূর্তি পূজার বিরোধিতা করায় তিনি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন৷ তিনি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্যে চান নি৷ 

এমনিভাবে হযরত আইয়ুব (আ.) ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তাঁর দেহে পচন ধরেছিল৷ শরীর থেকে গোশত খসে পড়েছিল৷ আত্মীয়স্বজন তাঁকে ত্যাগ করেছিল৷ তাঁর সন্তানাদি মারা গিয়েছিল৷ তাঁর ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ এমন কঠিন মুহূর্তে তিনি ধৈর্যহারা হন নি৷ আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)ও ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷ তাঁর ধৈর্য ছিল অতুলনীয়৷ তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তবু ধৈর্য হারান নি৷ সকল৷ বিপদেই তিনি ছিলেন অটল ও অবচল৷

শরিয়তের বিধান পালন করতেও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়৷ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় রমযান মাসের সিয়াম পালন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে হজ সম্পাদন সঞ্চিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর ধৈর্যধারণ করতে হয়৷ এমনিভাবে ব্যক্তিগত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরে ধৈর্যধারণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা সকল বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করব৷ বিপদ মক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করব৷ আমরা ধৈর্যশীল হব।
Next Post Previous Post