মক্কি ও মাদানি সুরা কি | মক্কি ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

আল-কুরআন সর্বমোট ৩০টি অংশে বিভক্ত। এ অংশগুলোকে পারা বলা হয়। কুরআন মজিদে রয়েছে ১১৪টি সূরা এবং ৬২৩৬টি মতান্তরে ৬৬৬৬টি আয়াত। অবতরণের সময় বিবেচনায় কুরআন মজিদের সূরাসমূহ ২ ভাগে বিভক্ত। যথা মক্কি ও মাদানি।

আল-কুরআন
আল-কুরআন          

 

মক্কি সূরা কি?

সাধারণভাবে বলা যায়, পবিত্র মক্কা নগরীতে আল-কুরআনের যেসব সূরা নাজিল হয়েছে সেগুলো মক্কি সূরা। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী মহানবি (স.) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পূর্বে নাজিল হওয়া সূরাসমূহকে মক্কি সূরা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে ইয়াহইয়া ইবনে সালাম বলে, মহানবি হয়ত মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত কালে মদিনায় গমনের পথে মদিনায় পৌঁছায় পূর্বপর্যন্ত যা নাজিল হয় তাও মক্কি সূরা। আল কুরআনে মক্কি সূরার সংখ্যা মোট ৮৬টি।

মক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য?

  • মক্কি সূরাসমূহে তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
  • মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম তথা আখিরাতের বর্ণনা এসব সূরায় প্রাধান্য লাভ করেছে।
  • শিরক কুফরের পরিচয় বর্ণনা করে এগুলোর অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।
  • মুশরিক ও কাফিরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। এতে পূর্ববর্তী মুশরিক ও কাফিরদের হত্যাযজ্ঞের কাহিনী, ইয়াতীমদের সম্পদ হরণ করা, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া ইত্যাদি কুপ্রথা ও কু-আচরণের বিবরণ রয়েছে। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সফলতা ও তাদের অবাধ্যতার শোচনীয় পরিণতির বর্ণনা করা রয়েছে।
  • এ সূরাগুলোতে শরীয়তের সাধারণ নীতিমালা উল্লেখ করা রয়েছে।
  • এর শব্দমালা শক্তিশালী, ভাবগম্ভীর এবং অন্তরে প্রকম্পন সৃষ্টিকারী।
  • এতে প্রসিদ্ধ বিষয়সমূহ শপথের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • এতে উত্তম চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা করা হয়েছে।
  • এ সূরাসমূহ সাধারণত আকারে ছোট এবং আয়াতগুলোও তুলনামূলক ছোট।

মাদানি সূরা কি?

সাধারণ ভাষায় বলা যায়, মদিনাতে নাযিল হওয়া সূরাগুলো মাদানি সূরা। তবে প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনায় হিজরতের পর নাজিল হওয়া সকল সূরাকে মাদানী সূরা নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইয়াহইয়া ইবনে সালাম বলেন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) মদিনায় হিজরতের পর মদিনার বাইরে থাকাবস্থায় নাযিল হওয়া সূরাসমূহও মাদানী সূরা। অর্থাৎ হিজরতের পর নাজিল হওয়া সকল সূরাই মাদানি সূরা। মাদানি সূরা মোট ২৮টি।

মাদানি সূরার বৈশিষ্ট্য?

  • মাদানী সূরাসমূহে আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি ইসলামের আহবান জানানো হয়েছে।
  • এতে আহলে কিতাবের পথভ্রষ্টতা ও তাদের কিতাব বিকৃতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
  • এ সূরাসমূহে নিফাকের পরিচয় ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
  • ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
  • পারস্পারিক লেনদেন, উত্তাধিকার আইন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে।
  • বিচার ব্যবস্থা, দন্ডবিধি, জিহাদ, পররাষ্ট্রনীতির ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
  • এ সূরাগুলো ও এর আয়াতসমূহ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ হয়।
  • ইবাদাতের রীতিনীতি, সালাত, যাকাত, হজ্জ সাওম ইত্যাদি বিষয় বিবৃতি হয়েছে।
  • শরীয়তের বিধি-বিধান, ফরয, ওয়াজিব, হালাল-হারাম ইত্যাদির সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।
Next Post Previous Post