কুরবানি কাকে বলে | কুরবানির ইতিহাস ও শিক্ষা | কুরবানীর পশুর বয়স

কুরবানি শব্দের অর্থ কি?

কুরবানি সমার্থক শব্দ উযহিয়্যাহ৷ এর  আভিধানিক অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ ইত্যাদি।

কুরবানি কাকে বলে?

শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যে পশু জবাই করা হয় কুরবানি বলে৷ বর্তমানে যে কুরবানি প্রথা প্রচলিত আছে তা হযরত ইবরাহিম (আ.) এর সময় থেকে চলে আসছে৷ এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অন্যতম মাধ্যম৷ ইহা একটি উত্তম ইবাদত৷ 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন কুরবানির দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কাজ আল্লাহর নিকট আর কিছুই নেই৷ ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন কুরবানির পশুর শিং, ক্ষুর ও লোমসমূহ নিয়ে হাজির হবে৷ কুরবানির  রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌছে যায়৷ 

অতএব তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদেরকে পবিত্র কর" (তিরমিযি)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়" (ইবনে মাজাহ)।

কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য?

হযরত ইবরাহিম (আ.)কে আল্লাহ তায়ালা বহুবার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন৷ সকল পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ এবার তিনি এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হলেন৷ এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে আল্লাহ তাঁকে আদেশ করছেন৷ বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান ইসমাইল অপেক্ষা দুনিয়াতে অধিকতর প্রিয় আর কী হতে পারে? অনেক চিন্তা ভাবনা করে তিনি শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন আল্লাহ যাতে খুশি হন তাই তিনি করবেন৷ 

কুরবানি
কুরবানি

পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে৷ তখন তিনি পুত্র ইসমাইলকে বললেন তিনি (ইবরাহিম) বললেন : হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখছি যে তোমাকে আমি জবাই করছি৷ এখন তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাইল ) বললেন হে আমার আব্বা আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন৷ (সূরা আস সাফফাত ১০২) ছেলের এ সাহসিকতাপূর্ণ উত্তর পেয়ে নবি ইবরাহিম (আ.) খুশি হলেন৷ 

আল্লহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালালেন৷ এবারের পরীক্ষাতেও ইবরাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন৷ পবিত্র কুরআনে আছেঃ
وَنَادَيْنَهُ اَنْ يّٰٓاِبْرٰ ه‍ِيْمُ٥ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّءُيَا

অর্থঃ তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম হে ইবরাহিম তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে৷ (সূরা আস্-সাফফাত আয়াত ১০৪-১০৫)। আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে ইসমাইলের জায়গায় ছুরির নিচে শুইয়ে দিলেন৷

কুরবানির পশু
কুরবানির পশু

হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল এ অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তখন হতেই কুরবানি প্রথা চালু হয়েছে৷ এটি আজ মুসলিম সমাজে একটি পবিত্র ধর্মানুষ্ঠানরূপে স্বীকৃত৷

কোরবানি করার সঠিক নিয়ম?

কুরবানির কতিপয় বিশেষ নিয়মাবলি ও বিধিবিধান নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ
  • জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর হতে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত যদি কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাহিবে নিসাব) হয়, তবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব৷ মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
  • জিলহজ মাসের ১০-১১ এবং তারিখ তিন দিন কুরবানির সময়৷ এ তিন দিনের যেকোনো দিন কুরবানি করা যায়৷ তবে প্রথম দিন কিরবানি করা উত্তম৷
  • ঈদুল আযহার নামাযের আগে কুরবানি করা সঠিক নয৷ নামায আদায়ের পর কুরবানি করতে হয়৷
  • সুস্থ ও সবল ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ইত্যাদি গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানি করতে হয় । গরু, মহিষ এবং উটে এক হতে সাত পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা যায়৷
  • কুরবানির ছাগলের বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে৷ গুরি ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে৷ উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে দুম্বা ও ভেড়ার বয়স ছাগলের মতো৷ তবে ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজা হয় যে এক বছরের অনেকগুলো দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চেনা যায় না তবে সেরূপ বাচ্চা দিয়ে কুরবানি জায়েয৷ কিন্তু ছাগলের বাচ্চার বয়স এক বছর না হলে কুরবানি জায়েয হবে না৷ 
  • কুরবানির গোশত সাধারণত তিন ভাগ করে একভাগ গরিব মিসকিনকে, একভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিতে হয় এবং একভাগ নিজের জন্য রাখা উত্তম।
  • নিজ হাতে কুরবানি করা উত্তম।
  • কুরবানির প্রাণী দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে কেবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দ্বারা "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে জবাই করতে হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কুরবানির সময় একাগ্রতার সাথে উত্তম পশু কুরবানী করা। তাতে তাঁরা অনেক সওয়াব পাবে। এতে পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
Next Post Previous Post