ইমান শব্দের অর্থ কি | ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর | ইসলামের মূল বিষয় কয়টি
ইমান শব্দের অর্থ কি?
ইমান ايعلن শব্দটি আমনুন امن মূল ধাতু থেকে নির্গত৷ যার অর্থ বিশ্বাস করা, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি৷ঈমান কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায় শরিয়তের যাবতীয় বিধি বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা মুখে স্বীকার করা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলে৷ইমানের পরিচয় সম্পর্কে বাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
اَنْ تُوْمِنَ بِاللّٰهِ وَمَلَا ءِكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَتُوْمِنَ بِالْقَدَرِخَيْرِهٖ وَشَرِْهٖ
اَنْ تُوْمِنَ بِاللّٰهِ وَمَلَا ءِكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَتُوْمِنَ بِالْقَدَرِخَيْرِهٖ وَشَرِْهٖ
অর্থঃ ইমান হচ্ছে আল্লাহ তার ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভালো মন্দের (ভালো মন্দ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা৷ "(মুসলিম)"
প্রকৃতপক্ষে ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসকেই ইমান বলা হয়। ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো আল্লাহর বাণী আল-কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (স.) এর পবিত্র হাদিসে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে৷ ইমানে মুফাসসালে ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো একত্রে বর্ণিত হয়েছে৷ যেমনঃ
اٰمَنْتُ بِاللّٰهِ وَمَلَا ءِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِهٖ وَشَرِْهٖ مِنَ اللّٰهِ تَعَا لٰي وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ
অর্থঃ আমি ইমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তকদিরের প্রতি যার ভালো মন্দ আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনঃরুথানের প্রতি৷" বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস ব্যতীত ইমানদার হওয়া যায় না৷ আর যিনি এগুলোতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন তাকে মুমিন বলা হয়৷
ঈমানের দিক কয়টি ও কি কি?
ইমানের তিনটি প্রধান দিক আছেঃ
- অন্তরে বিশ্বাস করা
- মুখে স্বীকার করা এবং
- সে অনুযায়ী আমল করা
ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক?
ইমান ও ইসলাম দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা৷ ইমান অর্থ বিশ্বাস৷ ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলা হয়৷ অন্যদিকে ইসলাম অর্থ আন্তসমর্পণ আনুগত্য ইত্যাদি৷ মহান আল্লাহর যাবতীয় আদেশ নিষেধ বিনাদ্বিধায় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রতি পূর্ণাঙ্গরূপে আত্মসমর্পণ করার নাম হল ইসলাম৷![]() |
ইমান |
ইমান ও ইসলামের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান৷ এদের একটি ব্যতীত অন্যটি কল্পনাও করা যায় না৷ এদের একটি অপরটির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল৷ ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক গাছের মূল ও শাখা প্রশাখার মতো৷ ইমান হল গাছের শিকড় বা মূল আর ইসলাম তার শাখা প্রশাখা৷ মূল না থাকলে শাখা প্রশাখা হয় না৷ আর শাখা প্রশাখা না থাকলে মূল বা শিকড় মূল্যহীন৷
তদ্রূপ
ইমান ও ইসলাম একটি অন্যটি ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ হয় না৷ ইমান মানুষের অন্তরে
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অনুরাগ ও তাঁর সন্ত্তষ্টি লাভের বাসনা সৃষ্টি করে৷
আর তাতে ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে সজীব ও সতেজ হয়ে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে
বিকশিত হয় ইসলাম৷ ইসলাম হল ইমানের বহিঃপ্রকাশ৷ ইমান হল অন্তরের সাথে
সম্পৃক্ত৷ আর ইসলাম বাহ্যিক আচার আচরণ ও কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত৷
যেমনঃ আল্লাহ রাসুল ফেরেশতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বাস করা হল ইমান৷ আর সালাত যাকাত হজ ইত্যাদি বিষয় পালন করা হল ইসলাম৷ প্রকৃতপক্ষে
ইমান ও ইসলাম একটি অপরটির পরিপূরক৷ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে হলে
ইমান ও ইসলাম উভয়টিকেই পরিপূর্ণভাবে স্বীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে৷
ইমানের সাতটি মূল বিষয়?
ইমান অর্থ বিশ্বাস৷ একজন মুসলিমকে ইমানের কতগুলো মৌলিক বিষয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়৷ এগুলো আল - কুরআন ও হাদিস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত৷ এ বিষয়গুলোতে বিশ্বাস ব্যতীত কেউই মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না৷ এরূপ বিষয় মোট ৭টি৷ এগুলো হলঃ- আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস
- ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
- আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস
- ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
- আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস
- নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস
- মৃত্যুর পর পুনরুথানে বিশ্বাস
আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস
ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধার বিষয় হল আল্লহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস৷ আল্লহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়৷ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই৷ তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা৷ তিনি সকল গুণের আধার৷![]() |
ইমান |
তাঁর
সত্তা ও গুণাবলি তুলনাহীন৷ সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য
নির্ধারিত৷ আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন ইমানের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি৷ তাঁর নুরের তৈরি৷ তাঁরা সবসময় আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও হুকুম পালনে নিয়োজিত৷ তাঁদের সংখ্যা অগণিত৷ তাঁরা নারীও নন পুরুষও নন৷ তাঁরা পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত৷ তাঁদের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্তর্ভুক্ত৷আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস
আসমানি কিতাবসমূহ আলাহ তায়ালার বাণী৷ এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নিজ পরিচয় প্রদান করেছেন৷ নানা আদেশ নিষেদ বিধি বিধান সুসংবাদ সতর্কবাণী ইত্যাদিও এগুলোর মাধ্যমেই এসেছে৷আল্লাহ
তায়ালা তাঁর রাসুলগণের নিকট এসব কিতাব পাঠিয়েছেন৷ দুনিয়াতে সর্বমোট ১০৪
খানা আসমানি কিতাব নাজিল করা হয়েছে৷ এ সমস্ত কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করা আবশ্যক৷
আখিরাতে বিশ্বাস
আখিরাতে
হল পরকাল৷ আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী৷ এ জীবনের শুরু আছে কিন্ত শেষ নেই৷
সেখানে মানুষকে দুনিয়ার জীবনের সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে৷ কবর হাশর
মিযান সিরাত জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি আখিরাত জীবনের এক একটি পর্যায়৷
দুনিয়াতে
ভালো কাজ করলে মানুষ জান্নাত লাভ করবে৷ আর ইমান না আনলর অসৎ কাজ করলে
মানুষের স্থান হবে ভীষণ আযাবের স্থান জাহান্নাম৷ আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করা অপরিহার্য।
নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস
মানব জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন৷ নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা৷ সকল সৃষ্টির মাধ্যে তাঁরাই সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী৷ তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ৷ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁরা মানব জাতিকে মহান আল্লাহর পথে ডেকেছেন সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তির দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন৷ নবি-রাসুলগণের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷তকদিরে বিশ্বাস
তকদির অর্থ হল নির্ধারিত পরিমাণ ভাগ্য বা নিয়তি৷ আল্লাহ তায়ালা মানুষের তকদিরের নিয়ন্ত্রক৷ তিনিই তকদিরের ভালোমন্দ নির্ধারণকারী৷ মানুষ যা চায় তাই সে করতে পারবে না৷ বরং মানুষ শুধু তার কাজের জন্য চেষ্টা করার পরও কোন কিছু না পায় তবে হতাশ হবে না৷আর
যদি পেয়ে যায় তবুও খুশিতে আত্নহারা হবে না৷ বরং সবর (ধৈর্য) ধারণ করবে ও
শোকর আদায় করবে৷ আর তকদিরের ভালোমন্দ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে মনে
প্রাণে এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
মৃত্যুর পর পুনরুথানে বিশ্বাস
মৃত্যুর সাথে সাথেই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না৷ বরং মানবজীবন দুইভাগে বিভক্ত ইহকাল ও পরকাল ইহকাল হল দুনিয়র জীবন৷ আর পরকাল হণ মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে৷ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করবেন৷ সে সময় সকল মানুষ হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে৷ আল্লাহ তায়ালা সেদিন বিচারক হিসেবে মানুষের সকল কাজের হিসাব নেবেন৷অতঃপর
মানুষকে তার ভালো কাজের জন্য পুরুষ্কার স্বরূপ জান্নাত ও মন্দকাজের জন্য
শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে৷ সুতরাং মৃত্যুর পর আমরা সবাই
পিনরায় জীবিত হব এ বিশ্বাস রাখা ইমানের অপরিহার্য বিষয়৷