কুফর শব্দের অর্থ কি | কুফর কত প্রকার ও কি কি

কুফর শব্দের অর্থ কি?

কুফর (الكفر) শব্দের আভিধানিক অর্থ হল অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, ঢেকে রাখা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি৷

কুফর কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার মনোনীত দীন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর কোন একটির ও প্রতি অবিশ্বাস করাকে কুফর বলা হয়৷ 
কুফর
কুফর
কুফর হল ইমানের বিপরীত৷ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশ্বাসের নাম হল ইমান৷ আর এসব বিষয়ে অবিশ্বাস করা হল কুফর৷

কুফর কত প্রকার?

কুফুর প্রধানত ২ প্রকার। একটি হল অন্তরের কুফর। যা ঈমানের সম্পুর্ণ বিপরীত এবং অপরটি হল প্রকাশ্য কুফর যা ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত।

অন্তরের কুফর কি?

অন্তরের মধ্যে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকে এবং শিরকে পরিপূর্ণ অবিশ্বাস থাকে তবে ইহা হবে ঈমান। আর যদি অন্তরের মধ্যে তাওহীদে পরিপূর্ণ বিশ্বাস না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকে বিশ্বাস থাকে তবে ইহা হবে অন্তরের কুফর।

প্রকাশ্য কুফর কি?

কথায় ও কাজের মধ্যে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন থাকে এবং শিরকের পূর্ণ অস্বীকৃতি ও অবাস্তবায়ন থাকে তবে তা হবে ইসলাম। আর যদি কথায় কিংবা কাজে তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি বা বাস্তবায়ন না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের স্বীকৃতি কিংবা বাস্তবায়ন থাকে তবে তাই প্রকাশ্য কুফর।

প্রকাশ্য কুফর কত প্রকার?

প্রকাশ্য কুফর ২ প্রকার। একটি হল কথার কুফর। আর অপরটি হল কাজের কুফর।

কথার কুফর কি?

কথায় যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের স্বীকৃতি থাকে তবে তা কথার কুফর হবে।

কাজের কুফর কি?

কাজে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের বাস্তবায়ন থাকে তবে তা কাজের কুফর।

কুফরের রুপ কত প্রকার ও কি কি?

কুফরের রুপ দু্ই প্রকার হলেও এর রূপ প্রধানত তিনটিঃ
  • নিফাক
  • বাহ্যিক কুফর
  • পরিপূর্ণ কুফর

নিফাক কি?

যখন অন্তরে কুফরকে গোপন করে বাইরে ইসলাম পালন করা হয় তখন তাকে বলে নিফাক বলে। সহজ ভাষায় যখন শুধু অন্তরের কুফর বিদ্যমান থাকে। কিন্তু প্রকাশ্যে কুফর বিদ্যমান থাকে না তখন তাকে নিফাক বলে।

বাহ্যিক কুফর কি?

যখন শুধু প্রকাশ্য কুফর বিদ্যমান থাকে তখন তাকে বাহ্যিক কুফর বলা হয়।

পরিপূর্ণ কুফর কি?

যখন অন্তরের কুফর ও প্রকাশ্য কুফর উভয়ই বিদ্যমান থাকে তখন তাকে পরিপূর্ণ কুফর বলা হয়।

কাফির অর্থ কি?

কাফির অর্থ অবিশ্বাস অস্বীকারকারী৷

কাফির কাকে বলে?

যে ব্যক্তি কুফরে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় কাফির৷ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ইসলামের কোন মৌলিক বিষয়ে অবিশ্বাস করে তখন তাকে কাফির বলা হয়৷

কাফিরের বৈশিষ্ট্য সমূহ?

মানুষ নানা ভাবে কাফির বা অবিশ্বাসী হতে পারেঃ
  • আল্লহ তায়ালার অস্তিত্ব অবিশ্বাস বা অস্বীকার করার দ্বারা৷ 
  • অর্থাৎ আল্লাহ নেই এমন কথা বললে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে৷
  • আল্লহ তায়ালার গুণাবলি অস্বীকার করা৷ 
  • যেমনঃ আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা না মানা৷
  • ইমানের মৌলিক সাতটি বিষয়ে অবিশ্বাস করা৷ 
  • যেমনঃ ফেরেশতা, নবি-রাসুল, আসমানি কিতাব, আখিরাত, তকদির ইত্যাদি অবিশ্বাস করা৷
  • ইসালমের মৌলিক ইবাদাতগুলো অস্বীকার করা৷ 
  • যেমনঃ সালাত যাকাত, সাওম, হজ ইত্যাদিকে ইবাদত হিসেবে না মানা৷
  • হালালকে হারাম মনে করা৷ 
  • যেমনঃ হালাল খাদ্যকে হারাম মনে করে না খাওয়া৷
  • হারামকে হালাল মনে করা৷ 
  • যেমনঃ মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদিকে হালাল বা জায়েজ মনে করা৷
  • ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের অনুকরণ করা তাদের ধর্মীয় চিহ্ন ব্যবহার করা৷
  • ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করা৷ 
  • যেমনঃ মহানবি (স.) কিংবা কুরআনকে নিয়ে ঠাট্টা উপহাস করা৷
উপরোল্লিখিত কাজগুলো করার মাধ্যমে মানুষ কাফির হয়ে যায়৷ এমতাবস্থায় পুনরায় ইমান আনতে ও খাঁটি মনে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এরূপ ঘৃণ্য কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে৷

কুফরের কুফল ও পরিণতি?

মানবজীবনে কুফরের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ৷ কুফরের ফলে শুধু দুনিয়াতেই নয় বরং আখিরাতেও মানুষকে শোচনীয় পরিণত বরণ করতে হবে৷ এর কতিপয় কুফল নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
  • অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা
  • পাপাচার বৃদ্ধি
  • হতাশা সৃষ্টি
  • অনৈতিকতার প্রসার
  • আল্লাহ তায়ালার অন্তুষ্টি
  • অনন্তককলের শাস্তি

অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা

কুফর মানুষের মধ্যে অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়৷ আল্লহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা৷ তিনিই আমাদের লালন পালন করেন৷ পৃথিবীর সকল নিয়ামত তাঁরই তান কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে অবিশ্বাস করে এসব নিয়ামত অস্বীকার করে৷ সে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়৷ আল্লাহ তায়ালার বিধি নিষেধ অমান্য করে৷ ফলে সমাজে সে অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত হয়৷

পাপাচার বৃদ্ধি

কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা পরকাল হাশর মিযান জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি অবশ্বিস করে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে মানুষেকে তার কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে এরূপ ধারণাও অস্বীকার করে৷ তার নিকট৷ মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে মানুষকে তার কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে এরূপ ধারণাও অস্বীকার করে৷

তার নিকট দুনিয়ার জীবনই প্রধান৷ সুতরাং দুনিয়ায় ধন সম্পাদের ও আরাম আয়েশের লোভ সে নানারকম অসৎ ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে৷ চুরি ডাকতি ছিনতাই সন্ত্রাস  সুদ-ঘুষ জুয়া ইত্যাদিতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ফলে সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়৷

হতাশা সৃষ্টি

স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভরসা করতে পছন্দ করে৷ আশা ভরসা না থাকলে মানিষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে না৷ কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তকদির অবিশ্বাস করে৷ ফলে সে যেকোনো বিপদে আপদে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে৷ 

মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্যধারণ করতে পারে না৷ অন্যদিকে তকদিরে বিশ্বাস না থাকায় যেকোনো ব্যর্থকায় সে চরস হতাশ হয়ে পড়ে৷ ফলে তার জীবন চরম হতাশাগ্রস্তভাবে অতিবাহিত হয়৷

অনৈতিকতার প্রসার

কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়৷ আখিরাত জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস না থাকায় কাফির ব্যক্তি নৈতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না এবং দুনিয়ার স্বার্থে মিথ্যাচার অনাচার ব্যভিচার ইত্যাদি যেকোনো পাপ ও অনৈতিক কাজই সে বিনা দ্বিধায় করতে পারে৷ 

 নবি-রাসুলগণকে বিশ্বাস না করায় তাঁদের নৈতিক চরিত্র এবং শিক্ষাও সে অনিসরণ করে না৷ এভাবে কুফরের মাধ্যমে সমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটে৷

আল্লাহ তায়ালার অন্তুষ্টি

কুফরির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিশ্বাস অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা সৃষ্টি হয়৷ কাফির আল্লাহ তায়ালার বিধি বিধান ও আদেশ নিষেধের কোনো পরোনো করে না৷ বরং আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ও মিসলমানদের সাথে বিদ্রোহ ও বিরোধীতা করে৷ ফলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন৷ 

আর যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন সে যত ক্ষমতা ও সম্পাদের মালিক হোক না কেন তার ধবংস অনিবার্য৷ অনন্তককলের শাস্তি পরকালে কাফিররা জাহান্নামের যন্ত্রণাধায়ক শাস্তি ভোগ করবে৷ তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

 وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ 

অর্থঃ যারা কুফরি করবে এবং আমার নিদর্শনহুলোকে অস্বীকার করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী৷ সেখানে তারা চিরদিন থাকবে৷ (সূরা আল-বাকারা, আয়ত ৩৯)। 

পরিশেষে বলা যায় কুফর একটি মারাত্নক পাপ। এ থেকে সকলেরই বেঁচে থাকা উচিত৷
Next Post