শুক্রবারের আমল
মুসলমানদের জন্য পবিত্র জুমা এবং জুমাবারের রাত ও দিনের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে। জুম্মার দিনটির গুরুত্ব বুঝাতে পবিত্র কোরআন শরিফে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমুআ, আয়াতঃ ১০)
![]() |
শুক্রবারের আমল |
জুমার নামাজ হলো ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। জুমু’আহ হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া ও কাতারবদ্ধ হওয়া। যেহেতু শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ আদায় করেন।
আর তাই এ নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় যাওয়ার পর একবার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। তারা বললেন , ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট আছে। যে দিনে তারা সকলেই একত্রিত হন। নাসারারা প্রতি সপ্তাহে একদিন একত্রিত হন।
সুতরাং আমাদের জন্যও সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সকলে সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব এবং নামাজ আদায় করব। অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন (সীরাতুল মুস্তাফা এবং দরসে তিরমিজি)।
শুক্রবারের আমল?
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি আমল। তাহলোঃ- আগে আগে ঘুম থেকে উঠা।
- বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা।
- আগে আগে মসজিদে আসা।
- তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা।
- বেশি বেশি দোয়া করা কারণ জুম্মার। দিনে দোয়া অধিক পরিমাণে কবুল হয়।
- কাতার ভেঙে সামনে যাওয়া নিষেধ।
- সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা
- গোসল করা।
- হেঁটে মসজিদ যাওয়া।
- খুতবার সময় চুপ থাকা।
জুমার দিনের ফজিলত?
হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। আর তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে এবং খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন। (মুসলিম, হাদিস ৮৫৬)।যে কারণে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ?
ইসলামি ইতিহাসে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জুমার দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার ৫টি কারণ উল্লেখ করেছেনঃ- আল্লাহ তাআলা এই দিনে প্রথম মানব হজরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন।
- জুমার দিনে আদম (আঃ) কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।
- জুমাবারে হজরত আদম (আঃ) কে মৃত্যু দিয়েছেন।
- এ দিনে এমন একটি সময় আছে, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা কুবল করবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না।
- সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৯৫)।
জুমার দিনের আমল?
হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, জুমার দিনের কিছু কাজ করে সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমনঃ গায়ের অবাঞ্চিত লোম পরিস্কার করা, উত্তম রূপে গোসল করা, নখ কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। জুমার নামাজ পরতে এসে অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যাওয়া।নির্ধারিত নামাজ আদায় করা। এরপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত সর্বদা চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)।