সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম | সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন।আজকের পোস্টে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু তুলে ধরব। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন জিনিস অথবা বিভিন্ন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। 
সালাতুল হাজত নামাজ
সালাতুল হাজত নামাজ

মানুষ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌তালার সৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার মূল কারণ হচ্ছে নিজের ইচ্ছা বা প্রয়োজনের কথা আল্লাহ্‌তালার কাছে জানানো বিভিন্ন বিপদের হাত থেকে আল্লাহ্‌র কাছে রক্ষা চেয়ে প্রার্থনা করা।

আমাদের সকলের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছুর প্রয়োজন হলেই সালাতুল হাজত নামাজ পরতেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম?

‘’সালাত’’ অর্থ ‘’নামাজ’’ এইটা আমরা সকলেই জানি।কিন্তু হাজত অর্থ কি?হাজতের অনেক গুলো অর্থ রয়েছে মূলত “হাজত’’ অর্থ হচ্ছে “ইচ্ছা” অথবা “প্রয়োজন”। অর্থাৎ সালাতুল হাজত অর্থ হচ্ছে,ইচ্ছা বা প্রয়োজন জন্য নামাজ। 

সালাতুল হাজত বলতেই প্রয়োজনে নামাজ পড়া বুঝায়।তাই বৈধ যে কোনো প্রয়োজন  পূরণের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। (ইবনে মাজাহ)।  

সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়?

সালাতুল হাজত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’ একটি বিশেষ নফল ইবাদত। মানুষের বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে এ নামাজ পড়তে হয়। সালাতুল হাজত একটি সাধারণ নফল নামাজ সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।

কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন আসে যে অন্যান্য নফল নামাজের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে,তবে সালাতুল হাজত নামাজ এর কি নির্দিষ্ট কোন সময় আছে কিনা? এর উত্তর হলো যে, সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।

নিজের যেকোনো প্রয়োজনে ধারাবাহিকভাবে সারাজীবন সালাতুল হাজত পড়া যায়। আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, “সঙ্গত কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর কাছে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে’। (সূরা বাকারা,আয়াতঃ১৫৩)।

অনেক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে,হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনের বিভিন্ন বিপদ-আপদ অপ্রয়োজনীয়তা আল্লাহ্‌ তাআলার সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতেন। সালাতুল হাজত নামাজ নফল নামাজ, নফল তাই এই নামাজ যেকোন ওয়াক্তে পড়া যাবে।

সালাতুল হাজত নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ বা ইবাদত,তাই এই নামাজের নিয়তও নফল কথাটি উল্লেখ করতে হবে। আরবিতে নিয়ত করার মূল কারণ হচ্ছে, আরবি হরফ বা অক্ষর পাঠ করলে প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকি আপনার আমল নামায় যুক্ত হবে, বিশেষ করে কুরআনের আয়াত অথবা হাদিস পাঠ।

উচ্চারণঃ

নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিহ-লিল্লাহি তা’আলা আরবা রাক’আতাই সালাতুল হাজত সালাতি নফলি রাসুলিল্লাহি তা’য়াল মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।”

অর্থঃ “হে আল্লাহ!আমি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাতুল হাজতের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তেছি।

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়ার অর্থ?

অর্থঃ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু, সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র তিনি। মহান আরশের প্রভু।সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, তিনি সারা জাহানের রব।আপনার রহমত আকর্ষণকারী সকল পুণ্যকর্মের অসিলায়, আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সকল কাজের বরকত, সকল নেক আমলে সাফল্য লাভের এবং সব ধরণের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। 

আমার কোনো গুনাহ যেন মাফ ছাড়া না থাকে। কোনো সমস্যা যেন সমাধান ছাড়া না রয়ে যায়।আর আমার এমন প্রয়োজন যাতে রয়েছে আপনার সন্তুষ্টি রয়েছে,তা যেন অপূরণ না থাকে। হে সর্বশ্রেষ্ট দয়ালু। (তিরমিজি,হাদিসঃ ৪৭৯;ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ১৩৮৪)।

সুতরাং দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিস শরিফে বর্ণিত উপরোক্ত দোয়াটি অন্যান্য দোয়ার সাথে সাধারণ নামাজের শেষেও বিশেষভাবে পড়া যেতে পারে। এই দোয়াটি পড়তেই হবে বিষয়টি এমন নয়। আপনি আপনার মত করে দোয়া করলেও কোনো অসুবিধা নেই।

সালাতুল হাজত নামাজ কত রাকাত?

নফল নামাজ আমরা যেভাবে দু রাকাত দু রাকাত করে পড়ি সেভাবেই সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে হবেঃ
  • সর্বপ্রথম ওজু করে পবিত্রতা অর্জন করার পর কেবলা মুখী হয়ে জায়নামাজে দাঁড়াবে
  • তারপর নামাজের নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করতে হবে
  • এরপর তাকবীরে তাহরীমা, ছানা-তাশাহুদ পাঠ করার পর সালাতুল হাজত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
  • এরপর রুকু সিজদা করে একইভাবে বাকি দু রাকাত নামাজ পড়তে হবে।
  • সালাতুল হাজত নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ এর পর সালাম ফিরানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তির মাধ্যমে তুলে ধরে উক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
নামাজ শেষে আল্লাহ তা’আলার হামদনাত ও সানা বা প্রশংসা এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে আপনার মনের কথা বা আপনার প্রয়োজনের কথা আল্লাহ্‌র নিকট দোয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।

সালাতুল হাজত নামাজের পর দোয়া?

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।আসআলুকা মুজিবাতি রহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরবিউ ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি-জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা  ইয়া আর-হামার রা-হিমিন।

সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা?

সালাতুল হাজত নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিপদগ্রস্ত হলে বা প্রয়োজনের জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আল্লাহ্‌র নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতেন এবং তিনি তাঁর সাহাবাদেরকে তাদের বিপদ আপদ অথবা প্রয়োজনের কথা আল্লাহ্‌র নিকট জানার জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়া জন্য উৎসাহ দিতেন।

এক হাদিসে এসেছে হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলাআনহু বর্ণনা করেন যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় চলে আসতো তখন তিনি সাথে সাথে আল্লাহ্‌তায়ালার দরবারে সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার আশ্রয় বা সাহায্য কামনা করতেন।

অর্থাৎ সকল মুসলমান মুমিন ব্যাক্তিদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বা পারিবারিক যেকোনো ধরণের বিপদে পড়লে বা কোন প্রয়োজন পড়লে ধৈর্যের সাথে আল্লাহ্‌ তা’আলার ইবাদত করা এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয় চাওয়া উচিত।

সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা হচ্ছে সকল প্রকার বিপদ থেকে আল্লাহ্‌ তা’আলা রক্ষা করেন কেননা, একমাত্র আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।

কারণ যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না,তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ্‌।তিনিই পারেন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন তিনি পারে মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে। 

এক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বিপদ থেকে মুক্তি পেতে নামাজ পড়া।এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ্‌ তা’আলার আমাদের লালন-পালন করেন আমাদের রিজিকের মালিক তিনি এবং আমাদের প্রত্যেকটি প্রয়োজন একমাত্র তিনিই পূরণ করতে পারেন। 

মানুষের জীবনে চলার পথে প্রত্যেকটি ধাপে বিপদ রয়েছে সে থেকে রক্ষার জন্য নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয় চাওয়া আমাদের করণীয়।

সালাতুল হাজত নামাজের মোনাজাত?

উচ্চারনঃ রব্বানা আ’তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! দুনিয়ায় আমাদেরকে কল্যাণ ও ভালাই দান করো এবং পরকালেও কল্যাণ ও ভালাই দান করো। আর জাহান্নামের আগুনের শাস্তি হতে বাঁচাও।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম,সঠিক সময়, নিয়ত আরবিতে, দোয়ার অর্থ, কত রাকাত, নামাজের পরের দোয়া, উপকারিতা, মোনাজাত এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। 

তারপরেও যদি এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Next Post Previous Post