শবে কদরের রাতে কি কি আমল করব
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ, অনেক দ্বীনী ভাই রয়েছেন যারা সহীহ নিয়মে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করতে ইচ্ছুক হয়ে আছেন।এবং অনেক ভাই আমাদেরকে প্রশ্ন করে থাকেন যে, লাইলাতুল কদরে আমরা কি কি ইবাদত করতে পারি।
![]() |
শবে কদর |
এই সকল ভাই এবং সমস্ত মুসলিম ভাইদের জ্ঞাতার্থে সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ
প্রথমত
মহান আল্লাহ তাআ’লা আমাদের বলে দিয়েছেন যে, এই রাত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। (আল্ মিসবাহ আল্ মুনীর/১৫২১) তাই এই গুরুত্বপূর্ণ রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করাই হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত
জানা দরকার যে ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত হল প্রত্যেক এমন আন্তরিক ও বাহ্যিক কথা ও কাজ। যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। (মাজমুউ ফাতাওয়া,১০/১৪৯)।
উক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যেতে পারে যে, ইবাদত বিশেষ এক থেকে দুটি কাজে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আমরা সবাই একাধিক ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি অতিবাহিত করতে পারি। নিচে কিছু উৎকৃষ্ট ইবাদত উল্লেখ করা হলঃ
১. ফরয নামায সমূহ ঠিক সময়ে জামাআ’তের সাথে আদায় করা
যেমন মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামায। তার সাথে সাথে সুন্নতে মুআক্কাদা, তাহিয়্যাতুল মসজিদ সহ অন্যান্য মাসনূন নামায আদায় করা।২. কিয়ামে লাইলাতুল্ কদর করা
অর্থাৎ রাতে তারবীহর নামাজ আদায় করা। নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে (নামায পড়বে) তার বিগত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [ফাতহুল বারী,৪/২৯৪] এই নামায জামাআতের সাথে আদায় করা উত্তম।অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে ইমাম দীর্ঘ কিরাআতের মাধ্যমে নামায সম্পাদন করতে পারেন। ইশার পর প্রথম রাতে কিছু নামায পড়ে বাকী নামায শেষ রাতে পড়াতে পারেন। একা একা নামায আদায়কারী হলে সে চাইলে তার ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়তে পারে।
৩. কুরআন তিলাওয়াত
কুরআন পাঠ করা হচ্ছে মূলত একটি বাচনিক ইবাদত, যা দীর্ঘ সময় ধরে পাঠ করা যেতে পারে। যার এক একটি অক্ষর পাঠে রয়েছে এক একটি নেকী। নবী (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পড়বে, সে তার বিনিময়ে একটি নেকী পাবে।আমি একথা বলছি না যে, আলিফ,লাম ও মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। [তিরমিযী, তিনি বর্ণনাটিকে হাসান সহীহ বলেন] এছাড়া যদি কুরআন কিয়ামত দিবসে আপনার সুপারিশকারী হয়।
তাহলে কতই না সৌভাগ্যের বিষয়। নবী (সা.) বলেন, তোমরা কুরআন পড়, কারণ সে কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে। [মুসলিম]
৪. বেশী বেশী দুআ করা
তন্মধ্যে সেই দুআটি বেশী বেশী পাঠ করা যা নবী (সাঃ) মা আয়েশা (রাযিঃ) কে শিখিয়েছিলেন। মা আয়েশা নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন। হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দুআ করবো?তিনি (সা.) বলেন, বলবে, (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা’ফু আন্নী। অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ কর, তাই আমাকে ক্ষমা কর। (আহমদ,৬/১৮২])
এছাড়াও বান্দা পছন্দ মত দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যাবতীয় দুআ করবে। সে দুআ গুলো প্রমাণিত আরবী ভাষায় দুআ হোক কিংবা নিজ ভাষায় হোক। এ ক্ষেত্রে ইবাদতকারী একটি সুন্দর সহীহ দুআ সংকলিত দুআর বইয়ের সাহায্য নিতে পারে।
সালাফে সালেহীনদের অনেকে এই রাতে অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে দুআ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ এতে বান্দার মুক্ষাপেক্ষীতা, প্রয়োজনীয়তা এবং বিনম্রতা প্রকাশ পায়, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।
৫. যিকর আযকার ও তাসবীহ তাহলীল করা
অবশ্য এগুলো দুআরই অংশ বিশেষ। কিন্তু বিশেষ করে সেই শব্দ ও বাক্য সমূহকে যিকর বলে, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা হয়। যেমন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আল্ হামদু ল্লিল্লাহ, আল্লাহুআকবার, আস্তাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ ইত্যাদি।৬. সাধ্যমত আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান-সাদকা করা
নবী (সা.) বলেন, সাদাকা পাপকে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। [সহীহুত তারগবি] শবে কদরের একটি রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আপনি ৮৩ বছর ৪ মাসের সমান সওয়াব অর্জন করতে পারেন।
ইবাদতের এই সুবর্ণ সুযোগ যেন কারও হাত ছাড়া না হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দিন। আমীন। উল্লেখ রয়েছে যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে বৈষয়িক কাজ কর্মও ইবাদতে পরিণত হয়।
যেমন রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খাওয়া ইফতার খাওয়া এবং রাত জাগার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম সেরে নেওয়া। তাই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বান্দা যেসমস্ত দুনিয়াবী কাজ করে সেগুলোও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।