রোজা রাখার উপকারিতা
পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমরা ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন। এতে করে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়।
![]() |
রোজা রাখার উপকারিতা |
যার কারণে আমাদের শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিচে রোজা রাখার উপকারীতাগুলো তুলে ধরা হলঃ
মস্তিষ্কের কার্যক্রম বৃদ্ধি
রোজা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরের ওপর যেমনঃ চাপ বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনিভাবে এই চাপ মস্তিষ্কের ওপরও অনেক প্রভাব পড়ে।বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণায় দেখেছেন, রোজার মাধ্যমে আমাদের যে মানসিক পরিবর্তন আসে, এতে মস্তিষ্ক থেকে এক ধরনের নিউরোট্রিফিক ফ্যাক্টর নিঃসৃত হয়। যা অধিক নিউরন তৈরিতে সাহায্য করে।।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা করে
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, মাঝে মধ্যে রোজা, উপবাস অথবা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে।আমাদের সকলের প্রিয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন রোজা রাখতেন। এছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
কিডনি ভালো থাকে
কিডনির মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রতি মিনিটে ১ থেকে ৩ লিটার রক্ত সঞ্চালিত হয়ে থাকে। যাইহোক কিডনির কাজ হচ্ছে আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো প্রস্রাব আকারে মূত্রথলিতে প্রেরণ করা।আর রোজা অবস্থায় কিডনি বিশ্রাম পায়। যার ফলে এ সময় কিডনি বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
লিভারের ওপর প্রভাব
রোজার সময় সেহেরিতে আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তা থেকে ও লিভারে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন থেকে সারা দিনের উপোবাসের সময় রক্তে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সঞ্চালিত হয়ে থাকে।লিভারের গ্লাইকোজেন স্টোরেজ শেষ হয়ে গেলে লিভার এবং অ্যাডিপোজ টিস্যুতে জমা চর্বি বিপাকের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ হয়।
যার ফলে রমজানে একজন রোজাদারের জন্য লিভারের ফ্যাট এবং শরীরের বাড়তি ওজন কমার সুযোগ তৈরি হয়। যাঁদের লিভারে ফ্যাট জমা হয়েছে, তাঁদের জন্য রোজা রাখাই উত্তম।
পরিপাকপ্রক্রিয়া কার্যকর হয়
রোজার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিবারণ হয় না, বরং ধীরে ধীরে ক্ষুধার প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। যার ফলে রমজান মাস শেষে ক্ষুধার মাত্রাও কমে আসে। খাদ্যনালির পরিপাকপ্রক্রিয়া আরো বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে ও খাদ্যদ্রব্য থেকে বেশি পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।তাছাড়া রোজা রাখার ফলে আগের চেয়ে আরো দক্ষভাবে কাজ করতে শুরু করে পাকস্থলী। সবল হয় হজমযন্ত্র। ইফতারে পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে খুব সহজেই গ্রহণ করে শরীর।
অ্যাডিপোনেকটিন নামের হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা মাংসপেশিগুলোকে খাবার থেকে আরো বেশি পুষ্টিকর উপাদান শোষণে সক্ষম করে তোলে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা অনেক উপকারী। কারণ হচ্ছে রোজা রাখা অবস্থায় আমাদের দেহে নানা ধরনের ইনসুলিন তৈরি হয়। যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরী।হার্ট ভালো থাকে
রোজা আমাদের দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। এতে করে আমাদের রক্তনালিতে জমে থাকা চর্বির উপাদানগুলো কমতে থাকায় হার্ট ব্লকের মতো ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।আর তাই যাঁদের ওজন বেশি রয়েছে এছাড়াও যাঁদের রক্তে চর্বির পরিমাণ অথবা কোলেস্টেরল লেভেল বেশি, তাঁরা রোজা রেখে শারীরিক ওজন কমানোসহ নানা ধরনের উপকার পেতে পারেন।
আর এতে করে শরীরের চর্বি ও মেদ-ভুঁড়ি কমানো যায়। যদি না আপনি ইফতার এবং সেহেরিতে মাত্রাতিরিক্ত গুরুপাক এবং তৈলাক্ত খাবার না খান।
বদ-অভ্যাসগুলো এড়ানো যায়
রোজা একজন মানুষের শুধু পাকস্থলী কিঋবা হৃৎপিণ্ডকে সক্রিয়ই রাখে না, বরং অন্য অনেক ধরনের রোগের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে রোজার সময় ধূমপান এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন বন্ধ থাকে বিধায় ক্যান্সার, হার্ট ফেইলিওর ও স্ট্রোকের মতো জটিল রোগগুলোর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই ধূমপান ছাড়তে পারি না। তাঁদের জন্য মাহের রমজান মাস উত্তম সময়। আর এই রমজান মাসে ধূমপানের মতো ক্ষতিকর এবং বদ-অভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন।
শেষকথা, ‘বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম ও স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন।