তাওহীদ কি | তাওহীদ কত প্রকার কি কি | তাওহীদ বিষয়ক আলোচনা

তাওহীদ শব্দের অর্থ কি?

তাওহিদ শব্দটি (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ৷

তাওহীদ কী?

ইসলামি শরিয়তের শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করে নেওয়াকে তাওহিদ বলা হয়৷ 

তাওহীদ এর বিপরীত শব্দ কি?

তাওহীদের বিপরীত শব্দ হল শির্‌ক।

তাওহীদ
তাওহীদ

তাওহীদ কত প্রকার?

মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহিদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেনঃ
  • তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ
  • তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ
  • তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ কি?

সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসাবে বিশ্বাস করার নামই তাওহীদে রুবূবীয়্যাহ।

তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ কি?

এককভাবে আল্লাহর ইবাদাত করার নামই হল তাওহীদে উলুহিয়্যাহ। 

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত কি?

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ নিজেকে যে সকল নামে নামকরণ করেছেন এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সকল গুণে গুণাম্বিত করেছেন সে সকল নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মেনে নেওয়া। 

আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন, তাতে কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, তার ধরণ বর্ণনা ও কোন রূপ উদাহরণ পেশ করা ব্যতীত আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করার মাধ্যমেই এ তাওহীদ বাস্তবায়ন হতে পারে। সুতরাং আল্লাহ নিজেকে যে নামে পরিচয় দিয়েছেন কিংবা নিজেকে যে গুণাবলীতে গুণান্বিত করেছেন, তাঁর ওপর ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হবে।

তাওহীদের মূল শিক্ষা কি?

তাওহিদের মূল কথা হল আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়৷ তিনি তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে অদ্বিতীয়৷ তিনিই প্রশংসা ও ইবাদতের একমাত্র মালিক৷ তাঁর তুলনীয় কেউ নেই৷  আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
                                                                                                                                                   لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَىْءٌ

অর্থঃ কোন কিছুই তার সদৃশ নয়৷ (সূরা আশ শুরা আয়াত ১১)।

আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা রিজিকদাতা ও ইবাদতের যোগ্য এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাসের নামই তাওহিদ৷

তাওহীদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর?

ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হল তাওহিদ৷ অর্থাৎ মুমিন বা মুসলিম হতে হলে একজন মানুষকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস করতে হবে৷ তাওহিদে বিশ্বাস ব্যতীত কোন ব্যক্তিই ইমান বা ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না৷ ইসলামের সকল শিক্ষা ও আদর্শই তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত৷ দুনিয়াতে যত নবি রাসুল এসেছেন সকলেই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন৷ 

সকলের দাওয়াতের মূলকথা ছিলঃ لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই৷ তাওহিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য নবি রাসুলগণ আজীবন সংগ্রাম করেছেন৷ হযরত ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন৷ 

আমাদের প্রিয়নবি (স.)৷ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন৷ বস্তুত তাওহিদই হল ইমানের মূল৷ ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম৷

মানব জীবনে তাওহীদের প্রভাব?

তাওহিদ হল আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস৷ মানব জীবনে এ বিশ্বাসের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক৷ তাওহিদে বিশ্বাস মানিষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়৷ কেননা আল্লাহ তায়ালাই আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা৷ তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ৷ সত্যকে স্বীকার করে নেয়৷ মানুষ এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করে৷

তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে আত্মসচেতন ও আত্মমর্যাদাবান করে৷ মানুষ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারও নিকট মাথা নত করে না৷ ফলে জগতের সকল সৃষ্টির উপর মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়৷ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেবা জীব হিসেবে মর্যাদা লাভ করে৷

সৎচরিত্রবান হওয়ার ক্ষেত্রেও মানবজীবনে তাওহিদের প্রভাব অপরিসীম৷ মানুষ আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি ও পরিচয় লাভ করে এবং সেসব  গুণে গুণান্বিত হওয়ার অনুশীলন করে৷ মানব সমাজে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায়ও তাওহিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ 

কেননা তাওহিদে বিশ্বাস মানব সমাজে এ ধারণা প্রতিষ্ঠা করে যে সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা ও সমান মর্যাদার অধিকারী৷ এভাবে মানুষের মধ্যে ঐক্যের চেতনা জাগ্রত হয়৷ তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে ইবাদত ও সৎকর্মে উৎসাহ করে৷ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষ সৎকর্মে ব্রতী হয়৷ অসৎ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে৷ 

যার ফলে মানব সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠান হয়৷ তাওহিদে বিশ্বাস পরকালীন জীবনে মানুষকে সফলতা দান করে৷ তাওহিদে বিশ্বাস ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না৷ বস্তুত মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রেই তাওহিদে বিশ্বাস মুক্তি ও সফলতার দ্বারা উন্মুক্ত করে৷
Next Post Previous Post