শিরক অর্থ কি | শিরক কত প্রকার | শিরকের কুফল ও পরিণতি ব্যাখ্যা কর
শিরক অর্থ কি?
শিরক (اَلشِّرْكُ) শব্দের অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা, একাধিক স্রষ্টা বা উপাস্যে বিশ্বাস করা।শিরক কি?
ইসলামি পরিভাষায় মহান আল্লাহর সাথে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে শিরিক করা কিংবা তাঁর সাথে সমতুল্য মনে করাকে শিরক বল হয়৷ যে বক্তি শিরক করে তাকে বলা হয় মুশরিক৷ শিরক হল তাওহিদের বিপরীত৷ আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং শিরকের ধারণা খন্ডন করেছেন তিনি বলেনঃقُلْ هُوَاللّٰهُ اَحَدٌ
অর্থঃ বলুন (হে নবি) তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়৷ (সূরা আল ইখলাস আয়াত ১)৷
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَىْءٌ
অর্থঃ কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়৷ (সূরা আশ শুরা আয়াত ১১) আল কুরআন আরও বলা হয়েছেঃ
لَوْ كَانَ فِيْهِمَآ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا
অর্থঃ যদি সেথায় (আসমান ও জমিনে) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয় যেতে৷ (সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ২২)।
আল কুরআনের এসব আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণে অতিলনীয়তার বিষয়টি বোঝা যায়৷ সুতরাং আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে অংশীদার করা নিঃসন্দেহে শিরক ও জঘন্য অপরাধ৷
আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক চার ধরনের হতে পারে৷ যথা আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও অস্তিত্বে শিরক করা৷ যেমন ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র মনে করা৷
![]() |
শিরকের কুফল ও পরিণতি ব্যাখ্যা কর |
আল্লাহ তায়ালার গুণাবলিতে শিরক করা৷ যেমন আল্লাহ তায়ালার পাশাপাশি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা মনে করা৷ সৃষ্টি জগতের পরিচালনায় কাউকে আল্লাহর অংশীদার বানানো৷ যেমন ফেরেশতাদের জগৎ পরিচালনাকারী হিসেবে মনে করা৷
ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করা৷ যেমন আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদাহ করা কারও নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি৷
শিরক কত প্রকার?
শিরক দুই প্রকারঃ- শিরকে আকবর
- শিরকে আসগার
শিরকে আকবর
সরাসরি আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরিক করা। যেমনঃ কাউকে ইবাদতমূলক আহ্বান করা। এছাড়াও আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবাই কিংবা কুরবানি করা, কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক জানা ও মানা।শিরকে আসগার
শিরকে আকবর নয় এমন যেসব কাজকে শরিয়তে সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা শিরক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে আর সেগুলোই শিরকে আসগার। শিরকে আসগর হচ্ছে এমন সব কথা কিংবা কাজ যা বাহ্যিকভাবে গাইরুল্লাহকে আল্লাহ তায়ালার সাথে সমান করে নেওয়া।শিরকের কুফল ও প্রতিকার?
শিরক অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ৷ পৃথিবীর সকল প্রকার জুলুমের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল শিরক৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃاِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ٥
অর্থঃ নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম৷ (সূরা লুকমান আয়াত ১৩)
বস্তুত আল্লাহ তায়ালাই আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক৷ তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতই আমরা ভোগ করি৷ এরপরও কেউ যদি আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করে তবে তা অপেক্ষা বড় জুলুম আর কি হতে পারে৷
আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট৷ তিনি অপার ক্ষমাশীল ও অসীম দয়াময় হওয়া সত্ত্বেও শিরকের অপারাধ ক্ষমা করেন না৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْغِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَـا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَـآءُ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত যেকোনো পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন৷ (সূরা আন নিসা আয়াত ৪৮)।
বস্তুত আল্লাহ তায়ালার দয়া ক্ষমা ও রহমত ব্যতীত দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়৷ পরকালে মুশরিকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷ আল কুরআন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
اِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدْحَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَـاْوٰـهُ النَّـارُ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দেবেন৷ এবং তার আবাস জাহান্নাম৷ (সূরা আল মায়িদা আয়াত ৭২)।
প্রকৃতপক্ষে শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ৷ এরূপ কাজ থেকে সকলেরই সদাসর্বদা সতর্ক থাকতে হবে৷ ভুলক্রমে আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করে ফেললে সাথে সাথে পুনরায় ইমান আনতে হবে৷ অতঃপর বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে৷
সাথে সাথে ভরিষ্যতে এরূপ পাপ না করার শপথ গ্রহণ করতে হবে৷ তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা স্বীয় দয়া ও করুণার মাধ্যমে পাপ ক্ষমা করে দিতে পারেন৷ আমরা অবশ্যই শিরক থেকে বেঁচে থাকব এবং আল্লাহর উপর সুদৃঢ় ইমান এনে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হব৷ তাহলেই আমাদের ইহকাল ও পরকাল মঙ্গলময় হবে৷