শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত | শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম জানতে অনেকেই জিজ্ঞাসু মনোভাব নিয়ে জানার চেষ্টা করে থাকে। কেননা হাদীস গ্রন্থ ইবনে মাজাহ ও বায়হাকির রেওয়াত থেকে শবে বরাতের বহু নিয়ামতের কথা জানা যায়।
![]() |
শবে বরাত |
সেগুলো হলো, পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ মাগরিবের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে এসে ঘোষণা করেন। আছে কি এমন কোনো মানুষ যে তার গুনাহ মাফের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে?
আমি তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেব। এমন কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী আছে কি, যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেব।
আছে কি এমন কোনো বিপদগ্রস্ত, যে আমার কাছে মুক্তি চাইবে বিপদ থেকে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। আর এভাবেই সারারাত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত বরকতের ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দার ওপর বৃষ্টির মতো রহমত নাজিল হতে থাকে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম?
ইসলামি শরীয়তে শবে বরাতের নামাজ বলে বিশেষ কোনো নামাজ নেই। এ নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মতামত হলো, অন্য সময় সব মুসলিমরা যেভাবে নামাজ পড়ে থাকে ঠিক সেভাবেই শবে বরাতের নামাজ আদায় করবে।তবে বিভিন্ন লেখক তাদের বই পুস্তকে শবে বরাতের বিশেষ নামাজ উল্লেখ করে নিয়ম-রীতি ও নির্ধারিত রাকাত নামাজের কথা লিখেছেন। এমনকি বিশেষ সূরা-দোয়া এবং তাসবিহ দ্বারা শবে বরাতের নামাজ আদায় করার নিয়মও লেখা আছে বইগুলোতে।
সত্যিকার অর্থে এসবের কোনো ভিত্তি নেই ইসলামি শরীয়তে। তবে এশার নামাজের জামাত শেষ হলে সারারাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে, কেননা সারা জীবনে কাজা হয়ে যাওয়া নামাজগুলো আদায়ের সুযোগ রয়েছে পবিত্র এ রজনীতে।
এছাড়াও আপনি চাইলে সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ পড়তে পারেন, এই নামাজেরও অনেক ফজিলত রয়েছে।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত?
একজন ব্যক্তি চাইলে দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় নামাজ আদায় করবে। চাইলে চার রাকাত করেও শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে পারবেন।এর পাশাপাশি শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়তি কোনো দোয়া বা সূরা পড়ার দরকার নেই, যে যেই সূরা দিয়ে সম্ভব হয় সেই সূরা দিয়েই শবে বরাতের নামাজ পড়বে। ঠিক এভাবে শবে বরাতের জন্য অন্যান্য সব আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা বা দোয়া নেই।
স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যতটুকু পারেন নামাজ পড়তে পারেন। শবে বরাতের ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ৮/১০/১২/১৪/১৬ বা আরও বেশি রাকাত নামাজ পড়তে পারেন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত?
নফল আমলের জন্য জামায়াতের সহিত মসজিদে এসে দলে দলে সমবেত হওয়ার প্রমাণ রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় বা কোনো হাদিস শরিফেও নেই। আর তাই সাহাবায়ে কেরামের যুগে এসব নফল ইবাদতের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়ার কোনও রেওয়াজ ছিল না।আর তাই শবে বরাতের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আপনি সাধারণ ভাবে নামাজ আদায়ের সময় যেভাবে নিয়ত করেন সেভাবে ইচ্ছা পোষণ করলেই হবে,ইনশাআল্লাহ।
বেতের নামাজ হয়ে গেলে শবে বরাতের নামাজ পড়া যাবে কি?
অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন, বেতের নামাজের পর শবে বরাতের নামাজ পড়া যাবে কি? আবার অনেকেই মতামত দেন, এশার নামাজের পর বেতের নামাজ পড়ে ফেললে কোনো নফল পড়া যায় না।এখন কথা হচ্ছে, এগুলো আসলে কতটুকু সঠিক বা যুক্তিসঙ্গত?
বিজ্ঞ আলেমগণ এক্ষেত্রে মতামত দেন যে, উত্তম হলো শবে বরাতের নফল ইবাদত গুলো শেষ করে এরপর বিতর পড়া। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বেতের পড়ে ফেললে এরপর কোনো নফল পড়া যাবে না, বরং বিতর নামাজের পরও নফল নামাজ পড়ার জায়েজ বিধান আছে।
এক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) প্রমুখ সাহাবিগণের আমল দ্বারা এমনটি প্রমাণিত। কেননা তাঁরা এশার পর বিতরের সালাত পড়ে শেষ রাতে আবার তাহাজ্জুদ পড়েছেন।
কোন কোন সূরা দিয়ে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয়?
সাধারণ সব প্রকাশনীর বই-পত্রে শবে বরাতের আমল নিয়ে কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। সব সময় বিজ্ঞ আলেমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত।শবে বরাতের নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতামত অনুসারে একাকী করণীয় উচিত। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে, এরপর যা কিছু নফল ইবাদত করার দরকার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে।
শবে বরাতের নামাজ অন্য নামাজের মতো প্রতি রাকাতেই সুরা ফাতেহার পর পবিত্র কোরআনের যে কোনো সুরা পড়তে হবে। এরপর যথানিয়মে রুকু-সিজদা করবে এবং সালাতের অন্য রুকনগুলো আদায় করবে। আর এভাবেই দুই রাকাত করে নামাজ শেষ করা উত্তম।
শবে বরাতের নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
মহান আল্লাহ তা'আলা শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতদের জন্য ইবাদতের বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। যার মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই পাঁচটি রাত হলো, জুমার রাত, দুই ঈদের রাত্রিদ্বয়, শবে বরাত বা মুক্তির রাত, শাবান মাসের মধ্য রাত, শবে কদর বা কদরের রাত যার অর্থ মর্যাদাপূর্ণ রজনী।
এসব রাতের মধ্যে শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে।
যেহেতু ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। তাই এখান থেকে আশা করি বুঝতে পারছেন শবে বরাতের নামাজ 'নফল' ইবাদত।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা?
আরবি শব্দ নিয়ত মানে, মনে মনে কিছু বলা। আপনি যে শবে বরাতের নামাজ পড়বেন এর ওপরে নিয়ত করায় মূল উদ্দেশ্য নিয়ে নিচে শবে বরাতের নামাজের বাংলা নিয়ত তুলে ধরা হয়েছে।লাইলাতুল বরাত বা পবিত্র রজনীতে নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত, শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর।
শবে বরাতের নামাজ পড়া কি জায়েজ?
শবে বরাতের বিশেষ নামাজ বলতে আসলে তেমন কিছুই নেই। এ নিয়ে ইসলামি স্কলারদের মতামত হলো, শবে বরাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ নেই। অন্য সব সময় যেভাবে নামাজ পড়া হয়, সেভাবে নামাজ পড়বে।তবে কোনো ধরেনের আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিতেই যদি লোকজন মসজিদে আসে তাহলে প্রত্যেক ব্যাক্তি নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কোনো কারণ হবে না।
শবে বরাতের নামাজের আরবি নিয়ত?
পবিত্র শবে বরাতের আরবি নিয়ত হলো, নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।শবে বরাতের নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়?
মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করলেই শবে বরাতের নামাজ আদায়ের নিয়ত হয়ে যায়। তারপরও আপনি চাইলে আরবীতে কিংবা বাংলায় নিয়ত করতে পারবেন। আমাদের দেশে শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির একটি সম্পর্ক দেখা যায়।হালুয়া আরবি শব্দ যার অর্থ মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন এ কথা সত্য, তিনি গোশতও পছন্দ করতেন তাও মিথ্যা নয়।ইসলামে দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো এক প্রকার ইবাদত।
তাই বলে এই দিন ও রাতকে হালুয়া-রুটিতে পরিণত করে ইবাদত থেকে গাফেল হওয়া নিশ্চয়ই কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
শবে বরাতের নামাজের দোয়া?
দুই রাকাত বা চার রাকাত নফল নামাজ শেষে আপনারা সবাই যেকোনো ভাবে দোয়া পাঠ করতে পারেন। শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়ার উল্লেখ করা নেই কোথাও।তাই আপনারা আপনাদের মত করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে পারবেন। তবে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আপনারা চাইলে পবিত্র রজনী শবে বরাতে বিশেষ এই দোয়াটি পড়তে পারেন।
বাংলা উচ্চারণ, রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’
শবে বরাতের নামাজ সুন্নত নাকি ফরজ?
ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ। আর শবে বরাতের নামাজ হলো নফল ইবাদত সুতরাং শবে বরাতের নামাজ সুন্নত কিংবা ফরজ কোনটিই নয়। রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে বাদ মাগরিবের পর ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ।হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে, এবং এসবের মাঝে কোনো মন্দ/বাড়তি কথা না বলবে, তার এই নামাজ ১২ বছরের ইবাদতের সমতুল্য বলে গণ্য হবে।
শেষ কথা
আশা করি এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন, শবে বরাতের নামাজের নিয়ম বলে বিশেষ কোনো নিয়ম-নীতি নেই। আর তাই অবশ্যই মনে রাখবেন শবে বরাতের নফল নামাজ পড়তে গিয়ে আবার ফরজ নামাজ যেন ছুটে না যায়।অর্থাৎ সারারাত জেগে শবে বরাতের নামাজ পড়লেন কিন্তু শেষ রজনীতে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারলেন না, এমনটি যেন ভুলেও না হয়।