বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | বিতর নামাজের দোয়া

বিতর (وتر) হল একটি শব্দটি আরবি।  এর অর্থ হচ্ছে বিজোড়। এ নামাজ ৩ রাকাআত বিধায় ইহাকে বিতর বলে। কেউ কেউ বিতরের নামাজ ১ রাকাআতও পড়ে থাকেন। ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়া হল ওয়াজিব। আবার রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়ার পর জামাআতবদ্ধভাবে ইমামের সাথে বিতর নামাজ পড়া যায়। 
বিতর নামাজ
বিতর নামাজ

বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)।

বিতর নামাজ পড়ার সূরা?

বিতর নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। অন্যান্য ফরজ এবং সুন্নত নামাজের মতোই আপনি চাইলে বিতের নামাজ আদায় করতে পারবেন যেকোন সূরা পাঠ করে।

বেতের নামাজের নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণসহঃ
تويت أن أصلى لله تعالى تلك ركعات صلوة الوتر واحب الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفـة الله اكبر

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতুআন উছালিয়া লিল্লাহি তা'আলা ছালাছা রাকআতি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বেতের নামাজের নিয়ত বাংলা?

আমি কিবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে ৩ রাকাত বেতের ওয়াজিব নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার।

বেতের নামাজের দোয়া?

বেতের নামাজের দোয়ার নাম হল দোয়া কুনুত। বেতের নামাজের দোয়া আরবিতে হলঃ
اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

বেতের নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ?

দোয়া কুনুত এর বাংলা উচ্চারণ হলঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনি 'আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফজুরুকা। 

আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ক।

বেতের নামাজের নিয়ম | বেতের নামাজ পড়ার নিয়ম

বেতর নামাজ ফরজ নামাজের মতোই প্রথম ২ রাকাত পড়তে হয়। ২ রাকাত পড়ার শেষে তাশাহহুদ পড়বেন কিন্তু সালাম ফেরানো যাবে না। অর্থাৎ অন্যান্য ফরজ নামাজের মতোই দুই রাকাত নামাজ শেষ করে তাশাহহুদ পড়ার পর সালাম না ফিরিয়ে ৩ রাকাত নামাজ পড়ার জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। 

তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ার পর আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমা বাধার পর রুকুতে না গিয়ে নিঃশব্দে দোয়ায়ে কুনুত পাঠ করবেন। দোয়া কুনুত পাঠ করা শেষ হইলে আগের মতোই পুনরায় রুকুতে চলে যাবেন। 

এরপর আগের মতোই সিজদা করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে বেতের নামাজ পড়ে সমাপ্তি করতে হয়। এভাবেই আসলে বেতের নামাজ পড়তে হয়। এটা হল বেতের নামাজ পড়ার নিয়ম যা সহিহ হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে।

বেতের নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে করণীয় কি | বেতের নামাজের দোয়া কুনুত না জানলে

বেতের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া হল সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌। তবে ফরজ নহে। তবে অনেকেই ইহাকে ওয়াজিব নামাজ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। বেতের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারও যদি দোয়া কুনুত জানা না থাকে কিংবা দোয়া কুনুত না পারেন তাহলে দোয়া কুনুতের জায়গায় অন্য কিছু পাঠ না করেই রুকুতে চলে যাবেন। 

হাদিসে পাওয়া যায় যে, কেউ যদি দোয়া কুনুত না জানে কিংবা না পারে তাহলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে রুকুতে চলে যাবেঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা। অনেকে এরকম মনে করেন যে ৩ বার সূরা ইখলাস পাঠ করলে দোয়া কুনুত পড়া হয়ে যাবে। তবে কথাটা একদম ঠিক নয়।

বেতের নামাজ কত রাকাত?

বেতের নামাজ তিন রাকাত।

দোয়া কুনুত ছাড়া বেতের নামাজ হবে কি?

হ্যাঁ, দোয়া কুনুত ছাড়া বেতের নামাজ হবে। তবে আপনাকে দোয়া কুনুত শেখার চেষ্টা করতে হবে।

বেতের নামাজ কখন পড়তে হয়?

বেতের নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ফজর নামাজের পূর্ব সময় পর্যন্ত পড়া যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেতের নামাজ এশার নামাজের পরেই পড়া হয়।

বেতের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে?

হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেতের নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। বেতের নামাজ না পড়লে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন দলিল পাওয়া যায়নি। তবে অধিকাংশ হাদিসে বেতের নামাজ পড়ার তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে।

বেতের নামাজ কি ওয়াজিব?

বেতের নামাজ যে ওয়াজিব এ বিষয়ে সহীহ হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করে বেতের নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌। এ বিষয়ে কিছু স্পষ্ট দলিল পাওয়া গেছে। সুতরাং বেতের নামাজ ওয়াজিব নয়। বেতের নামাজ হল সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌।

বেতের নামাজের পর তারাবি নামাজ পড়া যাবে কি?

বেতের নামাজ তারাবি নামাজের পরেই আদায় করা উত্তম। তবে বেতের নামাজ তারাবির নামাজের পর পড়া যায়। কারণ বেতের নামাজ এবং তারাবির নামাজ উভয় সুবহে সাদিক পর্যন্ত আদায় করা যায়।

বেতের নামাজের পর নফল নামাজ পড়া যাবে কি?

আপনি যদি এশার নামাজের পরে বেতের নামাজ আদায় করেন। তাহলে এরপরে আর কোন নফল নামাজ পড়া যাবে না।

বেতের নামাজ পড়ার পর কি তাহাজ্জুদ পড়া যাবে?

হ্যাঁ, বেতের নামাজ পড়ার পর তাহাজ্জুদ পড়া যাবে।

তাহাজ্জুদ পড়ে কি বেতর নামাজ পড়তে হবে?

আপনি এশার নামাজের পর থেকে ফজর নামাজের পূর্ব সময় পর্যন্ত যেকোন সময়ে বেতের নামাজ পড়তে পারবেন।

বেতের নামাজ কি এশার নামাজের অংশ?

বেতের নামাজ এশার নামাজের অংশ নয়। বেতের নামাজ আপনি এশার নামাজের পর থেকে ফজর নামাজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পড়তে পারবেন। 
Next Post Previous Post
banner